কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডো। কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার এ কথা জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তিনি নির্ধারিত সময় আইসোলেশনে থাকবেন। সেইসঙ্গে এও বলা হয়েছে, সোফির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ এখনও মৃদু।
তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সুস্থই আছেন। তাঁর মন্ত্রক জানিয়েছে, এখনও অবধি কোনও উপসর্গ ধরা পড়েনি তাঁর ক্ষেত্রে। তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে তিনিও ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকবেন।
সম্প্রতি ব্রিটেন থেকে ফেরার পরে হালকা জ্বর হয় সোফির। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেন। আইসোলেশনে থাকা করোনাভাইরাস আক্রান্ত কানাডিয়ান ফার্স্ট লেডি নিজেও টুইট করেছেন।
কানাডায় অন্য যে সব পরিবারে আইসোলেশন পর্ব চলছে, তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন সোফি ট্রুডো। যাদের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রকোপ বেশি তীব্র, তাঁদের প্রতিও তিনি সমব্যথী। সোফির আশা, একসঙ্গে লড়াই করে এই রোগ প্রতিহত করা যাবে। একইসঙ্গে, সবাইকে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন তিনি।
এখনও অবধি কানাডায় ১০৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গিয়েছেন একজন। রোগের প্রকোপ সবথেকে বেশি ব্রিটিশ কলম্বিয়া, অন্টারিও, অ্যালবার্টা, কুইবেক এবং ম্যানিটোবা প্রদেশে। এই রোগ মোকাবিলায় একশো কোটি ডলার মঞ্জুর করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
ইতিমধ্যে বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন মহলের আরও কয়েক জন নামী ব্যক্তিত্ব। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগে কাহিল খোদ ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাদিন ডরিস। কাল স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়ে বছর বাষট্টির ডরিস নিজেই নিজেকে ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রেখেছেন বাড়িতে। সে কথা টুইট করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন সবচেয়ে বেশি চিন্তা মাকে নিয়ে। ৮৪ বছর বয়স, আমার সঙ্গেই থাকেন। আজই দেখলাম মা কাশছে। কাল মায়েরও টেস্ট!’’ ৫ মার্চ ডরিসের কিছু উপসর্গ ধরা পড়ে। ওই দিনই ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন-সহ প্রায় একশো জন এমপি-মন্ত্রী-সচিবের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁকে!
আক্রান্ত হয়েছেন জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস এবং তাঁর স্ত্রী রিটা উইলসন। বৃহস্পতিবার সকালে টুইট করে নিজেই এ কথা জানিয়েছেন অভিনেতা।
টম হ্যাঙ্কস এবং তাঁর স্ত্রী রিটা এই মুহূর্তে একটা ফিল্মের শুটিংয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার রয়েছেন। সেখানেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে যা যা লক্ষণ দেখা যায়, সেগুলো প্রকাশ পেতেই দু’জনে চিকিত্সকের দ্বারস্থ হন। মেডিক্যাল টেস্টে দু’জনের শরীরেই করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে।
টুইটে টম হ্যাঙ্কস জানিয়েছেন, “আমরা দু’জনেই খুব ক্লান্তি অনুভব করছিলাম। রিটার অল্প জ্বরও ছিল। সব কিছু ঠিক আছে কি না তা জানার জন্যই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করতে দেন চিকিত্সক। টেস্ট পজিটিভ।” সঙ্গে ডাস্টবিনের মধ্যে একটি সার্জিকাল গ্লাভসের ছবিও পোস্ট করেন তিনি। আপাতত তাঁদের দু’জনকেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কার্যত গোটা পৃথিবীকেই দ্রুত গ্রাস করছে করোনাভাইরাস। অ্যান্টার্কটিকা বাদে নোভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ছ’টি মহাদেশেই। আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থার পর এ বার করোনার সংক্রমণকে প্যানডেমিক বা ‘অতিমারী’ (মহামারীর চেয়েও ভয়াবহ) ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা( হু)। বুধবার এই ঘোষণা করে করোনার সংক্রমণকে ‘অভূতপূর্ব’ বলেছেন হু-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস আধানম ঘেব্রিয়েসাস। ইউরোপের কোনও দেশ থেকে আমেরিকায় বেড়াতে যাওয়ার উপর এক মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা।
জানুয়ারিতে ‘আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছিল হু। কিন্তু তার পর থেকে হু হু করে বেড়েছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। সারা বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ১২ হাজার।