Main Menu

নবীনগরের চরকেদারখোলা থেকে বালু উত্তোলনে স্থগিতাদেশ

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম চরকেদার খোলা বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন কার্যক্রম স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এই বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েও রুল জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে পশ্চিম কেদার খোলা বালু মহাল ইজারা বাতিল ছাড়াও বালু মহাল বিলুপ্তকরণ, বালু মহাল সংলগ্ন এলাকার নদী ভাঙন রোধ ও বসতভিটা সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া চিঠি নিষ্পত্তির আদেশও দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আজ আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওই এলাকার গোলাম কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তি এই রিট করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ডিসিসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

সবশেষ মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত এই আদেশ দিলেন। রিটকারী নিজেই আদেশের বিষয়টি ঢাকা মেইলকে নিশ্চিত করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর এ বিষয়ে জাতীয় একটি দৈনিকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ইজারার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মেঘনা নদীতে ফ্রি-স্টাইলে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। প্রতিদিন প্রায় ২০টি ড্রেজার দিয়ে নদীর চর ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এমনকি সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে মেঘনা চরের ফসলি জমি পর্যন্ত কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে করে চরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি তীরবর্তী চরলালপুর গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার চরলালপুর ও নবীনগর উপজেলার চর কেদারখোলা দুটি বালু মহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। দুটি বালু মহালেরই ইজারা পেয়েছেন মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং সার্ভিস। যার স্বত্বাধিকারী পার্শ্ববর্তী ভৈরব উপজেলার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন মিন্টু।

পরে চরলালপুর বালু মহালের ইজারামূল্য জমা দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার। কিন্তু দুই-এক দিন যেতে না যেতেই ইজারায় উল্লিখিত এলাকা থেকে তারা বালু উত্তোলন না করে উত্তোলন খরচ কমাতে এবং অতিরিক্ত বালু পাওয়ার লোভে নদীর চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার। এমনকি সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে তারা মেঘনা চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নিতে থাকে। এতে করে সংশ্লিষ্ট জমির বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়া ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে ফেলার কারণে চরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে নদীর তীরবর্তী চরলালপুর গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয় গ্রামবাসীর মনে।

প্রতিবেদনে ভূমিহীন চাষি ও গ্রামবাসীদের বরাতে আরও জানানো হয়, ইজারা পেয়ে বালু উত্তোলন শুরু করার পর মাত্র দুই-এক দিন তাদের সীমানায় বালু উত্তোলন করা হয়। এরপর থেকেই তারা (ইজারাদার) চর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করতে থাকে এবং রাতবিরাতে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যায়। গ্রামবাসী চরে উপস্থিত হলে ড্রেজার ভাসিয়ে দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। চর ঘেঁষে মাটি কাটতে নিষেধ করায় ইজারাদারের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে ভূমিহীন কৃষকদের।

চরে বন্দোবস্ত পাওয়া কয়েকজন ভূমিহীন কৃষকের বরাতে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তাদের প্রায় ৫ একর (১৫০ শতাংশ) জমির মাটি কেটে নদীতে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে। যেসব জমিতে প্রতিবছর ধান, গম, কাউন, মিষ্টি আলো, তরমুজ ও সরিষাসহ নানা জাতের ফসল উৎপাদন হতো। এসব জমির এখন আর অস্তিত্ব নেই। এসব জমির ওপর তাদের জীবিকা নির্ভর ছিল এবং বর্ষা মৌসুম শেষে তারা জমিতে ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখছিল। ফলে অবিলম্বে চর ঘেঁষে মাটি কাটা বন্ধ করাসহ জমির ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন কৃষকরা।

এদিকে, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ভুক্তভোগী কৃষকরা আদালতের শরণাপন্ন হলে বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে অ্যাডভোকেট কমিশন গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে কমিশনের অ্যাডভোকেট রুহুল বাসার খান জসীম সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওই সময় লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোরশেদ মাস্টার ও ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সৈয়দ ইব্রাহীম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে আদালত গঠিত কমিশনের অ্যাডভোকেট রুহুল বাসার খান জসীম খান গণমাধ্যমকে বলেন, বালু মহালের সীমানা অতিক্রম করে ইজারাদার চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। আমি সরেজমিনে যা দেখেছি তাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করব।

এছাড়া ইউনিয়নের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সৈয়দ ইব্রাহীম আহমেদ বলেন, বালু মহালের সীমানা অতিক্রম করে ইজারাদার কর্তৃক চরের ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে এবং শিগগিরই সার্ভে করে বালু মহালের সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

তবে বালু মহালের ইজারাদার মেসার্স মৌসুমী ড্রেজিং সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন মিন্টু গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, আমরা ড্রেজারগুলোকে আমাদের নির্ধারিত সীমানার মধ্যে থাকার নির্দেশ দিয়েছি। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ইজারা নিয়েছি। কারও ক্ষতি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।

সার্বিক বিষয়ে আশুগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী তাহমিনা সারমিন বলেন, ইজারাদাকে বালু মহালের নির্ধারিত সীমানার মধ্যে বালু উত্তোলনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সীমানা নিশান লাগিয়ে দেওয়া হবে। কোনো ফসলি জমির ক্ষতি হয়ে থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে।