নাসিরনগরে হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় ত্রিপুরার ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে যে হামলা হয়েছে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ত্রিপুরা রাজ্যবাসী এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছে। এমন বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদের দেশেও (ভারত) ঘটছে।
তিনি রবিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি খ.আ.ম. রশিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর আরো বলেন, আমি নাসিরনগরে গিয়ে জানতে পেরেছি সেখানকার দত্ত বাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন মার খেয়েছে। তিনি বলেন, হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ভাংচুর করা হলেও সেখানে হিন্দুদের বসবাস করার পরিবেশ রয়েছে। তিনি বলেন, মন্দিরগুলো না ভাঙলে আমরা খুশি হতাম।
তিনি বলেন, নাসিরনগরের হামলার ঘটনা বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল সমর্থন করেনি। এ ঘটনার প্রতিবাদ হয়েছে। ঘটনার পর প্রশাসনসহ বিভিন্ন দলের লোকজন ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে গিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বসবাসের মতো পরিস্থিতি নাসিরনগরে আছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদের নামে কেউ যাতে সন্ত্রাস করতে না পারে সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় সুন্দর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে। সংখ্যালঘুরা সেখানে নিরাপদে আছে।
পবিত্র কর আরো বলেন, পাকিস্তানে যা হচ্ছে তা সকলের জন্য অশান্তির কারন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমাদের শুধু বন্ধুত্ব নয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক। আমাদের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ এখান থেকে গিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক কারনে বিভক্ত হয়েছি। এজন্য দায়ী বৃটিশরা। তিনি বলেন, আমাদের দু’দেশের মধ্যে আদান-প্রদান বেশী হলে দু’দেশের সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানের অত্যাচারের সময় আমরা মুখ বুঝে থাকতে পারিনি। তিনি বলেন, আখাউড়ার ব্যাটলই বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে।
মতবিনিময়কালে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেটি একটি দৃষ্টান্ত। কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন, সে উন্নয়নে বাংলাদেশ আমাদের অনুকরণীয়। তিনি বলেন, উন্নত জাতি হতে হলে ক্ষুধা দূর ও শিক্ষার উন্নয়ন করতে হবে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাই করছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু ঢালু তাই ত্রিপুরা থেকে বিষাক্ত ও কালো পানি আসবেই। আমরা বিষাক্ত পানি শতকরা ৭৫ ভাগ পরিবর্তন করেছি। তবে আখাউড়ার কালন্দী খাল দিয়ে যে দূষিত কালো পানি আসে সেটি যেন পরিশোধন করে ছাড়া হয় সেজন্য একটি প্লান্ট স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় চলতে পারে। আমরা ভিসা সহজীকরনের চেষ্টা করছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় কোন ফেন্সিডিলের কারখানা নেই। আমাদের দেশেও ফেনসিডিল বে-আইনি। তবে ত্রিপুরার কিছু জায়গায় গাঁজা চাষ হয়। গত বছর আমরা প্রায় ১০ কোটি টাকার গাঁজা নষ্ট করেছি। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পীর পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আরজু প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে ত্রিপুরা রাজ্যের বিধান সভার স্পিকার পবিত্র কর প্রেসক্লাবে এসে পৌছলে প্রেসক্লাবের.নেতৃবৃন্দ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ও ক্রেস্ট প্রদান করেন।