Main Menu

নাসিরনগরে পণ্যের বিনিময়ে শুটকির মেলা!(ভিডিও)

+100%-

এম.ডি.মুরাদ মৃধা, নাসিরনগর সংবাদদাতাঃপহেলা বৈশাখ উপলক্ষে জেলার নাসিরনগরের সদর ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামে অুনষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শুটকি মেলা ও বিনিময় প্রথা। গতকাল শনিবার ১৫ এপ্রিল গ্রামের শত শত মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিনিময়ে বিভিন্ন রকমের শুটকি কিনতে জড়ো হন এই মেলায়।
মুদ্রার প্রচলন হওয়ার আগে পৃথিবীর প্রায় সব স্থানেই ‘পণ্যের বিনিময়ে পণ্য’ প্রথা প্রচলিত ছিলো। এটাই জানা যায়  ইতিহাসের পাতা খুজে।এই ব্যতিক্রমধর্মী বিনিময় প্রথা দেখতে ও শুটকি কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে শত শত মানুষ। যার স্বাক্ষী ব্রাাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর সদর  উপজেলার কুলিকুন্ডা গ্রামের এক শুটকি মেলায়!

কুলিকুন্ডা গ্রামে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রতি বছর বসে ব্যতিক্রমধর্মী এ শুটকির মেলা। বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে স্থানীয় জেলেরা তাদের পূর্ব-পুরুষদের এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেলার আয়োজন করেন। স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমদানি করা শুটকি এ মেলায় বিনিময় প্রথায় বিক্রি করা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, এ মেলা আয়োজনের কোনো কমিটি নেই। প্রায় তিনশত বছরেরও বেশি সময় ধরে এ মেলা বসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুটকি ব্যবসায়ী ছাড়াও ভোজন রসিকরা আসেন এ মেলায়।  ‘পণ্যের বিনিময়ে পণ্য’- এ পদ্ধতিতে বিক্রি হয় শুটকি।

এ মেলার ইতিহাস প্রায় তিনশত বছরের পুরনো। কুলিকুন্ডা গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ কবির বলেন, ছোটবেলায় বাপ-দাদার হাত ধরে এ মেলায় এসেছি। শুনেছি তারও বহু আগে থেকে এ মেলা চলে আসছে।

স্থানীয় শুটকি ব্যবসায়ী সুবল দাস বলেন, স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত চাল, আলু, সরিষা, পেঁয়াজ  রসুন,আমসহ নানা পণ্যের বিনিময়ে শুটকি কিনে নেন। তবে, নগদ টাকার বিনিময়েও শুটকি কেনা-বেচা হয় বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় প্রায় একশর বেশি রকমের শুটকির পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এসব পসরায় বোয়াল, গজার, শোল, বাইন, পুঁটি,টাকী,কাইক্কা,ও টেংরাসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের তৈরি শুটকিই বেশি।

এছাড়া, মেলায় ইলিশসহ সামুদ্রিকসহ বিভিন্ন জাতের মাছের শুটকি পাওয়া যায়। শুটকি ছাড়াও ইলিশ ও কার্প জাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমও উঠেছে এ মেলায়।

মেলায় নাসিরনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে ব্যবসায়ীরা শুটকি নিয়ে আসেন। এসব শুটকির আকর্ষণে চট্টগ্রাম, সিলেট,ঢাকা,কুমিল্লা,কিশুরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ থেকে ভোজন রসিকরাও এ মেলায় শুটকি কিনতে আসেন।

মেলায় শুটকি কিনতে আসা চট্ট্রগ্রাম থেকে আসা মোঃ আইউন মিয়া বলেন, শুনেছি নাসিরনগরে দেশীয় প্রজাতির হাওয়রের মাছের শুটকি পাওয়া যায় তাই এ মেলায় শুটকি কিনতে আসি।
সুনামগঞ্জ থেকে আসা শুটকি বিক্রেতা অনিল দাস বলেন, গত প্রায় ১২ বছর ধরে এ মেলায় শুটকি নিয়ে আসি। তবে এবারে ক্রেতার গত বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। বিক্রিও ভাল।

এছাড়াও এ মেলায় বিক্রি হয় স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলস, ঝাঁঝর, থালা, ঘটি, বদনা, বাটি, পুতুল ও প্রদীপসহ অন্যান্য সামগ্রী। যা কিনা খুব সহজেই মেলায় আসা মানুষের নজর কাড়ে। গ্রামের কিশুরী-কিশুরীদের টাকা-পয়সা জমানোর জন্য নানা ডিজাইনের মাটির ব্যাংকও বিক্রি হয় এই মেলায়।
মেলা তদারকির দায়িত্বে থাকা কুলিকুন্ডা গ্রামের মুরুব্বি হাজী রেনু মিয়া জানান, এই মেলা সম্পূর্ণ ইজারা মুক্ত। দূর-দুরান্তের ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি করা হয়।






Shares