ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিডিবির আওতাভূক্ত এলাকায় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ :: ওভারলোডেড হয়ে নষ্ট হচ্ছে ট্রান্সফরমার
এ লেখা যখন লেখা হচ্ছে তখন বিদ্যুৎ নেই, নেই মানে ২১শে মে ২০১৬ তাং রাত ৮টা থেকে (এখন সময় সোয়া বারটা) শহরের একটি ব্যস্ততম এলাকায় বিদ্যুত নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিডিবি অফিসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গলদঘর্ম হচ্ছেন ত্রুটি সারাতে নয়, ত্রুটি কোন জায়গায় হয়েছে সেটা বের করতে………..
২৪ রিপোর্ট :: ১৯৯৪ সালে ষোল শহর প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বৈদ্যুতিক লাইন বদলানো হয়েছিল। তখন শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩৫ মেগাওয়েট। ২২ বছরের বছরের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে তিন গুন। বিভিন্ন এলাকায় বেড়ে গেছে বিদ্যুতের লোড। অথচ এই বাড়তি লোডের নির্জঞ্ঝাট প্রবাহ নিশ্চিত করার মতো সরবরাহ লাইন পিডিবির নেই। একই ভাবে নেই পর্যাপ্ত ট্রান্সফরমার। ৩০-৪০ বছরের পুরাতন জড়াজীর্ণ ট্রান্সফরমার দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে চলছে, চলছে বিতরণ ব্যবস্থা । বাড়তি লোডে বিকল হচ্ছে বারবার। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহক। তাছাড়া সামান্য বৃষ্টিতে কিংবা একটু ঝড়ো বাতাসে যখন তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ। আকাশে মেঘ দেখলেই কতৃপক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। জোড়া-তালি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কোন রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বড় ধরনের সংকটে পড়ার আশংকা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিদ্যুতের লাইন সংস্কার করা হয় ১৯৯৪ সালে। ওই সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের মতো। বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট। ওই সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ বিভাগের হাতে ট্রান্সফরমারের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড়শ’র মত। দীর্ঘ ২২ বৎসরে বছরের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখা ষাট হাজারে গিয়ে পৌছেছে। বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাড়িয়েছে আশি থেকে একশ মেগাওয়াটে।
পাড়ায় মহল্লায় তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে অসংখ্য এ্যাপার্টমেন্ট ও বহুতল ভবন। ঘরে ঘরে লেগেছে এসি, ফ্রিজ সহ বিদ্যুৎ চালিত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র। এতে করে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। কিন্তু বাড়তি চাহিদার প্রবাহ ঠিকঠাক রাখার মতো ব্যবস্থা বিদ্যুৎ বিভাগের নেই। একই সাথে ট্রান্সফরমারের সংকট সেই আগের মতো রয়ে গেছে। বর্তমানে পিডিবির হাতে তিন’শর মত ট্রান্সফরমার রয়েছে। কিন্তু এগুলোর দুই তৃতীয়াংশ অন্তত ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছরের পুরানো। শহরের সবচেয়ে বড় ট্রান্সফরমারটি রয়েছে কাচারী পুকুর পাড়ে। ৩০০ কেভির এই ট্রান্সফরমারটি পাকিস্হান আমলের। মেরামত এবং পুন: পুন: মেরামতে এটা এখন মৃত প্রায়,এটাকে কোরামিন দিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়েছে।এই ট্রান্সফরমারের তিনটি ফেজের দু’টিতে ভোল্টেজ মাত্রার কাছাকাছি থাকলেও একটি ফেইজ প্রায়শই কাজ করে না। এই ট্রান্সফরমারটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি বড় বাণিজ্যিক এলাকা ও পৌরসভার সড়ক বাতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ভূমিকা পালন করছে।
টঙ্গী এবং কুমিল্লা থেকে মেরামত করে, জোড়াতালি দিয়ে দেড় শতাধিক ট্রান্সফরমার শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে। কিন্তু এসব ট্রান্সফরমার শহরের বাড়তি বিদ্যুৎ চাহিদার লোড নিতে পারছে না। যখন তখন যে কোন কারণে ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
চাহিদা অনুযায়ী ট্রান্সফরমার না থাকায় ট্রান্সফরমার নিয়ে পিডিবির জমজমাট বাণিজ্যও চলে আসছে। অভিযোগ পাওয়া যায়, যে এলাকায় ট্রান্সফরমার নষ্ট হয় ওই এলাকার মানুষকে চাঁদা তুলে পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থের যোগান দেয়া হলেই কেবল ট্রান্সফরমার পুনঃস্থাপিত হচ্ছে। দিনের পর দিন এই অবস্থা চলে আসলেও এলাকাবাসী অসহায়। টাকা দিয়েও ট্রান্সফরমার না পাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন সংস্কার করা জরুরি হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী বলেছেন, ১৯৯৪ সালে লাইন সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ের তুলনায় বর্তমানে লাইনের লোড অনেক বেড়ে গেছে। বাড়তি লোড নেয়ার জন্য লাইনগুলোর ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিডিবি অফিস এ সমস্যা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাব করেছে কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে? সন্দেহ আছে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে। বাড়তি লোড সামাল দিতে গিয়ে অনেক স্থানে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হচ্ছে। বাড়তি ট্রান্সফরমারের সংস্থান করাও সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।বর্তমানে জরুরী অবস্হা মোকাবেলা করার জন্য বরাদ্দ দুটি মোবাইল ট্রান্সফরমারও বর্তমানে স্হায়ী ভাবে ব্যবহ্রত হচ্ছে।
এদিকে, বর্তমানে পিডিবির গ্রাহক সংখ্যা ৬০ হাজারের মত। মিটারের রিডিং নেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত মিটার রিডার মাত্র একজন। তাও, উনি এল.পি আর-এ আছেন। আউটসোসিং এ ২০ জন ব্যক্তির মাধ্যমে মিটারের রিডিং নেয়া হয় ও বিল বিলি করা হয়। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করার মত, এসব দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাথে পিডিবির সরাসরি কোন সম্পর্ক নাই। তারা তাদের ইচ্ছেমত মিটার রিডিং গ্রহন করে এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বিল জমা দেবার একদিন আগে সেটি গ্রাহকের কাছে পৌছায়। এতে করে সাধারন গ্রাহকরা প্রচন্ড ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। অতিরিক্ত এবং গড় বিলের অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক গ্রাহক পিডিবি অফিসে আসছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিডিবি অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীর সংকট চলছে। এখানে উপ-সহকারি প্রকোশলীর ৫ জনের পদ থাকলেও বর্তমানে এখানে একজনও নাই। সংকট আছে ল্যাইন ম্যানের, লাইনম্যান সহযোগীর। এর উপর আবার গুরুতর অভিযোগ এমনই একজন লাইনম্যান সহযোগীর। ধরাকে সরা জ্ঞান করে, অফিসের কাউকে তোয়াক্কা না করে সারাদিন মটর সাইকেল নিয়ে ঘুরাঘুরি করেন আর গ্রাহকের সাথে প্রতারনা করে চলছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের টেলিফোন করে গ্রাহকরা কাউকে পায়না। বিদ্যুৎ বিভাগের ল্যান্ড-ফোন এ কল করলে কেউ রিসিভ করে না। জরাজীর্ণ লাইনে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে সে খবর জানানোর কোন ব্যবস্থা নেই।
পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, অন্যান্য জেলা থেকে এ জেলার অবস্হা অনেক ভালো। লোডশেডিং এর মাত্রা এখানে কম। কর্মচারী সংকট খুব শ্রীঘ্রই সমাধান হবে।