ইমাম মাহদী কে? কি তার পরিচয়???
প্রশ্নঃ- ইমাম মাহদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তরঃ-
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ কিয়ামতের সর্বপ্রথম বড় আলামত। তিনি আগমণ করে এই উম্মাতের নের্তৃত্বের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। ইসলাম ধর্মকে সংস্কার করবেন এবং ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। মুসলিম উম্মাহ তাঁর আমলে বিরাট কল্যাণের ভিতর থাকবে।
নাম ও পরিচিতি:
উনার নাম রাসূলুল্লাহ (সা) এর নামের অনুরূপ হবে । যেমন- মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হাসানী। বংশ পরম্পরায় হাসান বিন আলী (রা পর্যন্ত পৌছবে। ইবনে মাসউদ (রা থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা বলেন: পৃথিবী জীবন সায়াহ্নে যদি একটি মাত্র দিন অবশিষ্ট থাকে, তবে সেই দিনটিকে আল্লাহ্ দীর্ঘ করে আমার পরিবারস্থ একজন ব্যক্তিকে প্রেরণ করে ছাড়বেন, তাঁর নাম আমার নাম এবং তাঁর পিতার নাম আমার পিতার নাম সদৃশ হবে…[তিরমিযী, আবু দাউদ]ইবনে কাসির বলেনঃ “তিনি হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-ফাতেমী আল-হাসানী”।
তাঁর আগমণের স্থানঃ
তিনি পূর্বের কোন একটি অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হবেন। পূর্ব দিক বলতে মদীনা মুনাওয়ারা হতে পূর্বের দিক বুঝানো হয়েছে। নবী (সা) বলেনঃ “তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক থেকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালাবে… তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়আত করবে। যদি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়, তারপরেও তোমরা আসবে। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী।”
শিয়ারা ১২ ইমামে বিশ্বাসী। তারা বলে থাকে ১২তম ইমাম হবেন ইমাম মাহদি আর তাঁর জন্ম হয়ে গেছে 869 সালে। বলা হয়, তিনি আত্মগোপনে চলে যান আর ভবিষ্যতে আবার আসবেন আর মুসলিম জাতির নেতা হবেন। অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে মাহদি ১২০০ বছর ধরে এখন বেঁচে আছেন। ব্যাপারটা যে অতিকল্পনা সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না। এটা গুরুত্বপূর্ণ না, যে, নবীজীর ১২তম বংশধর মাহদি হবেন, বরং, এ ধারা থেকে মাহদি আসবেন এটাই বিশ্বাসযোগ্য। তবে সময় আসলে সবই পরিস্কার হয়ে যাবে। শিয়ারা এতাও দাবি করে মাহদি একটা গর্তে লুকিয়ে আছেন।
ইমাম ইবনে কাসির বলেনঃ “উল্লেখিত হাদীসে যে ধন-ভান্ডারের কথা বলা হয়েছে তা হল কা’বা ঘরের ধন-ভান্ডার। তিনজন খলীফার পুত্র তা দখল করার জন্য ঝগড়া করবে। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। সর্বশেষে আখেরী যামানায় পূর্বের কোন একটি দেশ হতে মাহদী আগমণ করবেন। মূর্খ শিয়ারা সামেরার গর্ত হতে ইমাম মাহদী বের হওয়ার যে দাবী করে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা আরো দাবী করে যে তিনি গর্তের মাঝে লুকায়িত আছেন। শিয়াদের একটি দল প্রতিদিন সে গর্তের কাছে দাঁড়িয়ে আপেক্ষা করে। এ ধরণের আরো অনেক হাস্যকর কাল্পনিক ঘটনা বর্ণিত আছে। এসমস্ত কথার পক্ষে কোন দলীল নেই; বরং কুরআন, হাদীছ এবং বিবেক বহির্ভূত কথা। তিনি আরো বলেনঃ পূর্বাঞ্চলের লোকেরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং তাঁর শাসনকে সমর্থন করবে। তাঁরা কালো পতাকাধারী হবেন। মোটকথা আখেরী যামানায় পূর্বদেশ হতে তাঁর বের হওয়া সত্য। কা’বা ঘরের পাশে তাঁর জন্যে বায়আত করা হবে।”
মাহদী আগমণের রেফারেন্স :
ইমাম মাহদীর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। কোন কোন হাদীছে প্রকাশ্যভাবে তাঁর নাম উল্লেখ আছে। আবার কোন কোন হাদীছে তাঁর গুণাগুণ উল্লেখিত হয়েছে। তাঁর আগমণ সত্য হওয়ার জন্য এ সমস্ত হাদীছই যথেষ্ট।
১) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সা) হতে বর্ণনা করেন, “আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদীর সম্মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বছর কিংবা আট বছর জীবিত থাকবেন।
২) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত আছে, নবী (সা) বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি। মানুষেরা যখন মতবিরোধে লিপ্ত হবে তখন তিনি প্রেরিত হবেন। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। আকাশ-যমিনের সকল অধিবাসী তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন।
৩) নবী (সা) বলেনঃ “মাহদী আসবেন আমার বংশধর হতে। তাঁর কপাল হবে উজ্জল এবং নাক হবে উঁচু। পৃথিবী হতে জুলুম-নির্যাতন দূর করে দিয়ে ন্যায়-ইনসাফ দ্বারা তা ভরে দিবেন। সাত বছর পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করবেন।
৪) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ “আমি রাসূল (সা)কে বলতে শুনেছিঃ মাহদীর আগমণ হবে আমার পরিবারের ফাতেমার বংশধর হতে।”
৫) জাবের (রাঃ) বলেনঃ রাসূল (সা) বলেছেনঃ ঈসা (আঃ) যখন অবতরণ করবেন তখন মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেনঃ আসুন! আমাদের নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন।
৬) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূল (সা) হতে বর্ণনা করেনঃ “ঈসা ইবনে মারইয়াম যেই ইমামের পিছনে নামায পড়বেন তিনি হবেন আমাদের মধ্যে হতে।”
৭) নবী (সা) বলেনঃ “ততদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা যতদিন না আমার পরিবারের একজন লোক আরবদের বাদশা হবেন। তাঁর নাম হবে আমার নামে এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের অনুরূপমুমিন। অর্থাৎ তাঁর নাম হবে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ।”
৮) উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ নবী (সা) বলেছেনঃ “কা’বা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। উম্মে সালামা বলেনঃ আমি রাসূল (সা)কে জিজ্ঞেস করলাম অপছন্দ সত্ত্বেও যারা তাদের সাথে যাবে তাদের অবস্থা কি হবে? উত্তরে নবী (সা) বললেনঃ তাকে সহ যমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের উপরে পুনরুত্থিত হবে।
৯) হাফসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেনঃ “অচিরেই এই ঘরের অর্থাৎ কা’বা ঘরের পাশে একদল লোক আশ্রয় গ্রহণ করবে। শত্রুর সাথে মোকাবেলা করার মত তাদের কোন উল্লেখযোগ্য সৈনিক কিংবা অস্ত্র-শস্ত্র বা প্রস্তুতি থাকবেনা। তাদেরকে হত্যা করার জন্য একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন ‘বায়দা’ নামক স্থানে পৌঁছবে তখন যমিন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে।
১০) আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাসূল (সা) ঘুমের ঘোরে এলোমেলো কিছু কাজ করলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ জাগ্রত হলে আমরা তাঁকে বললামঃ ঘুমের মধ্যে আপনি আজ এমন কিছু কাজ করেছেন যা অতীতে কখনও করেন নি। তিনি বললেনঃ আমার উম্মাতের একদল লোক কাবার পাশে আশ্রয় গ্রহণকারী কুরাইশ বংশের একজন লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। তারা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে যমিন ধসে যাবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তখন তো রাস্তায় বিভিন্ন ধরণের লোক থাকবে। নবী (সা) বললেনঃ তাদের ভিতর এমন লোক থাকবে যারা নিজেদেরকে গোমরাহ জেনেও বের হবে, কাউকে বল প্রয়োগ করে আনা হবে এবং তাদের মধ্যে মুসাফিরও থাকবে। তারা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে সকলকেই আল্লাহ তা’আলা নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করবেন।
তাদেরকে নিয়তের উপর পুনরুত্থিত করার অর্থ তাদের কেউ জান্নাতে যাবে আবার কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। যারা নিজেদের ভ্রান্ত জেনেও উক্ত ইমামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হবে তারা জাহান্নামী হবে। আর যাদেরকে বাধ্য করে আনা হবে তাদের কোন অপরাধ হবেনা। এমনিভাবে পথিক ও পার্শ্ববর্তী স্থানের লোকেরাও উক্ত ভূমিধস থেকে রেহাই পাবেনা। কিন্তু সকল শ্রেণীর লোক নিজ নিজ আমল নিয়ে পুনরুত্থিত হবে।
উপরের তিনটি হাদীছ থেকে জানা গেল যেই লোকটি কা’বার প্রান্তে আশ্রয় গ্রহণ করবেন তিনি হবেন কুরাইশ বংশের অন্তর্ভূক্ত। তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হবেন এবং তাঁর শত্রুদেরকে ভূমিধসের মাধ্যমে ধ্বংস করবেন।
# উম্মুল মুমেনীন উম্মে সালামা (রা থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা বলেন- জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র বিরোধ সৃষ্টি হবে। মদিনার একজন লোক তখন পালিয়ে মক্কায় চলে আসবে। মক্কার লোকেরা তাকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্তেও রুকন এবং মাক্কামে ইবরাহীমের মাঝামাঝি স্থানে বায়াআত গ্রহণ করবে। বায়াআতের খবর শুনে শামের দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা-মদিনার মাঝামাঝি বায়দা প্রান্তরে তাদেরকে মাটির নিচে ধ্বসে দেয়া হবে। বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে শাম ও ইরাকের শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ মক্কায় এসে রুকন ও মাক্কামে ইবরাহীমের মাঝামাঝি তাঁর হাতে বায়াআত গ্রহণ করবে। অতঃপর বনু কালব সম্বন্ধীয় এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। শামের দিকে থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। মক্কার নব উত্থিত মুসলিম বাহিনী তাদের উপর বিজয়ী হয়ে প্রচুর যুদ্ধলদ্ধ সম্পদ অর্জন করবে। সেদিন বনু কালবের সর্বনাশ ঘটবে। যে বনু কালব থেকে অর্জিত সম্পদ প্রত্যক্ষ করেনি, সেই প্রকৃত বঞ্চিত। অতঃপর মানুষের মাঝে তিনি সম্পদ বণ্টন করবেন। নববী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাবেন। উট যেমন প্রশান্তচিত্তে গলা বিছিয়ে আরাম পায়, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ইসলামও সেদিন ভূ-পৃষ্ঠে প্রশান্তচিত্তে স্থির পাবে। সাত বৎসর এভাবে রাজত্ব করে তিনি ইন্তেকাল করবেন, মুসলমানগণ তার জানায়ায় শরীক হবে…[আবু দাউদ]
বুখারী ও মুসলিম শরীফে ইমাম মাহদী সম্পর্কিত কিছু হাদীছঃ
১) নবী (সা) বলেনঃ “সেদিন কেমন হবে তোমাদের অবস্থা যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারইয়াম নেমে আসবেন এবং তোমাদের মধ্যে হতেই একজন ইমাম হবেনমুমিন। অর্থাৎ তোমাদের সাথে জামা’তে শরীক হয়ে ঈসা (আঃ) তোমাদের ইমামের পিছনে নামায আদায় করবেন।
২) জাবের (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল (সা)কে বলতে শুনেছি, “আমার উম্মাতের একটি দল হকের উপর বিজয়ী থেকে কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই করতে থাকবে। অতঃপর ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন। তাকে দেখে মুসলমানদের আমীর বলবেনঃ আসুন! আমাদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করুন। ঈসা (আঃ) বলবেনঃ না; বরং তোমাদের আমীর তোমাদের মধ্যে হতেই। এই উম্মাতের সম্মানের কারণেই তিনি এ মন্তব্য করবেন।
৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের মধ্যে একজন খলীফা হবেন যিনি মানুষের মধ্যে মুক্ত হস্তে অগণিতভাবে ধন-সম্পদ বিতরণ করবেন।”
২৬ জন সাহাবী থেকে মাহদীর আগমণ সম্পর্কিত হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে। ৩৬টি হাদীস গ্রন্থে এ সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, ইমাম মাহদীর আগমণে বিশ্বাস স্থাপন করা ওয়াজিব। কারণ তাঁর আগমণের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) যখন আকাশ থেকে অবতরণ করবেন তখন ইমাম মাহদী মুসলমানদেরকে নিয়ে নামাযের ইমামতি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকবেন। এমন সময় ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে আগমণ করবেন। ইমাম মাহদী ঈসা (আঃ)কে দেখে বলবেনঃ সামনে অগ্রসর হোন এবং আমাদের ইমামতি করুন। হাদীছের ভাষ্য অনুযায়ী আরো জানা যায় যে, ইমাম মাহদীর সময় মুসলমানদের ঈমান ও শক্তি ধ্বংস করার জন্য দাজ্জালের আগমণ ঘটবে। দাজ্জালের মোকাবেলা করার জন্য আল্লাহ তা’আলা ঈসা (আঃ)কে পাঠাবেন। ইমাম মাহদীও তাঁর সাথে মিলিত হয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাকে এবং তার বাহিনীকে খতম করে মুসলমানদেরকে দাজ্জালের ফিতনা হতে মুক্ত করবেন।
তিনি দেখতে কেমন হবেন, সে বিষয়ে হাদিসে বলা আছেঃ
# ইমাম মাহদির কপাল হবে প্রশস্ত। খাড়া নাক। তাঁর ডান গালে একটা তিল থাকবে। {আবু দাউদ}
একটি ব্যতিক্রমী কথা পাওয়া যায় হজরত মুহাম্মাদ (স) এর ৫ম সরাসরি বংশধর মুহাম্মাদ আল বাকির (রাহ) এর কাছ থেকে। তিনি বলেন, “ইমাম মাহদি (ইসরাইলের) আন্তিয়খ (Antioch) শহরের এক গুহা থেকে তাওরাতের আসল লিপি উদ্ধার করবেন, আর সাথে সাথে অন্যান্য আসমানি কিতাব উদ্ধার করবেন। তিনি ইহুদীদের বিচার করবেন তাওরাত মতে, খ্রিস্টানদের করবেন ইঞ্জিল মতে, আর মুসলিমদের করবেন কুরআন মতে।”
জাফর সাদিক (রাহ) বলেন, “মাহদির সেনাবাহিনীতে থাকবে ১৩ জন নারী। তারা অসুস্থদের আর আহতদের সেবা করবে।” {সাদিনাতুল বিহার, ২/৪৪৬}
কাদিয়ানিরা বলে থাকে, তাদের শেষ নবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানি হল ঈসা (আ) এর দ্বিতীয় (রূপক) আগমন এবং তিনিই আসলে মাহদি। গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ঊনবিংশ শতকে নিজেই মাহদি দাবি করেন। উল্লেখ্য, পাকিস্তান সরকার তাকে আর তাঁর অনুসারীদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে।
মুহাম্মাদ আল বাকির (রাহ) বলেন, “মাহদির আগমনের চিহ্ন, পহেলা রমজানে চন্দ্রগ্রহণ হবে আর সেই একই রমজানের অর্ধেকে গিয়ে সূর্যগ্রহণ হবে।”
মাহদি সম্পর্কে আরেকটি ইন্টারেস্টিং টপিক যেটা রয়েছে সেটা হল Ark of The Covenant, শরিয়ত সিন্দুক। সোনায় তৈরি এ সিন্দুক এর কথা কুরানের সুরা বাকারার ২৪৮ নং আয়াতে বলা আছে। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এ Ark খুঁজে বের করার অনেক চেষ্টা করছেন। এবং এ সঙ্ক্রান্ত যত টেক্সট রেফারেন্স আছে, হোক বাইবেল হোক কুরআন হোক যেকোনো হাদিস, সব একত্র করার চেষ্টা করেছেন।
হারুন ইয়াহিয়া এ সিন্দুক আর মাহদির ব্যাপারে আলোকপাত করেছেন। সিন্দুকের স্পেসালিটি হল, এ সিন্দুক ছিল বনি ইসরাইলের জন্য নিয়ামত। একটি আশীর্বাদ। যতদিন সিন্দুক ইসরাইলের দখলে ছিল ততদিন তারা ছিল বিজয়ী জাতি। সেটা তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবার পর দাস জাতিতে পরিণত হয় ইসরায়েল। কথিত আছে, যে বাহিনীর বা জাতির কাছে সিন্দুকটি থাকবে তারা হবে অজেয়।
এক করা সেসব টেক্সটের মধ্যে আছে,
“ইমাম মাহদি শেষ সময়ে সেই সিন্দুক উদ্ধার করবেন।” {সুয়ুতি}
অন্য কোন টেক্সটে ark এর লোকেশন এর কথা জানা না গেলেও, “হাদিস”খ্যাত টেক্সটগুলোতে এর লোকেশন বলা হয়েছে। ark উদ্ধার হবে সেই Antioch শহরের কোন এক জায়গা থেকে বা Tiberius হ্রদের কাছ থেকে।
এসব সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন।
আরেকটা ব্যাপার, “ইমাম মাহদির জন্ম হয়ে গেছে” এমন কথা অনেকে ছড়িয়ে থাকেন; honest answer হবে, এটা জানার কোন উপায় আমাদের নেই। তিনি যখন নিজেকে আত্মপ্রকাশ করবেন তখনই কেবল আমরা জানতে পারব। এর আগে না।
একটা বিষয় না বললেই নয়, অনেকে মনে করে, মাহদি বুঝি একটি নাম, আসলে তা না। মাহদি উপাধি। মাহদি বলতে বুঝায়, যিনি সঠিক পথে আছেন আর যিনি মানুষকে সঠিক পথে guide করেন। মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ সে কাজটি করবেন আর এজন্য তাঁকে মাহদি বলা হবে।
শেষ কথা, ইমাম মাহদি ৫ বছর মতান্তরে ৭ বছর মতান্তরে ৯ বছর শাসন করে মৃত্যু বরণ করবেন।
আশা করি ইমাম মাহদি সম্পর্কে জানাতে পারলাম।