নিউইয়র্ক নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের ভয়াবহ বর্ণনা
নিউইয়র্কের গভর্নর বলছেন, ৫ এপ্রিল নাগাদ তাদের ভেন্টিলেটর ও মাস্ক শেষ হয়ে যাবে
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আধুনিক চিকিৎসার জন্য সুপরিচিত শহরগুলোকে একটা একটা করে বিধ্বস্ত করছে। ন্যুয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কও। বিশ্বের সব থেকে বেশি করোনা আক্রান্ত এখন যুক্তরাষ্ট্রে। তার অর্ধেকের বেশি আবার এই নিউইয়র্ক শহরে। এখানে থাকা সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ চাপ আসছে। অন্য রোগীদের পাশে ফেলে নতুন করে করোনা রোগীদের জন্য জায়গা করার চেষ্টা চলছে। ওয়ার্ডগুলোর পুনর্বিন্যাস হচ্ছে।
কিন্তু সংকট কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই সব গ্রাস করে নিয়েছে। একই অবস্থা নিউইয়র্কের বেসরকারি হাসপাতালগুলোরও। এ নিয়ে নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোর সংগঠনের প্রেসিডেন্ট কেনেথ রাসকি বলেন, সরকারি বলেন আর বেসরকারি বলেন সব হাসপাতালই এখন সবাই এক নৌকায় আছে। সবাইকেই এই সংকটের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে। করোনা মহামারী চোখ খুলে দিল যে, এমন একটি সংকট মোকাবিলায় কতখানি অপ্রস্তুত ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজেস্টার প্রিপারেডনেসের পরিচালক আইরিন রেডলেনার আক্ষেপ করে বলেন, কোনো সরকারের সময়ই এমন মহামারী ঠেকাতে চিকিৎসা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার মতো অর্থ ছিল না। শহর কর্তৃপক্ষ ও প্রাদেশিক সরকার এখন উঠে পড়ে লেগেছে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে। যেসব স্থাপনা বহুদিন ব্যবহৃত হচ্ছে না সেসব স্থানে এমন হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। সোমবার জ্যাভিটস সেন্টার ম্যানহাটনে একটি ২৫০০ শয্যার হাসপাতাল খুলে দিয়েছে। সেখানে জরুরি সব ব্যবস্থাও রয়েছে।
মার্কিন নৌবাহিনীর একটি জাহাজে আরো ১০০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। একটি টেনিস স্টেডিয়ামকে খুলে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে ৩৫০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সেখানে সব মিলিয়ে এখন রয়েছে ২০ হাজার শয্যা। এটিকে আগামী কয়েক সপ্তাহে অন্তত তিনগুণ করতে না পারলে বিশাল সংকট অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে নিউইয়র্কে ১৫০০ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। সেখানে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে ১০ হাজারের বেশি মানুষকে যা সামনে কয়েকগুণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিউইয়র্কের গভর্নর বলছেন, ৫ এপ্রিল নাগাদ তাদের ভেন্টিলেটর ও মাস্ক শেষ হয়ে যাবে।
নিউইয়র্ক নার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান শেরিডান গঞ্জালেস ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, আমরা সিনেমায় যেরকম অবস্থা দেখি এখন ঠিক তেমনই এক কঠিন সময় পার করছি। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। মানুষ এখন মিনিটের মধ্যে মরে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলো আক্রান্তদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে উৎসাহিত করছে। অনেক সময়ই তাদের হাতে সময় খুব কম থাকে। দ্রæত কম্প্রেসার ও অক্সিজেন পাম্প লাগাতে হয় ফুসফুসে। কখনো এতে পাঁজরের হার ভেঙে যায় কখনো রক্তনালিতে আঘাত লাগে। এখন পর্যন্ত যত মানুষকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বা ভর্তি করা হয়েছে তাদের ভেন্টিলেটর লেগেছে, সামনেও লাগবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন এই সংকট নেই। কিন্তু হাসপাতালগুলো বলছে, দ্রæতই শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের ভেন্টিলেটরস ও মাস্ক। গত ১ মার্চ নিউইয়র্কে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে। তখন মেয়রের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, নিউইয়র্কে এক লাখের বেশি এন-৯৫ মাস্ক, ১৯ মিলিয়ন সার্জিক্যাল মাস্ক, ৪০ হাজারের বেশি গেøাভস, ৩৮ হাজার গাউন ও ৩৫০০ ভেন্টিলেটরস আছে। কিন্তু এখন তার সবই শেষের দিকে। সামনের দিনগুলোতে সংকট দ্রæতই কয়েকগুণ হয়ে যাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তখন সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হবে অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধ করার মতো।