এলজিইডি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া :: কাজ নেয়ার প্রতিযোগিতা আছে, মানের বালাই নেই



কাজ নেয়ার প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু কাজ করার ইচ্ছা নাই। নানা ক্ষমতার জোরে কাজ বাগিয়ে নিয়ে চলে হেলাফেলা। কাজ যতটুকু হচ্ছে তারও মানের বালাই নেই। কর্মকর্তাদের তদারকি নেই। কাজ বাস্তবায়নের সময়সীমারও ঠিকঠিকানা নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোটি কোটি টাকার কাজ হচ্ছে এভাবেই। ক্ষমতাধর ঠিকাদারদের মর্জিতে হচ্ছে সব। কাজের নামে হচ্ছে লুটপাট,ভাগাভাগি।
বিজয়নগর উপজেলার রামপুর-লক্ষীমুড়া রাস্তা। ৭.৬৯ কিলোমিটার এ রাস্তার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। ১৫ মাসে কাজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ। অথচ ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা এবছরের মে মাসের ৯ তারিখে। তাছাড়া কাজের মানও সুবিধের নয়। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে-মাটি কমপেকশন ভালো ভাবে করা হয়নি। প্রোটেকশন ওয়ার্ক প্রথম দিকে আড়াই কিলোমিটার করার পর আর করা হয়নি। আর সে কারণে মাটি বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এলজিইডির ওই সূত্র বলেছে মোট কথা শিডিউল মোতাবেক কোনো কাজই হয়নি। এই অবস্থায় গত মাসে বদলি হয়ে যাওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. মাহবুব হোসেন ঠিকাদারকে ২৮ দিনের চূড়ান্ত নোটিশ দেন। রানা বিল্ডার্স,ঢাকা নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১২ কোটি ২ লাখ টাকার এই কাজটি করছে। অভিযোগ মিলেছে এই নোটিশের পর ঠিকাদার ক্ষমতাধর একজনকে কাজের পার্টনার করে আগের মতোই কাজ করে চলেছেন। বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন- নোটিশ করা হয়েছিল কিনা তা আমার জানা নেই। কাজ চলমান আছে।
কসবা উপজেলার তিনলাখপীর-শিমরাইল রাস্তার অসমাপ্ত অংশ পাকাকরণ কাজ নিয়ে এলাকার মানুষের অভিযোগ অনেক। সাড়ে ৫ কোটি টাকার এই কাজটি করছে হাসান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বল্লবপুর গ্রামের হরিচরন ও এমরান ভূঁইয়া বলেন- রাস্তার পাশে যে ব্লক লাগাইছে সেগুলো একটু ওপর থেকে ফেললেই ঘুরা। তারা জানান-ইঞ্জিনিয়ার এসে কয়েকবারই কাজ বন্ধ করেছে ইট-ব্লক ভালো না হওয়ার কারণে। নিম্নমানের ইট ছড়িয়ে বালু দিয়ে ঢেকে দেয়ার সময় কয়েকদিন আগে ইঞ্জিনিয়ার এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তারপরও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়েই রাস্তার কাজ চলছে। সরজমিনে কাজটি দেখতে গেলে অনেকে জানান-গত বছর এই কাজ শুরু হয়। মাটি ফেলা হয় তখন। এরপর সাইডে ব্লক দেয়া হয়। সেগুলো আবার উঠিয়ে নতুন করে ব্লক দেয়া হয়। ঠিকাদারের খেয়াল খুশিতে এই কাজ এগিয়ে চলছে ঢিমেতালে। এ কাজের বিষয়ে জানতে কসবা উপজেলা প্রকৌশলী মো. বাছিরকে ৬ বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ধামচাইল-খাকচাইল রাস্তার কাজ নামমাত্র করার অভিযোগ রয়েছে। সরজমিনে এই কাজ দেখার সময় খাকচাইল গ্রামের ফরিদ উদ্দিন মেম্বার বলেন- ‘ইতা কোন্ কাজ? ইট পারা দিলে ভাইঙ্গা যাগা। লাথি মারলে পইরা যা, ছইরা যা।’ তিনি জানান-কাজটি দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। ঠিকাদার বিল পাইনি বলে কাজ বন্ধ রাখে। আরও জানান-ইঞ্জিনিয়ার কাউকে কাজ দেখার মধ্যে পাইনি। যে ঠিকাদার তার শ্বশুরই কাজ দেখাশোনা করে। লোকমান হোসেন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঠিকাদারি চুক্তি হয়েছে এলজিইডির। কিন্তু কাজটি করছেন নূরুল আমিন নামের এক ঠিকাদার। তার শ্বশুর বাড়ি এ এলাকায় হওয়ায় কেউ কাজের মান নিয়ে মুখ খুলেন না। কাজটি দেখার দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান-রাস্তাটির ২৪৫০ মিটার কাজ হচ্ছে। এরমধ্যে ৪৮০ মিটার রক্ষণাবেক্ষণ ও বাকি অংশের উন্নয়ন হবে। এই কাজের আওতায় ভাঙ্গা অংশ মেরামত, কার্পেটিং, সেন্ড ফিলিং, এএসএস(সাবব্যাজ) ও ম্যাকাডম (ডব্লিউবিএম) করা হবে। ২০১৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এই কাজ শুরু হয়। এ বছরের ৭ই সেপ্টেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা। কাজের অগ্রগতি ৬০ ভাগ বলে জানান এ প্রকৌশলী। তবে রোলার ক্রাইসিসের জন্য একটু দেরি স্বীকার করেন তিনি। কাজ একমাস বন্ধ ছিল বলেও জানান। গ্রেটার কুমিল্লা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৯৫ লাখ টাকার এই কাজ হচ্ছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী আর নানা ত্রুটি এলাকার মানুষের চোখে ধরা পড়লেও প্রকল্পের পরিচালক আবদুস সালাম মোল্লা কাজ দেখে সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে জানান, এ উপ-সহকারী প্রকৌশলী।সূত্র:: মানব জমিন