গত বছর খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল বইটি। মেরি কুরি থেকে হিলারি ক্লিন্টন বা সেরেনা উইলিয়ামস— ১০০ জন বিপ্লবী-সাহসিনী মহিলাদের নিয়ে লেখা বইয়ে ছিলেন তিনিও। কিন্তু মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপরে সেনার অকথ্য নির্যাতন নিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমালোচনা হলেও তাঁকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। তাই ‘গুড নাইট স্টোরিজ ফর রেবেল গালর্স’ নামে ওই বই থেকে মায়ানমারের এক সময়ে গণনেত্রী ও বর্তমান সরকারের পরামর্শদাতা আউং সান সু চি-কে বাদ দেওয়ার দাবি উঠল।
বড়দিনে অনেকেরই মোজার ভেতরে উপহারে এ বারও ঢুকতে পারে বইটি। কিন্তু এ বছরের শেষে এ বইয়ে সু চি-র কাহিনি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কারণ বইটি লেখার সময়ে সু চি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন অন্য কারণে। তিনি তখন বিশ্বের চোখে নির্যাতিতদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সাহসী স্বর। শান্তির নোবেলজয়ীও। কিন্তু সে অবস্থান নড়ে গিয়েছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের পর থেকে। মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে যে হিংসাকে রাষ্ট্রপুঞ্জ পর্যন্ত জাতিনিধনের সঙ্গে তুলনা করেছে, তা নিয়ে সু চি খুব কম শব্দই উচ্চারণ করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে সু চি-র নীরবতায় কি মায়ানমার সরকারের, বা বলা ভাল সে দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন কাজ করছে?
বইটির পরবর্তী সংস্করণে সু চি-র নাম বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছে। সে দাবি এতটাই জোরালো যে, বইয়ের দুই লেখিকা এলেনা ফাভিলি এবং ফ্রান্সেস্কা কাভালো বই থেকে সু চি-র অংশ সরিয়ে দেওয়ার কথাই ভাবছেন। ছ’বছরের শিশু থেকে সাধারণ পাঠক— এই বইয়ে নজরকাড়া মহিলাদের লড়াকু জীবনর সঙ্গে রয়েছে মহিলা-শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবিও।
জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সু চি-র ২১ বছরের গৃহবন্দি থাকার দিনগুলো থেকে শুরু করে তাঁর মুক্তি পর্যন্ত সময়কাল ধরা রয়েছে ‘গুড নাইট স্টোরিজ ফর রেবেল গালর্স’-এ। লেখা হয়েছে, ‘‘তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। নিজের ঘর ছেড়ে বেরোতে হয়নি। তবুও সে প্রতিবাদেই তাঁর দেশ এবং পৃথিবীর অগুনতি মানুষকে তিনি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।’’
সু চি-কে নিয়ে এমন সব কথা পড়ে বইটি কিনেছেন এমন কিছু অভিভাবক এখন রীতিমতো ফুঁসছেন। কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘বইটার ৯৯ শতাংশ খুবই অসাধারণ। কিন্তু জাতিনিধনে অভিযুক্ত কেউ কী ভাবে এ বইয়ে রয়েছেন? এটা বিরক্তিকর। আউং সান সু চি— এমন এক জন, যিনি কিছুই করেন না। উল্টে জাতিনিধন, শিশু হত্যা, গণধর্ষণের মতো নির্যাতনের অভিযোগ শুনে চুপ করে থাকেন! উনি এই বইয়ে, আমি হতবাক!’’
আর এক অভিভাবক বলছেন, ‘‘তিন বছরের মেয়েকে গোলাপি রাজকুমারির দুনিয়া ছেড়ে অন্য কিছু শেখাতে চেয়েছিলাম। এ বইতে এমন কয়েক জন মহিলা রোল মডেলের কথা রয়েছে, যাঁরা নিজেদের জীবনের লড়াইটা নিজেই লড়েছেন। কোনও রাজপুত্রের ভরসায় থাকেননি। সেখানে সু চি-কে দেখে আমি হতাশ। রোহিঙ্গা সঙ্কটের পরে ওঁকে আর মেনে নেওয়া যায় না।’’