ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশে হচ্ছেটা কি? নবীনগর-আশুগঞ্জের ওসি বদলি, শীঘ্রই রদবদল হচ্ছে সদর থানায়! আশুগঞ্জে যোগ দিলেন সেই বদরুল
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদলির ঘটনায় অস্থির হয়ে উঠেছে জেলা পুলিশ। গুরুতর কোনো অভিযোগ ছাড়াই চলতি মাসে জেলার নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মেসবাহ্ উদ্দিন আহমেদ এবং আশুগঞ্জ থানা পুলিরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঈনুর রহমানকেও দু-একদিনের মধ্যেই বদলি করা হতে পারে বলে সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও ওসিদের এই বদলিকে সাধারণ ব্যাপার হিসেবেই দেখছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান। খবর প্রকাশ করেছে জাগো নিউজ।
তার মতে, যিনি যে থানার জন্য ফিট তাকে সেই থানাতেই পদায়ন করা হবে।
তবে পুলিশের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, মূলত চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের নতুন উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস.এম মনির-উজ-জামানের যোগদানের পর থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওসি বদলের হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যেই সদর মডেল থানার ওসি হওয়ার জন্য চট্টগ্রাম রেঞ্জ অফিসে জোর তদবির-লবিং শুরু করেছেন কয়েকজন পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর)।
জেলার বাকি থানার ওসিদের মনেও সংশয় দেখা দিয়েছে কখন তাদের চেয়ারও দখল করেন অন্য কেউ !
সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মে জেলার নবীনগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মেসবাহ্ উদ্দিন আহমেদকে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে একসঙ্গে বদলি করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। তাদের স্থলে পদায়ন করা হয় আসলাম সিকদার ও নাজির আহমেদ নামে দুই পুলিশ পরিদর্শককে (ইন্সপেক্টর)। থানা খালি করে একসঙ্গে দুই ওসিকে সরানোর ঘটনায় তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মনে।
ইমতিয়াজ আহম্মেদ নবীনগর থানায় যোগদান করেন ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আর মেসবাহ্ উদ্দিন যোগ দেন ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল। সেই হিসেবে ইমতিয়াজের চাকরির মেয়াদ এক বছর ৮ মাস ও মেসবাহ্’র এক বছর। তবে আসলাম সিকদার বড় এক পুলিশ কর্মকর্তার লোক বলে জেলায় ঢুকার পরপরই তাকে থানায় পদায়ন করা হয়েছে বলে আলোচনা রয়েছে।
হুট করে এক থানার দুই ওসি বদলির রেশ কাটতে না কাটতেই আশুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকেও বদলি করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
গত ১২ মে নানা কারণে সমালোচিত ইন্সপেক্টর বদরুল আলম তালুকদারকে আশুগঞ্জের নতুন ওসির দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন সেলিম উদ্দিন। এছাড়া ১৫ মাস মেয়াদেই স্বেচ্ছায় ঢাকা রেঞ্জে বদলি হওয়ার আবেদন করেছেন সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঈনুর রহমান।
গত ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি সদর মডেল থানার দায়িত্ব নেন মঈনুর রহমান। যেখানে সবাই সদর থানার ওসি হওয়ার জন্য পাগল প্রায়, সেখানে স্বেচ্ছায় মঈনুরের বদলির আবেদন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। মূলত চেয়ার সামলাতে টাকার অংকের বেসামাল প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন না বলেই তিনি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
বর্তমানে সদর মডেল থানার ওসি হওয়ার জন্য জোর লড়াই করছেন জেলা পুলিশের ডিআইও-১ মো. নবীর হোসেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া ও পুলিশ লাইনে সংযুক্ত থাকা ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তারা এখন ছুটছেন বিভাগের বড় কর্মকর্তা ও এলাকার প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির কাছে।
এদিকে, শহরে গুঞ্জন রয়েছে জেলার বিশেষ-বিশেষ থানার ওসির চেয়ারের দাম উঠেছে ৪০ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত। টাকার জোরে অন্য থানায় চাকরিকালীন নানা ঘটনায় অভিযুক্ত ইন্সপেক্টরও জেলায় ঢুকে ভালো থানায় পদায়ন হচ্ছেন। তবে এসব বদলি-পদায়নের কারণে এলাকার লোকজনদের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।
মার্চের শেষ দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ঢুকেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া বিতর্কিত ইন্সপেক্টর বদরুল আলম তালুকদার। নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ পুলিশ কর্মকর্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢুকার পরই তাকে নিয়ে জেলা পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ভৈরব থানায় থাকাকালীন সময়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি আর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০১৬ সালের ১০ আগস্ট ভৈরবের কাঠ ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম বিজনকে আটক করে থানায় এনে একটি হত্যা মামলার স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন বদরুল। তবে বিজন স্বীকারোক্তি দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দেয়ায় বিজনকে একটি হত্যা মামলার আসামি বানিয়ে চালান করে দেয়া হয়। পরে জামিনে কারামুক্ত হয়ে গত ৩ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বদরুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বিজন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ঢুকেই ভৈরবের পার্শ্ববর্তী আশুগঞ্জ থানার ওসি হওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার সঙ্গে মোটা অংকের অর্থ চুক্তি করেন বদরুল। অবশেষে কাঙ্খিত সেই আশুগঞ্জ থানাতেই গত ১২ মে ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয় বদরুলকে।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওসিদের বদলি সাধারণ ব্যাপার। আমাদের প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী দেড় থেকে দুই বছর হলে থানার ওসি বদল করা হয়। এ নিয়ম অনুযায়ী দুই থানার তিন ওসি বদল করা হয়েছে। তবে সদর থানার ওসি বদল হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
নতুন ডিআইজি যোগদানের পর ওসি বদল হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টিকে সরাসরি এভাবে বলা যাবে না। যারা থানার জন্য ফিট তাদেরকেই পদায়ন করা হবে। ইন্সপেক্টরদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সবাই তো আর ওসি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। তাছাড়া গতিশীলতা আনার জন্য অনেক কিছুই পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।