নতুনের বদলে পুরাতন গাড়ি সরবরাহ, তবুও একই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বিজিএফসিএলের
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহন কাজে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, চুক্তি ভঙ্গ করার পরেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একই ঠিকাদারের সঙ্গে নীরবে পুনরায় চুক্তি করা হয়েছে।
বিজিএফসিএল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড তাদের কর্মকর্তা, কর্মচারী, বিভিন্ন গ্যাস কূপে কাজ করা কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েকে স্কুলে আনা নেয়াসহ নানান কাজের জন্য প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যক মাইক্রোবাসের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে থাকে। ২০১৩ সালে মে মাসে ২ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ৭.৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত এসব মাইক্রোবাস যাতায়াতের জন্য মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজ নামে এক প্রতিষ্ঠানের সাথে ৪৫০ টাকা ধরে চুক্তি করা হয়।
চুক্তিতে বিভিন্ন শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল কোনো মাইক্রোবাস ২০০৪ মডেলের নিচে হতে পারবে না৷ চুক্তির পর মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজ বিভিন্ন মডেলের মোট ১৮টি মাইক্রোবাস এই কাজে নিযুক্ত করে। কিন্তু মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজ গ্যাস ফিল্ডের একটি সিন্ডিকেট ম্যানেজ করে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে পুরাতন মাইক্রোবাস দিয়ে তাদের পরিবহন কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
২০১৭ সালে তাদের সাথে চুক্তি শেষ হলে দরপত্র আহ্বান করে বিজিএফসিএল। এতে সাবেক এক ছাত্রনেতা সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা দর দিলেও তার সাথে চুক্তি না করে এর আড়াই ডবল বেশি দরদাতা মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজের সাথে ১৭০০ টাকায় চুক্তি করা হয়। এতে করে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিজিএফসিএলের ঠিকাদার মোশাররফ হোসেনসহ আরো কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, ২০১৭ সালের চুক্তির পরেও মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজ ২০০৪ মডেলের নিচে পুরাতন মাইক্রোবাস দিয়ে তাদের পরিবহন কাজ চালিয়ে যায়। তাদের সাথে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি বিজিএফসিএলের চুক্তি শেষ হয়। চুক্তি শেষ হওয়ার পর গোপনে কাউকে না জানিয়ে এবং কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান না করে মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজের সাথে পুনঃচুক্তি করে বিজিএফসিএল।
চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার পরেও কেন উচ্চ মূল্যে মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজকে বার বার কাজ দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অন্য ঠিকাদাররাও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
তাদের অভিযোগ, মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজকে নতুন চুক্তির নেপথ্যে রয়েছে বিজিএফসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহ আলমের হাত। তার সাথে বিপুল অংকের অলিখিত চুক্তি হয়েছে মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর কাজী ইকবাল হোসেনের।
এবারের চুক্তিতে ২৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অন্য ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে বিজিএফসিএল এর প্রধান কার্যালয়ে মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহ আলম বলেন, মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজ পুরাতন গাড়ি দিয়ে পরিবহন করছে কিনা তা আমার জানা নেই। গাড়ির বিষয়টি দেখেন অন্য ডিপার্টমেন্ট৷ আমার কাজ শুধু ফাইলে স্বাক্ষর করা। পিপিআর অনুযায়ী আমরা পুরাতন ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করতে পারি। যদি তারা চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে থাকে, তাহলে বিষয়টি কোম্পানি দেখবে।
পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তানুরা এন্টারপ্রাইজের মালিক কাজী ইকবাল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুরাতন গাড়ি দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে না। চুক্তি অনুযায়ী গাড়ি দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে।