ঢাকায় উদযাপিত হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস
রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর উদ্যোগে ঢাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্তদিবস ২০১৭ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
আজ সকাল ১০টায় ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের লেকচার গ্যালারিতে সাহেদ হোসেন এর সঞ্চালনায় ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক এমপি । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক শাহ্ আলমগীর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান, প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সৈয়দ আব্দুল হাদী এবং মহিলা পূনর্বাসন সংস্থার সাবেক পরিচালক, সমাজকর্মী ও মুক্তিযদ্ধের সংগঠক মালেকা খানম ।
এছাড়াও ঢাকাস্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন । অনুষ্ঠানে সৈয়দ হাদী তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে দেশের সমস্ত শিল্পীদেরকে সংগঠিত করে তিনি শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলেন। তিনি প্রয়াত শিল্পী আলতাফ মাহমুদ এর স্মৃতিচারন করেন ।
মালেকা খানম তাঁর বক্তব্যে বলেন মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহন না করলেও পরোক্ষভাবে কাজ করেছিলেন, তিনি তৎকালে গার্লসগাইডের অর্গানাইজিং সেক্রেটারি ছিলেন । তিনি স্কাউটের আফিফা হক, কবি সুফিয়া কামাল ও প্রফেসর বদরুন্নেসা আহমেদ এর বিভিন্ন স্মৃতিচারন করেন । তিনি সেসময়ের বিভিষিকাময় চিত্রের বর্ননা দেন ।
উবায়দুল মোকতাদির মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবসের দিনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ছিলেন না, তিনি যুদ্ধে আহত হয়ে চিকিৎসা গ্রহন করার জন্য ভারতে অবস্থানরত ছিলেন। তিনি বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে প্রথম পতাকা তুলেছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী, তিনি প্রয়াত আলী আজ্জম ভুইয়ার অবদানের কথা ও উল্লেখ করেন । তিনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন মুক্তিযুদ্ধের ১ম সংগঠন মুজিব বাহিনী যা আমরা অনেকেই জানি না । তিনি ১৯৫৬ সালের প্যারিটি চুক্তির কথা উল্লেখ করেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উল্লেখ করে বলেন ভারত এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছিল। ভারত সহায়তা না করলে হয়তো মুক্তিযুদ্ধের ফলাফল ভিন্ন ও হতে পারত । ব্রাহ্মণবাড়িয়া অনানুষ্ঠানিকভাবে সবসময় মুক্ত ছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর মুক্ত হয়েছিল ।
নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে । কোন অনির্বাচিত ব্যক্তি ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই, নির্বাচন কমিশন সম্পুর্ন স্বাধীন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদেরকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তী । ৮ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে উড়েছিল মুক্তির পতাকা । পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে শত্রু মুক্ত করেছিল। সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে এই অঞ্চলকে মুক্ত করা খুব জরুরী ছিল। ৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে অবস্থান নিলে, মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে আক্রমন করে মূলত ৮ ডিসেম্বর সকালে শহরের দখল নেন । এরপর থেকে এই দিনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত দিবস হিসেবে গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়।