গোপনে দরপত্র আহবান :: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা পরিষদের জায়গা বন্দোবস্ত
ডেস্ক ২৪:: গোপনে ভাগাভাগি হয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খালপাড়ের ১৬০ ফুট জায়গা। প্রতি শতক জায়গার মূল্য ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। নামমাত্র ১ লাখ টাকার সেলামীর বিপরীতে ৮০ বর্গফুটের একেকটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, জেলা পরিষদ মালিকানাধীন ওই জায়গাটি একসনা বন্দোবস্ত পেয়েছেন জেলা পরিষদ প্রশাসক’র নিকটাত্মীয়, আ’লীগের একাধিক নেতা ও পরিষদের কর্মচারী। এদিকে খালপাড়ে একমাত্র রাস্তার পাশের ওই জায়গাটি বন্দোবস্ত দেয়ায় পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হবে এবং তীব্র যানজটের সৃষ্টি হবে বলে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে আপত্তি জানানো হয়। বাণিজ্যিক এলাকার ওই জায়গাটি পন্য উঠা-নামা, ট্রাক পার্কিংয়ের জন্যে বর্তমানে ব্যবহৃত হয়। অফিস সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর সিএস দাগ নং-২০৬২ এর ওই জায়গাটি প্লট আকারে বন্দোবস্ত পেতে আবেদন করেন ২০ জন। আবেদনগুলো মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়। তদন্ত সাপেক্ষে জায়গাটি বন্দোবস্ত দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। পরে দরপত্র আহবান করে জেলা পরিষদ। এই দরপত্র বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হয় নামসর্বস্ব পত্রিকায়। কেউ এমন পত্রিকা এবং বিজ্ঞাপন দেখেনি। জমি (প্লট) ইজারা বিজ্ঞপ্তি শিরোনামে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ মালিকানাধীন নিম্ন তপছিলোক্ত জায়গা সেলামীর মাধ্যমে বরাদ্দ প্রদানের জন্যে স্ক্যাচ ম্যাপ অনুযায়ী প্লট আকারে একসনা অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্দোবস্ত (নবায়নযোগ্য) প্রদানের উদ্দেশ্যে আগ্রহী ব্যাক্তিগনের নিকট থেকে জেলা পরিষদের নির্ধারিত ফরমে সীল মোহরকৃত খামে দরপত্র আহবান করা যাচ্ছে। দরপত্র সিডিউলের সঙ্গে সেলামীর সমুদয় টাকা যে কোন তফসিলী ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট পে-অর্ডার আকারে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র অনুকুলে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া বাৎসরিক লিজমানি জেলা পরিষদের নির্ধারিত রেইটে অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে। দরপত্র সিডিউল বিক্রয়ের শেষ দিন ছিল ৪ ফেব্রুয়ারী। দরপত্র জমার শেষ দিন ছিল ৫ ফেব্রুয়ারী। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এই দরপত্রটি পত্রিকায় প্রকাশের জন্যে পাঠানো হয় ১৩ জানুয়ারী। জেলা পরিষদের অফিস সহকারী আমির হোসেন জানান, বন্দোবস্ত পাওয়ার আবেদনকারী শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম গং। তিনি আরো জানান, আবেদনকারীরা জায়গা বন্দোবস্ত পায়নি। দরপত্র বাছাইয়ের পর বলা যাবে কারা পেয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিটি প্লট আগেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যারা পেয়েছেন তারা বিক্রিও করে দিয়েছেন। জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসকের ছেলে, ব্যাক্তিগত সহকারী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ও আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা ও জেলা পরিষদের এক কর্মচারীর নাম আলোচনা রয়েছে। তারা জায়গাটি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্যেই গোপন টেন্ডারের আয়োজন করে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আবদুল মান্নান বলেন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি বহুল প্রচারিত পত্রিকায় দেয়ার কথা। টেন্ডার কমিটি কি করেছে তা আমার জানা নেই। সচিব ভালো বলতে পারবেন। জেলা পরিষদের নেজারত শাখার অফিস সহকারী আমীর হোসেন দাবী করেন, ২০ টি দোকান বরাদ্দ পেতে ৮০ জন আবেদন করেন। বন্দোবস্তের ফাইল গোপনে পরিচালনা করেন। তথ্য চাইলে গড়িমসি শুরু করেন তিনি। আমির হোসেন নিজেও একটি প্লট পেয়েছেন বলে জেলা পরিষদ সূত্র জানায়। এদিকে গত ১১ ই ফেব্রুয়ারী জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতাসহ কমিটির কয়েকজন সদস্য জায়গাটি বন্দোবস্তের প্রতিবাদ করেন। শহরের টানবাজার, জগৎবাজার, সড়কবাজার, হকার্স মাকেটসহ অন্যান্য মার্কেটে সকল মালামাল বিশেষ করে সার, রড-সিমেন্ট, টিন ভর্তি গাড়ি এই সড়ক দিয়ে আসে যায়। বন্দোবস্তকৃত জায়গাটিতে এসব গাড়ি পার্কিং করে। এখন জায়গাটি বন্দোবস্ত দেয়া হলে এই সড়কে তীব্র যানজটসহ মালামাল পরিবহনের কোন সুযোগ থাকবেনা বলে ব্যবসায়ীরা জানান।