Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মামলা করেও নিরাপত্তাহীন প্রবাসীর পরিবার

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে হামলার ঘটনায় মামলা করেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এক প্রবাসী পরিবার। বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ না থাকার সুযোগ নিয়ে প্রবাসী পরিবারটির বাড়ি ঘরে হামলা-ভাঙ্গচুর ও হুমকি অব্যাহত রেখেছে প্রতিপক্ষ। ভাটপাড়া গ্রামের চাঁন মিয়ার দুই ছেলে খায়েস মিয়া ও রমজান মিয়া ইতালি প্রবাসী।

জানা গেছে, চাঁন মিয়ার বাড়ির দক্ষিণপাশে ৪জনের অংশীদারী মালিকানায় ৪৫ শতাংশের একটি পুকুর আছে। পুকুরটির ৪৫ শতাংশের মধ্যে ৯ শতাংশ করে মোট ৩৬ শতাংশ চার জনের মধ্যে ৬৯৭ নং খতিয়ানে ৬৭০ দাগে বিএস জরিপে লিপিবদ্ধ হয়। আর বাকি ৯ শতক জায়গা পাড় শ্রেণী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। সে হিসেবে চার ভাগের এক অংশ ২.২৫ শতক পাড়ের মালিকানা পাওয়ার কথা চাঁন মিয়ার। কিন্তু চাঁন মিয়ার মালিকানার তথ্য গোপন করে কালাগাজীর ছেলে আলতাব আলীর ওয়ারিশগণ ৬৭১ দাগে সম্পূর্ণ ৯ শতক জায়গা তাদের নামে করে নেয়। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সালিশ দরবার হলেও এর কোন সমাধান হয়নি। গত বছরের ২৪ এপ্রিল এই পাড় দখল করতে আসে ইব্রাহিম মিয়ার নেতৃত্বে ৭ জন। এসময় বাধা দিলে প্রবাসীর পরিবারের উপর হামলা চালায় তারা। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ২৭ এপ্রিল চাঁন মিয়ার বড় ছেলে খায়েস মিয়ার স্ত্রী নাছিমা বেগম বাদী হয়ে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট্র আদালতে ৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে।

আসামীরা হলেন, অলি মিয়ার ছেলে মোঃ ইব্রাহিম, আউয়াল মিয়ার ছেলে মোঃ মফিজ, আলী মিয়ার ছেলে এনামুল, মেরাজ মিয়ার ছেলে মাসুদ মিয়া, জমু মিয়ার ছেলে ফরহাদ মিয়া, সিরাজ মিয়ার ছেলে নাছির উল্লাহ ও মৃত আলতাব আলীর ছেলে অলিউল্লাহ। মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা অবস্থায় গেল ২৬ নভেম্বর সকালে ফের ওই জায়গায় ভরাট কাজ ও চাঁন মিয়ার বাড়ির বেশ কয়েকটি ফলদ, বনজ গাছ কেটে ফেলে। এসময় বাধা দিলে ফের হামলা ও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে প্রবাসীর পরিবারটিকে। এ ঘটনায় সদর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবারটি।

সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দিনের বেলায়ও দরজা জানালা সাটিয়ে বসবাস করছে প্রবাসীর পরিবারটি। এখনও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে ভাংচুর করা জানালা ও আসবাবপত্র। পুরো পরিবারটি আতঙ্কগ্রস্থ অবস্থায় রয়েছে।

মামলার বাদী নাছিমা বেগম বলেন, আমরা এখন আর পুকুর ব্যবহার করতে পারছিনা। আমরা পুকুরে নামার রাস্তায় গাছ কেটে ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার স্বামী ও দেবর প্রবাসে থাকে। এক মেয়ে, দুই ছেলে ও শ^শুড় শ^াশুড়ী নিয়ে খুব রিস্কে থাকি। রাত বিকালে চলাফেরা করতে খুব ভয়ে থাকি। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে ভয় পায়।

দুই প্রবাসীর মা খোদেজা বেগম বলেন, আমারার জাগা (জায়গা) নিয়ে প্যাঁচ। বিএসের সময় হেরা আমরার জাগা নিয়া বিএস কইরা লাইছে। পুকুরটা আছিল এক দাগের, হেরা এডারে দুই দাগ বানাইছে। তারা পাড়গুলা তারার নামে উডাই নিয়েগা। আমরা পুকুরে গেলে হেরা ঘাট বদ্ধ কইরা লা। একবার আমরার বাড়িঘর ভাংচুর করছে। এখন আমরা ঘুমাইলেও ডরাই।

প্রবাসীদের বাবা চাঁন মিয়া বলেন, আমারে হুমকি দিছে, আমারে মাইরা মাছেরে খাওয়াইলাইব। আমি কি করমু একলা মানুষ।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জামিয়া খাতুনে জান্নাত মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুফীজুল ইসলাম বলেন, চাঁন মিয়া সম্পর্কে আমার দাদা হন। তার স্ত্রীর বাড়ি নাটাই গ্রামে। তিনি নাটাই গ্রামের লোকজন দিয়ে আমার উপরে হামলা করিয়েছে। এ খবর শুনে আমার লোকজন তাদের বাড়িঘরে হামলা করেছে। আমি এটা অস্বীকার করবনা। জেল ফাঁসি হলে হোক। আদালতে মামলা চলমান থাকার পরও কেন বিবেদপূর্ণ জায়গায় গেলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাড় বৃষ্টির পানিতে ভেঙ্গে গেছিল আমরা মেরামত করতে গিয়েছি। আর আমরা গাছ কাটিনি। কয়েকটি ডালপালা কেটেছি।

এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোজাফফর হোসেন বলেন, খবর পেয়ে সাথে সাথেই পুলিশ পাঠিয়েছি। বিষয়টি অধর্তব্য অপরাধের আওতায় পরে বিধায় আদালতে প্রসিকিউশনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রবাসী পরিবারের নিরাপত্তায় আমরা সজাগ রয়েছি।






Shares