Main Menu

আহরন্দ মহিউদ্দিননগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণে শোক সভা

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার আহরন্দ মহিউদ্দিননগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মরহুম মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও প্রাক্তন ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা মো: আবু ছালেহসহ প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণে শোক সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্কুল মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকমণ্ডলী, আশেপাশের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকগণ, আলেম সমাজ, অভিভাবকবৃন্দ ও এলাকার সর্বস্তরের জনগণ এতে অংশ নেন।

প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে শোক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কবি,গবেষক ও শিক্ষক নেতা, শালগাঁও কালিসীমা স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল মোঃ শামসুজ্জামান।

বিশেষ অতিথিগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন – সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খা মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ও অত্র স্কুলের সাবেক সভাপতি মোতাহের হোসেন চৌধুরী, সাবেক সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বেপারি,নোয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মনোয়ার হাসান আজিজ, বিদ্যাকুট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন চৌধুরী, বীরগাঁও স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন প্রমূখ।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দাতা সদস্য জনাব মাসুদ হায়দার সহ অভিভাবক সদস্যবৃন্দ। আরও উপস্থিত ছিলেন দুই গ্রামের মসজিদসমূহের ইমাম,খতিব সহ গ্রামের আলেমগন। বিশিষ্ট সালিশ সর্দার, অভিভাবকগণ মরহুমদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। স্মৃতিচারণ বক্তব্যে দুই প্র‍য়াত শিক্ষকের বর্ণাঢ্য জীবনের গল্প ও বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়। অনেকেই প্রিয় শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লূত হন। অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পরে কথা বলতে পারেনি।

শোকের ভাবগাম্ভীর্যের এই অনুষ্ঠানটি ছিল একদল স্কাউট স্বেচ্ছাসেবীর সুশৃঙ্খল নিয়মে সাজানো । অনুষ্ঠানের প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকরা আগত সবাইকে স্বাগত জানিয়ে কালো ব্যাজ পরিয়ে দেয়। এর পরে অন্য একদল স্বেচ্ছাসেবক সবাইকে শিক্ষকদ্বয়ের জীবনী সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করে। আরেক দল আগতদেরকে শোক বই দেখিয়ে আহবান জানায় তাতে মরহুম শিক্ষকদের নিয়ে আবেগ অনুভূতি লিখার জন্য। এ সবই করা হয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ব্যাচের পক্ষ থেকে। স্বেচ্ছাসেবকরা অনুষ্ঠানে আগত সবার সেবায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিল।

স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে নেই। তারা তাদের প্রিয় শিক্ষকদের স্মরণে একটা দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করে।

শোক সভা শেষে মরহুম শিক্ষকদ্বয়ের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন স্বনামধন্য দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া আশরাফিয়া মহিউদ্দিননগর- এর সম্মানিত প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা মুফতি দ্বীন মোহাম্মাদ আশরাফ সাহেব । আরও উপস্থিত ছিলেন হযরত মাওলানা আব্দুল আওয়াল সাহেব,হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন সাহেব সহ আহরন্দ ও মহিউদ্দিননগর গ্রামের মসজিদের সম্মানিত ইমাম, খতিব ও অন্যান্য আলেমগণ।

শোক সভার প্রধান আকর্ষণ ছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিপুল উপস্থিতি ও তাদের উদ্যোগে সংগৃহীত তাদের প্রিয় শিক্ষক মরহুম মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্যারের পরিবারের জন্য প্রদত্ত সম্মাননা উপহার। উপহারের আর্থিক পরিমাণ ১১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকার বেশি।

অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা ও গ্রন্থনায় সহায়তা করেন অত্র স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক জনাব আবুল ফয়েজ, জনাব ছাদেকুর রহমান ও জনাব হুমায়ুন কবির চৌধুরী ও অন্যান্য শিক্ষকগণ। সার্বিক তত্তাবধান ও পরিচালনা করেন অত্র স্কুলের (শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত) সদ্য সাবেক সভাপতি জনাব মো: আনোয়ার হোসেন।

মরহুম মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ছিলেন অত্র স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক। ১৯৯৬ সালে স্কুলটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এলাকাবাসীকে নিয়ে তিনি স্ব-উদ্যোগে, বিনা বেতনে স্কুলের জন্য কাজ করেছেন। ২০০১ সালে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায়, প্রধান শিক্ষকের পদ ছেড়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:০০ টায় আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ৫০ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অন্যদিকে মরহুম মাওলানা মো: আবু ছালেহ সাহেব ছিলেন এই স্কুলের প্রাক্তন ধর্মীয় শিক্ষক। তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে বেশ সুনামের সাথে কর্মজীবন শেষ করেন। গত ১৮ জুলাই, ২০২৪ ভোর ৬:০০ টায় আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মো: আবুল ফারাহ সাহেবের ছোট ভাই।

দুইজন শিক্ষকই তাদের শিক্ষার্থীদের কাছে খুব প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি তারা এলাকার মানুষের কাছে খুবই সম্মানিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাদের আকস্মিক মৃত্যুতে দেশে বিদেশে অবস্থানরত হাজারো শিক্ষার্থী, শুভাকাঙ্ক্ষী তাদেরকে শ্রদ্ধা ভালবাসা ও স্বপ্রশংসচিত্তে স্মরণ করেন।



« (পূর্বের সংবাদ)



Shares