নাসিরনগরে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য বাড়ি দিলেন যুবক
নিজস্ব প্রতিবেদক:: ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত সাত পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন মার্জান ভূইয়া নামে এক যুবক। করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের থাকার জন্য ৪ জুন থেকে নিজের বাসার আটটি কক্ষ বিনা ভাড়া ছেড়ে দিয়েছেন ওই যুবক।
মার্জান ভূইয়া নাসিরনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের থানা রোডের নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ¯œাতক পাস করেছেন। করোনার কারণে বর্তমানে তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন। দেশের এই ক্রান্তিকালে দেশ ও জনগনের স্বার্থে নিজের বাসার আটটি কক্ষ ভাড়া না দিয়ে করোনায় আক্রান্তদের সেবায় উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মে করোনার পরীক্ষার জন্য নাসিরনগর থানার প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য নমুনা দেন। তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের মধ্যে ২ জুন ৪ পুলিশ সদস্যের করোনায় পজেটিভ হন। ৩ জুন পুুলিশের আরো দুই সদস্য ও ১২ জুন একজন পুলিশ সদস্য করোনায় পজিটিভ হন। পুলিশের সদস্যদের মধ্যে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দুজন যাদের বয়স যথাক্রমে ৩৫ ও ৩২ বছর। এছাড়া আরো পাঁচ জন কনস্টেবল করোনায় পজেটিভ হন। যাদের বয়স যত্রাক্রমে ২৩, ২৯, ৩২, ৫০ ও ৫২ বছর। পরে থানা কমপ্লেক্সের ভেতরে করোনায় আক্রান্তদের থাকা নিরাপদ না হওয়ায় বাইরে ব্যক্তি বাসা খোঁজা শুরু করতে থাকেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান। কোথাও কোনো বাসা পাননি তিনি। পরে উপজেলার মার্জানের সাথে যোগাযোগ করেন থানার ওসি। মার্জান সঙ্গে সঙ্গে বাসা দিতে রাজি হয়ে যান এবং তাদের জন্য বাসাটি ছেড়ে দেন। বাসা ভাড়ার বিষয়ে দরকষাকষি করতে চাইলে মারজান পুলিশ সদস্যদের জানান, দেশেই এই ক্রান্তিকালে করোনায় আক্রান্তদের সেবায় বাসা দিয়েছেন। এতে তিনি খুঁশি। আর এজন্য তাঁকে কোনো ভাড়া দিতে হবে না। মার্জানের চারতলা ভবনের তিন তলার ৮টি কক্ষে বর্তমানে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদরের থানা রোড এলাকায় মার্জানের পরিবারের চারতলা একটি বাড়ি আছে। বাড়িটির নিচ তলায় উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রির অস্থায়ী কার্যালয়, তৃতীয় তলায় গত কয়েক মাস আগেও চারটি পরিবার ভাড়ায় থাকতেন এবং ও দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন মার্জান। চার ভাড়াটিয়া পরিবার থেকে মাসে তিনি ২০হাজার টাকা পেতেন। কিন্তু কিছুদিন হলো তারা বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। তিন তলার এই আটটি কক্ষে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা আইসোলেশনে রয়েছেন। এ ছাড়াও ওই যুবক ব্যক্তিগত অর্থায়নের কর্মহীন, বেকার, দিনমুজুর ও খেটে খাওয়া প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারসামগ্রী বিতরণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।
মার্জান বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে সকল শ্রেণির মানুষই দিশেহারা। দেশের এই সংকটময় মূহুর্তে পুলিশ সদস্যদের সামান্য সেবা করতে পেরে আমি আনন্দিত। যতদিন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থাকবে ততদিন আমার এই বাড়িটি করোনায় আক্রান্ত মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
নাসিরনগর থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন জানান, নাসিরনগরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যখন মালয়েশিয়াপ্রবাসী মারা যায় তখন লাশ নেয়ার জন্য কোনো যানবাহন পাচ্ছিলামনা। তখন ওই যুবক রাত তিনটার সময় অন্যগ্রাম থেকে একটি ভ্যান ভাড়া করে আনেন। আজকে তিনি তাঁর চারতলা ভবনের তিনতলার আটটি কক্ষ আমাদের করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের বিনা ভাড়ায় দিয়েছেন। তার কাছে পুলিশ বিভাগ কৃতজ্ঞ।
উল্লেখ্য, নাসিরনগরে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী মারা যান। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে ১২ জন।