নাটকের সুবাদেই প্রেম-বিয়ে
‘ভুরু মিয়া’র গল্পের নায়িকা ছিল সিলেটের আলোচিত জুমা আক্তার। নাটকের নাম ছিল- ‘লন্ডনী ভাইসাব বিয়া কামলা-২’। একমাত্র নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জুমা আক্তারের প্রেমে পড়ে যান ভুরু মিয়া। নাটক থেকে জুমার সঙ্গে প্রেম শুরু হয় ভুরু মিয়ার। সেই প্রেম থেকে একপর্যায়ে বিয়ের পরিণয়। ভুরু মিয়া হিসেবেই জয়নাল আবেদীন পলাশকে চিনেন জুমার পরিবারের লোকজন। জয়নাল আবেদীন পলাশ ‘লন্ডনী ভাইসাব বিয়া কামলা-২’ নাটকের কাহিনীকার ও পরিচালকও। এই নাটকের সুবাদেই জয়নালের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে হয় জুমা আক্তারের। জুমাকে বিয়ের আগে ঘুণাক্ষরে তার পূর্বের একাধিক বিয়ের খবর পাননি জয়নাল। কিন্তু বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন জুমার একাধিক বিয়ে হয়েছে। এ কারণেই জুমার ওপর ক্ষুব্ধ হন জয়নাল। আর তাদের অন্ধকার জগতের ইতি ঘটাতে প্রতিবাদী হন তিনি। এমনকি নিজেও পুলিশের কাছে করেন অভিযোগ। বিশ্বনাথ
উপজেলার কামালবাজারের ছোট দীঘলি গ্রামের কাজিম উদ্দিনের ছেলে জয়নাল আবেদীন পলাশ জুমাকে নিজের স্ত্রী দাবি করে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে জয়নাল জানান, জুমা একাধিক বিয়ে গোপন রেখে তার মা ও ভাইয়ের পরামর্শে ২০১৫ সালের ২৩ শে জুন ৫ লাখ টাকা কাবিনে তার সঙ্গে বিয়ের কাবিন করে। এরপর তিনি নগরীর শেখঘাট শুভেচ্ছা-৮ নম্বর বাসায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে তারা বসবাস করেন। কিন্তু বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন জুমা বহুগামী মহিলা। তার সঙ্গে একাধিক পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে। এর আগে জুমার তিনটি বিয়ে হয়েছে। এরই মধ্যে জুমা ও তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন ভাবে তার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। একই সঙ্গে আড়াই লাখ টাকার ফার্নিচার ক্রয় করে আত্মসাৎ করে। প্রতারণা ও আত্মসাতের ঘটনায় এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানালে জুমা ও তার পরিবারের লোকজন ১লা নভেম্বর শেখঘাটের বাসা ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায় বলে জয়নাল তার আবেদনে উল্লেখ করেন। জয়নাল তার আবেদনে উল্লেখ করেছেন, তার প্রতারণার প্রতিবাদ করায় জুমা তাকে নারী নির্যাতন মামলায় আসামি করার হুমকি দেয়। একই সঙ্গে তার স্ত্রী থাকা অবস্থায় একাধিক পুরুষের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করে। জয়নাল আবেদীন পলাশ তার আবেদনে দুইটি বিয়ের কাবিন সংযুক্তি করেন। এবং তার প্রতারণামূলক বিয়ের ভুয়া দলিল উপস্থাপন করেন। জয়নাল আবেদীন পলাশের আবেদনে সুপারিশ করেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। এক আবেদনে জয়নাল জুমাকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করলেও জুমার বিরুদ্ধে তাসলিমা বেগম যে মামলা করেছেন সেটিতে স্বামীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাসলিমার মামলায় জুমার পিতার নাম হিসেবে আবদুল কাদির উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জয়নাল আবেদীন পলাশ গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জুমা প্রতারণা করে এই বিয়ে করেছে। সুতরাং তার বিয়ে কোনটি ঠিক তা বুঝার উপায় নেই। তিনি জানান, জুমার বিরুদ্ধে তিনি সিলেটের পুলিশ কমিশনারের কাছে যে অভিযোগ দিয়েছেন সেটি উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় হয়ে এখন কোতোয়ালী থানাতে রয়েছে। কোতোয়ালী পুলিশ এখন সেই অভিযোগের তদন্ত করছে। এদিকে, গতকাল কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি দল জুমার বাসা পরিদর্শন করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, জয়নালের অভিযোগের সত্যতা জানতে তারা বিষয়টির তদন্ত করছেন। ২১শে ডিসেম্বর জুমা আক্তার গ্রেপ্তারের দিন মানবজমিনের এ প্রতিবেদকের কাছে এসেছিলেন কারাগারে থাকা জুমা আক্তারের পিতা আবদুল কাদির। ওই দিন তিনি অভিযোগ করেছিলেন জয়নাল আবেদীন পলাশের বিরুদ্ধে। তবে, ‘জয়নাল আবেদীন পলাশ নামে তিনি তাকে চিনতেন না। চিনতেন ভুরু মিয়া নামে। বয়োবৃদ্ধ আবদুল কাদির জানান, জয়নাল ‘ভুরু মিয়া’ নামে নাটকে অভিনয় করার কারণে এ নামেই তাকে চিনি আমরা।’ তবে, তিনি বলেন, জুমার পূর্বের স্বামী আছে সেটি জানতো জয়নাল। এরপর জয়নালের প্ররোচনায় জুমা তার পূর্বের স্বামীকে ডিভোর্স দেয়। এমনকি মামলাও দেয়। কিন্তু জয়নাল ওই সময় জুমাকে লন্ডনে নেয়ার লোভ দেখানোর কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন আবদুল কাদির। তবে, জয়নাল জুমার পিতার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ওদের গোটা পরিবারই প্রতারক। মেয়েকে একাধিক বিয়ে দিয়ে টাকা লুফে নেয়ায়ই ওদের পেশা। যে কারণে পুত্রবধূ তাসলিমা তাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানোর অভিযোগে মামলা করেছেন।