Main Menu

নগদ টাকা ও টিন পেয়ে উচ্ছ্বসিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টর্ণেডোয় নিহত পরিবারের সদস্যরা

+100%-

মনিরুজ্জামান পলাশ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ টর্ণেডোয় নিহত ৩৬ জনের প্রত্যেককে নগদ ৫০ হাজার করে টাকা এবং ৫ বান্ডিল ঢেউ টিন বিতরণ করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। শুক্রবার সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সম্মেলন কে নগদ টাকা ও টিন বিতরণ করা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের প্রধান উপদেষ্টা মাহবুব মোর্শেদ হাসান এই টিন ও টাকা নিহতদের পরিবারের হাতে তুলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা  গ্রুপের উপদেষ্টা (ট্রেজারার) এবং দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলী সানের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক নুর মোহমাম্মদ মজুমদার, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান পিপিএম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল হক ও খায়রুল আলম সুমন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাজ মোঃ ইয়াছিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসকাব সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রেজা ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন জামি, অ্যাডভোকেট মোফাক খাইরুল ইসলাম, বাংলা নিউজের স্টাফ রিপোর্টার ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন বেলাল, কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি বিশ্বজিত পাল বাবু, বাংলার চোখের প্রতিনিধি ও  ব্রাহ্মণবাড়িয়া টোয়েন্টি ফোর ডট কম এর প্রশাসক মনিরুজ্জামান পলাশ, সবুজ বাংলার জেলা প্রতিনিধি মজিবুর রহমান খান, একুশে টেলিভিশনের সংবাদদাতা, মীর মোঃ শাহীন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন বাসুদেব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেছার উদ্দিন শের শাহ। পরে বাসুদেব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে টিন দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার ওপর দিয়ে ভয়াবহ টর্নেডো আঘাত হানে। এতে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু। বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদি পশুসহ অবকাঠামোর ব্যাপক তি সাধন হয়।

প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের পরপরই দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা দুর্গতদের জন্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তিগ্রস্তদের মাঝে ৩০ টন চাল ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয় বসুন্ধরার প থেকে। সে সময় বসুন্ধরা  গ্রুপের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে আরও সাহায্যের উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নিহত প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা ও টিন বিতরণ করা হয়।

বাসুদেব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নগদ টাকা প্রদান অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা  গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের প্রধান উপদেষ্টা মাহবুব মোর্শেদ হাসান বলেন, এটি ছিল একটি বিরাট বিপর্যয়। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না। বসুন্ধরা  গ্রুপ ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে আসছে। বসুন্ধরা গ্রপের চেয়ারম্যানের নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তিনি আরো বলেন, নিজ জন্ম ভূমি ও মাটির দায় পরিশোধের জন্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার বলে বসুন্ধরা  গ্রুপ মনে করে। মহতী উদ্যোগের জন্য তিনি শোকরিয়া কামনা করে বসুন্ধরা  গ্রুপ যেন সমাজ ও দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে সে জন্য সকলের দোয়া চান।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া  গ্রুপের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, বসুন্ধরা  গ্রুপের চেয়ারম্যান খবরের কাগজ পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্যই এর আগে বসুন্ধরার পক্ষ থেকে তিনি আমাকে দুর্গত এলাকায় পাঠিয়েছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য বসুন্ধরার পক্ষ থেকে নানামুখী উন্নয়নের চিন্তা ভাবনা রয়েছে। সময় ও সুযোগ পেলে বসুন্ধরার চেয়ারম্যান এসব উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এর আগে ৩০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের এই ৫০ হাজার টাকা ও ৫ বান টিন দিয়ে নিহতদের পরিবারগুলো নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবেন।

জেলা প্রশাসক নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বসুন্ধরা  গ্রুপের সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে। পাশাপাশি আর্ত মানবতার সেবায় সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের বিপদে-আপদে বসুন্ধরা  গ্রুপ সবার আগে এগিয়ে এসেছে। তিনি আরো বলেন, টাকা এবং টিন পেয়ে নিহতদের পরিবার দুঃখের স্মৃতি ভুলে মনোবল শক্ত করে সুন্দরভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে।

জেলা পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে বসুন্ধরা  গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই।

নিহতদের পরিজনরা বসুন্ধরার ত্রাণ পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে। টর্ণেডোতে সদর উপজেলার জারুলতলা গ্রামের রেজিয়া বেগম হারিয়েছেন মা, ছোট মেয়ে ও বড় মেয়ের জামাতাকে। পরিবারের তিন সদস্যকে হারানোর পর বসুন্ধরার সহায়তায় ৫০ হাজার টাকা ও ৫ বান্ডিল টিন পেয়ে উচ্ছ্বাসিত রেজিয়া বেগম।

রেজিয়া বেগম বলেন, এই টিন দিয়ে বড় মেয়েটার জন্য ঘর তুলবেন। বাকী টাকা বড় মেয়ের চার মাসের মেয়ের জন্য জমা রেখে দেবেন। বসুন্ধরা এবং বসুন্ধরার প্রতিষ্ঠানের সফলতার জন্য দোয়া করেন পরিজন হারানো এই রেজিয়া বেগম।

সদর উপজেলার পাইকপাড়ার বাবরু মিয়া হারিয়েছেন একমাত্র উপার্জনম ছেলে মুফতি এমদাদ আলীকে (২৮)। যিনি শিক্ষকতা করতেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায়।

সাহায্য পেয়ে ছেলে হারানো আরেক বাবা পাইকপাড়ার খসরু মোল্লা বলেন, ছেলে হারানোর বেদনা ভুলতে পারব না, তবে বসুন্ধরা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে এজন্য প্রতিষ্ঠানটির জন্য দোয়া করবেন তিনি।






Shares