Main Menu

কাউতলীতে কৌশলে চলছে কুরুলিয়া নদী ভরাট, আইনের ফাঁক দিয়ে সহায়তা করছে পাউবো

+100%-

বালি দিয়ে এভাবেই ভরাট করা হয়েছে কুরুলিয়া নদী।

মনিরুজ্জামান পলাশ : ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাউতলীতে কৌশলে কুরুলিয়া নদী ভরাট করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক পরিবর্তনের কাজ নিয়ে নদীর বিশাল অংশ বালি দিয়ে ভরাট করেছে চক্রটি। এভাবে প্রকাশ্যে বালি দিয়ে নদী ভরাট করায় ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ড আইনের ফাঁক গলিয়ে এই ভরাটে সহযোগিতা করছে।

২০১০ সালের দিকে নদীর সীমানা নির্ধারন করে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। সেই সীমানা থেকে অনেক ভেতরে গিয়ে বালি দিয়ে নতুন বাঁধ নির্মাণ করেছে ঠিকাদার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে কাউতলীতে ক্ষতিগ্রস্থ ৩৭ ফুট শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক নতুন করে স্থাপনের জন্য দরপত্র ঘোষণা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১৩ লক্ষ টাকার কাজটি পায় কুরুলিয়া নদী সংলগ্ন বসতির বাসিন্দা ও ঠিকাদার নাইমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধীকারী মোখলেছুর রহমান। নিজের বাড়ির সামনে হওয়ায় কৌশলে তিনি প্রায় ৫ -৭ শতাংশ নদীর জায়গা মাটি দিয়ে ভরাট করে তারপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক বসানোর কাজ শুরু করেছেন। ২০১৯-২০ এ কাজ শেষ না করতে পারায় কাজটি সময় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২০-২০২১ করা হয়েছে। বর্তমানে কাজটি চলমান রয়েছে।

এদিকে নদীর জমি ভরাট করায় স্থানীয়রা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তবে ঠিকাদার স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকেই প্রকাশ‌্যে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। যদিও মোকলেছুর রহমান দাবি করেছেন শুধু এ অংশ টুকুই নয়, নদীর ভেতরে তাদের অনেক জমি ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গিয়েছে। তবে সাক্ষাৎকারে তিনি প্রথমে এদিকে সরকারি রাস্তা হচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন।

নদীর জমির মালিকানা : ১৮২৫ সালের বেঙ্গল এলুভিয়ন ও ডিলুভিয়ন রেগুলেশন এর (৪ ধারা) অনুযায়ী নদী যদি কোন জমি ভেঙ্গে নিয়ে যায় তাহলে তা সিকস্তি হয়। একইভাবে নদীতে চর জেগে উঠলে তা পয়োস্তি বলা হয়। সে আইন অনুযায়ী নদীতে বিলীন হওয়া জমির মালিকানা দাবির কোন সুযোগ নেই । যদিনা ওই একই স্থানে চর জেগে উঠে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন হল ১৯৯৪ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব (সংশোধন) । এ আইনের ৮৬ ধারা অনুযায়ী, নদী গর্ভে বিলীন হওয়া জমি ৩০ বছরের মধ্যে জেগে উঠলে তা জমির মালিক পাবেন। তবে এর জন্য জমি বিলীন হওয়ার পরপর কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন উল্লেখ করা আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বক্তব্য : পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০০০ এবং বাংলাদেশ পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১৯ (খসড়া) অনুযায়ী তারা বিলীন হওয়া অংশ ভরাট করে ভূমির মালিককে ভূমি ফিরিয়ে দিতে পারেন। পানি উন্নয়ন আইনের ৬ এর (গ) তে কাঠামোগত কার্যাবলীতে- ভূমি সংরক্ষণ, ভূমি পরিবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধার এবং নদীর মোহনা নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ রয়েছে। তিনি জানান, কাউতলী অংশে চারটি সেতু থাকার কারণে পানি ডেড ফোর্স ক্রিয়েট করে। এর ফলে এখানে দুই পাড়ে গোল আকৃতি ধারন করেছে। তাই দুই পাশ থেকে ভরাট করে জমির মালিকদেরকে জমি ফিরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে বলে জানান তিনি।

মোহাম্মদ রুহুল আমিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ভরাট এলাকা পরিদর্শন করেন

এদিকে, আইনটি পড়ে কোথাও ‍‌‌‌”পরিবৃদ্ধি” শব্দটির ব্যাখ‌্যা পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাউবির এক সিনিয়র কর্মকর্তা পরিবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধার কেবলমাত্র ভূমি জেগে উঠলে করা যায় বলে মন্তব্য করেছেন। নদী ভরাট করে পরিবৃদ্ধির কোন সুযোগ নেয় বলেও জানান তিনি। এছাড়া ২০১০ সালের দিকে শহরের মেড্ডা থেকে কাউতলী পর্যন্ত ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরী করা হয়েছে। তখনকার সীমানা থেকে প্রায় ১৪-১৫ ফুট নদীর ভেতরে এখন বাঁধটি দেয়া হয়েছে। সে সময় কেন পরিবৃদ্ধি করে বাঁধ তৈরী করা হয়নি? এমন প্রশ্নেরও কোন সদুত্তর পাউবো দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খানকে অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিনকে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। পরে মোহাম্মদ রুহুল আমিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ভরাট এলাকা পরিদর্শন করেন।

এ বিষয়ে আইনজীবি জহিরুল ইসলাম বলেন, নদী ও ভূমি সম্পর্কিত যতগুলো আইন দেশে প্রচলিত রয়েছে সব আইনেই নদীকে রক্ষার কথা বলা হয়েছে। কোনভাবেই নদী ভরাটের কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ করে থাকে তা অবশ্যই অবৈধ।






Shares