ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
কাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পগুলো হল, ২২৫, ২০০ ও ৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুত ইউনিট, ফারুকী পার্কের (অবকাশ) সামনে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হবে শহরের ওভারপাস ও নাসিরনগর-সরাইল-লাখাই সড়কে বলভদ্র সেতু।জানা গেছে, আশুগঞ্জে ৩৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উচ্চ জ্বালানি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে উপাদিত এই বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রীডে। নবনির্মিত এই তিন কেন্দ্র ২২৫, ২০০ ও ৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। তিন হাজার ছ’শো আটাশি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কেন্দ্র তিনটির জ্বালানি সক্ষমতা ৪০ ভাগ এবং উৎপাদন খরচ ইউনিট প্রতি তিন টাকা।
২০২১ সাল নাগাদ সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার ধারাবাহিকতায় আগামী আট অক্টোবর জাতীয় গ্রিডে সরকারি ও বেসরকারি সেক্টর থেকে ৩৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। এরমধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ হাব আশুগঞ্জে কম্বাইন্ড সাইকেলের সিম্পল সাইকেল থেকে উৎপাদন হবে ১৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ইউনাইটেড আশুগঞ্জ মোডুলার সরবরাহ করবে ১৯৫ মেগাওয়াট এবং আশুগঞ্জ মিডল্যান্ড পাওয়ার প্লান্টে উৎপাদন হবে ৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
নতুন চালু হতে যাওয়া কেন্দ্রগুলোসহ আশুগঞ্জের মোট জ্বালানির চাহিদা এখন প্রতিদিন ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। তবে আশুগঞ্জে স্বল্প জ্বালানি খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ায় কেন্দ্রগুলো থেকে ইউনিট প্রতি মাত্র তিন টাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানালেন প্রকল্প পরিচালক।
২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল চালু হলে নভেম্বরের মধ্যে আরো ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যোগ হবে। দেশে বর্তমানে ১৩ হাজার ৪০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট।
এদিকে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর লাখাই-নাসিরনগর-সরাইল সড়কে মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বলভদ্র নদীর বলভদ্র সেতুর দ্বার উম্মোচন করা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির উদ্বোধন করবেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,২১ কোটি ৮৫ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। সেতুটির র্দৈঘ্য ২১৭ দশমিক ৬৮ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। সেতুটি নির্মিত হওয়ায় হবিগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ঢাকার দূরত্ব কমিয়ে আনবে ৪৫ কিলোমিটার। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা ও হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সাথে সংযোগ স্থাপিত হবে। সময় সাশ্রয় হবে প্রায় ১ ঘন্টা। তার সাথে কমবে যাত্রী ভোগান্তি ও যানজট। তাছাড়া ঢাকার সাথে হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটের কেবল যে দূরত্ব কমবে পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ,সরাইল,নাসিরনগর উপজেলার মানুষও এ সড়কটি ব্যবহার করতে পারবে। ২০১১ সালে বলভদ্র নদীর উপর মূল ব্রীজ নিমার্ণের আগে বিকল্প বেইলি সেতু নির্মাণের স্থান নির্ধারনের জটিলতায় দীর্ঘদিন ব্রিজের নিমার্ণ কাজ বন্ধ থাকে। পরে বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব অনুযায়ী হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়াকড়ি ও নাসিরনগর উপজেলা ফান্দাউক বাজার দুটির বাইপাস সড়কের সোজাসোজি স্থানটি নির্ধারিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বিশেষজ্ঞদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রস্তাবিত স্থানে দ্রুত ব্রিজ নিমার্ণের জন্য নিদের্শ দেন। এর ফলে ব্রিজ নির্মাণের অনিশ্চয়তা কেটে যায়। দুই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ফান্দাউক বলভদ্র নদীর উপর সেতু নিমার্ণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগ মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বলভদ্র নদীর ওপর সেতুটি স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর র্নিমিত হওয়ায় দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। অথচ শুধুমাত্র একটি সেতুর অভাবে বছরের অর্ধেক সময় খেয়া আর বাকি সময় বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে হতো দুই উপজেলার মানুষের। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্টিত ঐতিহ্যবাহি ফান্দাউক বাজার। এ প্রসিদ্ধ বাজারটি লাখাই উপজেলার পার্শ্ববতী হওয়ায় এখানে মুড়াকুড়িসহ অনেক এলাকার মানুষ বিয়ের বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় হাট-বাজার করতে আসে। তাছাড়া ধরমন্ডল ইউনিয়নের মানুষ মুড়াকুড়ি হয়ে ফান্দাউক আসতে হয়। এছাড়া লাখাই উপজেলার অনেক মানুষ সহজ পথ হিসেবে ফান্দাউক হয়ে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাতায়াতে কম সময় লাগায় এ রাস্তা ব্যবহার করে। প্রতিদিন ২০/২২ গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ চলাচল করে।