ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাসে প্রথম নারী মেয়র নায়ার কবির
ডেস্ক ২৪:: পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ১৪৮ বছর পর প্রথম নারী মেয়র পেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গত রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হাফিজুর রহমান মোল্লাকে পরাজিত করে নায়ার কবির পরেন মেয়রের মুকুট। অবশ্য ব্যাপক কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে বিএনপি প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন ডেকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
নায়ার কবির সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবিরের সহধর্মিণী। হুমায়ুন কবিরও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার দুই বারের চেয়ারম্যান ছিলেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৮৬৮ সালের ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভা ১৯৯২ সালে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা লাভ করে। শুরুতে প্রশাসকেরাই পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালের ৬ মে প্রয়াত মাহবুবুল হুদা প্রথম পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
নায়ার কবির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি সদর আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীরের স্ত্রী। হুমায়ূন কবীর ১৯৭৭-১৯৮২ এবং ১৯৮৪-৮৮ পর্যন্ত সময়ে দুই দফায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।
মহিলা নেতৃত্বের শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য এগিয়ে আসেন মিসেস নায়ার কবির। সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী এডভোকেট হুমায়ুন কবিরের গৃহীনী হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের সাথে জড়িয়ে সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ করতে থাকেন। স্বামী জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর বিশেষ করে পৌরবাসীর সুঃখ দুঃখে নায়ার কবির এগিয়ে এসেছেন নিস্বার্থভাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে, শিক্ষা দীক্ষার প্রসারে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে এসেছেন তাদেরমধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন নায়ার কবির। তার প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে বর্তমানে শহরে পরিচালিত হচ্ছে আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, পলি-কমল প্রাথমিক বিদ্যালয়, হুমায়ুন কবির বিদ্যানিকেতন এর দুটি শাখা। এ ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইন কলেজ, পৌর মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তার অবদান অনস্বীকার্য।
এ ছাড়া প্রতিনিয়ত তিনি অভাবী ও দুঃখী মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন নিরব ভাবে। প্রাথমিক অবস্থায় রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে কিছুটা অনীহা থাকলেও পারিবারিক অবস্থান, গোষ্ঠীগত অবস্থান এবং এডভোকেট হুমায়ুন কবীরের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তিনি সরাসরি রাজনীতিতে চলে আসেন।
গত পৌরসভা নির্বাচনে এলাকাবাসীর আগ্রহ লক্ষ্য করে প্রতিদ্বন্ধিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে একই গ্রামের দুইজন প্রার্থী হওয়ায় মুরুব্বী ও আওয়ামীলীগ নেতাদের অনুরোধে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।শহরের মুরুব্বী আলহাজ্ব শাহজাহান মিয়া (মিয়া ভাই) এর সভাপতিত্বে দক্ষিণ পৈরতলায় অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
এরপর পেরিয়ে গেছে ৫ বৎসর। ইতিমধ্যে নায়ার কবির জনপ্রিয় হতে থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরবাসীর কাছে। এবারের পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে দশজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও আলোচনায় আছেন নায়ার কবির।
রবিবার রাত ৯টার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. বশিরুল হক ভূঞা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নায়ার কবির ৬০ হাজার ১৬৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী হাফিজুর রহমান পেয়েছেন সাত হাজার ৩২৮ ভোট।
নির্বাচনে জয়লাভের পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার ও নবনির্বাচিত মেয়র নায়ার কবির পৌরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিতেই এই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে আল-মামুন সরকার জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন, ‘১৪৮ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় প্রথমবারের মতো একজন নারী ক্ষমতায় আসায় আমরা অবশ্যই খুশি। এর মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে নারীর ক্ষমতায়ন শুরু হলো। নারীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে স্বপ্ন সেটাও এর মধ্য দিয়ে পূরণ হবে। আমরা আশা করছি, এখন নারীরা পৌরসেবা আরো সহজে পাবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা পরিষদের উপদেষ্টা ও নারী নেত্রী নন্দিতা গুহ বলেন, ‘আমরা সব ক্ষেত্রেই সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা চাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় প্রথমবারের মতো নারী নেতৃত্ব আসা মানে হচ্ছে নারীরা যে ক্ষমতায়িত হচ্ছে এরই প্রমাণ। এটি মহিলা পরিষদের আন্দোলনেরই ফসল। আমি এতে অনেক আনন্দিত। তবে আমাদের আরো অনেক দূর পর্যন্ত এগোতে হবে।’
নতুন মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নায়ার কবির বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একটি আধুনিক পৌরসভায় উন্নীত করতে চাই।’