Main Menu

মন্ত্রীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আ’লীগে উত্তেজনা, পাল্টা বক্তব্য

+100%-
smfb_logoসমকাল প্রতিবেদক, ঢাকা ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া::ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রী ছায়েদুল হক গতকাল রোববার সমকালকে বলেন, ‘ব্যবসার জন্য রাজনীতি করি না, ঘুষও খাই না। এ কারণে একটি মহল ক্ষুব্ধ হয়ে আমার ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করছে।’ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইকে ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান মন্ত্রী ছায়েদুল হক। তিনি নাসিরনগরের ১৩ ইউপিতে প্রার্থী বাছাই করলেও জেলা কমিটি অনুমোদন দেয়নি। ক্ষুব্ধ মন্ত্রী ওই তালিকা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে জমা দিলে গুনিয়াউক ও হরিপুর ইউপির প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়। জেলা নেতাদের অভিযোগ, ছায়েদুল হক ওই দুই ইউপিতে দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করার চেষ্টা করেন। কর্মী-সমর্থকদের পুলিশি হয়রানি, গ্রেফতারসহ দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজকর্ম চালান। এ কারণে ছায়েদুল হকসহ দলের নাসিরনগর উপজেলা সভাপতি রাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম মনিরুজ্জামান সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু ছায়েদুল হক তার জবাব দেননি। রাফিজ উদ্দিন আহমেদ অশালীন শব্দে নোটিশের জবাব দেন। এ কারণেই গত শুক্রবার জেলা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ছায়েদুল হককে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ এবং রাফিজ উদ্দিন আহমেদকে সাময়িক বহিষ্কার করে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিশ ও এটিএম মনিরুজ্জামান সরকারকে সতর্ক করা হয়। মন্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কার ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবিও জানানো হয়। মন্ত্রী পক্ষের নেতাদের পাল্টা অভিযোগ, জেলা নেতাদের অনুরোধ এবং ইউপি প্রার্থী বাছাইয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে ও উপজেলা-ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেই মন্ত্রী প্রার্থী তালিকা করেছিলেন। অথচ জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’র মাধ্যমে গুনিয়াউক ও হরিপুরে বিতর্কিত দুই ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক সমকালকে আরও বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসারে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত উপদেষ্টা। তাকে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা জেলা সভাপতির নেই। তিনি বলেন, জেলা সাধারণ সম্পাদকের উপর্যুপরি অনুরোধেই আমি নাসিরনগরের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হই। পরে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে আমার মনোনীত প্রার্থী বদল করে হরিপুরে ‘প্রতিষ্ঠিত মদ ব্যবসায়ী’ দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি ও গুনিয়াউকে দলে নবাগত গোলাম সামদানীকে প্রার্থী করেন। নির্বাচনী প্রচারে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগও অস্বীকার করেন মন্ত্রী। ওই সময় মন্ত্রী হরিপুর ইউপিতে ‘রাজাকারপুত্র’ ফারুক মিয়াকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করায় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হয়। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রীর দাবি, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির লোকরাই ফারুক মিয়ার বাবা তাজুল ইসলামের নাম কমিটিতে ঢোকায়। শান্তি কমিটির লোকরাই তাকে হত্যা করে। তাজুল ইসলাম রাজাকার হলে শান্তি কমিটির লোকরা তাকে হত্যা করবে কেন?’ জেলা সভাপতি র আ ম উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী গত শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অমান্য ও জেলা কমিটির সঙ্গে সমন্বয় না করে একক সিদ্ধান্তে নাসিরনগরে প্রার্থী দেন ছায়েদুল হক। দুটি ইউপিতে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজও করেন। দুই ইউপিতে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা নন, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। এখানে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তোলাই অবান্তর। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের নয়, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এদিকে মন্ত্রীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশে তার সংসদীয় আসন নাসিরনগরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গোলাম নূর বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্দিনেও এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ছায়েদুল হক। এমন জনপ্রিয় রাজনীতিককে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলেও হতো। উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী লতিফা জাহান পান্না বলেন, ছায়েদুল হক একজন সৎ রাজনীতিবিদ বলেই অনেকে তাকে সহ্য করতে পারেন না। উপজেলা যুবলীগ সভাপতি অঞ্জন কুমার দেব ও উপজেলা ছাত্রলীগ আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন রানাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।





Shares