ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদকের ছড়াছড়ি
সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মনবাড়িয়া। প্রতিদিন এ সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমান মাদক পাচার হয়। মাঝে মাঝে ধরাও পড়ে। যে পরিমান মাদক ধরা পড়ে তার চেয়ে কয়েক গুন বেশী মাদক সীমান্ত গলিয়ে বেড়িয়ে যায়। মরনব্যধি মাদক নিয়ন্ত্রেনের দায়িত্ব মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গত কয়েক বছর ধরে বড় ধরনের কোন সাফল্য নেই বললেই চলে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর ভুইয়া এখন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা উত্তোলন নিয়ে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ছেন। কোন কোন মাদক ব্যবসায়ী আবার মাসোহারার পরিমান বাড়িয়ে দেয়ায় টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়। আলোচনা আছে কেউ কেউ স্থানীয় সরকার দলীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে ফের নির্বিঘেœ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অনেকেই নতুন নির্ধারিত মাসোহারা দিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে মাদক ব্যবসায়ীরা জানায়। জেলা শহরের বেশ কয়েকটি স্পটে তিনি স্বশরীরে ওই মাসোহারার টাকা উত্তোলন করেন বলে খবর মিলেছে।
অনুসন্ধানে জানায়ায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাসোহারা উত্তোলনের জন্য তৎপর হয়ে পড়েছেন। মাদক দ্রব্য উদ্ধারে তাদের কোন অভিযান নেই বললেই চলে। গত বছরের নভেম্বর মাসে পরিদর্শক হুমায়ূন কবীর ভূইয়া জেলার দায়িত্ব নিয়ে মাসোহারা নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার দলীয় লোকজন হস্তক্ষেপ করলে পরে তা সুরাহা হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়ায় গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য অবাধে ঢুকছে। বিশেষ করে জেলার বিজয়নগর, আখাউড়া, কসবা দিয়ে তা প্রবেশ করছে। কয়েক বছর পূর্বে বিপুল পরিমান গাঁজা, হেরোইন, ভারতীয় মদ, বিয়ার, ভারতীয় ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য উদ্ধার হলেও তা গত ৬ মাসে কয়েক কেজিতে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার কেজি গাঁজা সীমান্ত গলিয়ে প্রবেশ করে পরে তা দেশের ভৈরব, কুমিল¬া, নরসিংদী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় পাচার হয়। একটি সূত্র জানায়, বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল, আজমপুর, চান্দুরা, আমোদাবাদ, পেটুয়াজুরি, নলঘড়িয়াসহ কমপক্ষে ১৫টি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ীরা ওই উপজেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী আলমগীর, কবীর, ইব্রাহীম, মানিকের মাধ্যমে ৬ লক্ষ টাকা পরিদর্শক হুমায়ুন কবীরকে প্রদান করে।
মাদক দ্রব্য বেচা-কেনার সাথে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্র জানায়, আখাউড়া উপজেলার রেলওয়ে কলোনী, সুইপার কলোনীসহ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী মাসে দেড় লক্ষ টাকা দেয় মাদক ব্যবসায়ী আলমগীরের মাধ্যমে পরিদর্শককে দেয়া হয়। কসবার উপজেলার ইমামবাড়ি, মোগড়া, তন্তর, ধরখার বাজার, সুইপার কলোনীরসহ বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫ লক্ষ টাকার উত্তোলন করে তুলে দেয়। শহরের গোকর্ণঘাট, ভাদুঘর, কলেজপাড়া, পৈরতলা, পুনিয়াউট, পৌরসভার সুইপার কলোনী, তিতাস নদীর পারের ঋষিপাড়া, মৌড়াইল, নন্দনপুর, কাজীপাড়ারসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীরা ৪ লক্ষ টাকা দেয়। এছাড়া শহরের ১ টি ফরেন লিকার সপ থেকে মাসিক ১ লক্ষ টাকা, বাংলা মদের দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকা, আখাউড়ায় কমিশনার বাবুলের বাংলা মদের দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকা, আশুগঞ্জের বাংলা মদের দোকান থেকেও মাসিক ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এর আগে ওই সকল মদের দোকানগুলো থেকে ৫০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে মাসোহারা নেয়া হত। গত বছরের নভেম্বর মাসে নতুন পরিদর্শকের যোগদান করার পর টাকা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। পরে তা স্থানীয় সরকার দলীয় লোকজন মধ্যস্থতায় তা সমাধান হয়।
জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রক পরিদর্শক মোঃ হুমায়ুন কবীর ভূইয়া জানান, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে মাল উদ্ধারের পরিমান কম হলেও মামলা পরিমান বেড়েছে।