Main Menu

পার্শ্ববর্তী এক ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি

নবীনগরে মোবারকের পা কেটে আনন্দ মিছিল ও হত্যার ঘটনায় ১৫২ জনকে আসামি করে মামলা।

+100%-

মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও এলাকার সর্দার কাউছার মোল্লার সশস্ত্র লোকজনের মধ্যে পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত ১২ এপ্রিল দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত লোক আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে কাউছার মোল্লার পক্ষের লোকজন পৈশাচিকভাবে প্রতিপক্ষের রিকশাচালক মোবারক মিয়ার (৪৫) একটি পা কেটে কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে। পরে ওই পা হাতে নিয়ে গ্রামে ‘জয় বাংলা বলে আনন্দ মিছিল’ করে দাঙ্গাবাজরা। গুরুতর আহত মোবারক চার দিন পর গত ১৫ এপ্রিল মারা যান। এ ঘটনায় অবশেষে ১৫২ জনকে আসামি করে নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনার ছয় দিন পর শুক্রবার রাতে নিহতের চাচাতো ভাই চাঁন মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
তবে এ হত্যা মামলায় পার্শ্ববর্তী বীরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহমেদকে ‘প্রধান আসামি’ করা হলেও আলোচিত এ মামলায় বিবাদমান দুই গ্রুপের একটি গ্রুপের দলনেতা কাউছার মোল্লাকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু কাউছারকেও এ মামলায় ৩ নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০ জনকে মামলায় আসামি দেখানো হয়।

জানা যায়,উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি গ্রামে দাঙ্গাবাজরা মোবারকের বাম পা গোড়ালীর ওপরের অংশ থেকে কুপিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর কাটা পা হাতে নিয়ে আনন্দ মিছিল করে। এসময় ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দেয় দাঙ্গায় জড়িত এই নরপশুরা। পরিবারের লোকজন জানান- তার ডান পা-ও কুপিয়ে আলাদা করার চেষ্টা হয়। দুই হাত এবং পিঠে রয়েছে আরো অনেক কোপের ক্ষত।১২ এপ্রিল রোববার সংগঠিত লোমহর্ষক বর্বর এ ঘটনায় জড়িত ক’জনের নাম ঘটনার পরপরই প্রকাশ করেন মোবারক। তারা হচ্ছেন থানাকান্দি হাতবাড়ি গ্রামের সিরাজের ছেলে খোকন, হাজিরহাটি গ্রামের মাঈনুদ্দিনের ছেলে রুমান, ,জিল্লুরের ছেলে শাহিন ও মালির ছেলে জাবেদ। পা কেটে নেয়ার পরপরই গুরুতর আহত অবস্থায় ঘটনায় জড়িত এই ক’জনের নাম প্রকাশ করে নিহত মোবারক। বাকীদের সে চিনতে পারেনি বলে জানায়। তার এই বক্তব্য কেউ মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে। মিছিলে কাটা পা ছিলো গৌরনগর গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে আনোয়ারের হাতে। স্থানীয়রা জানিয়েছে সে সিলেটে কাপড়ের ব্যবসা করে। করোনা পরিস্থিতির কারনে বাড়িতে এসেছিলো সে।
এদিকে দেখা যায়, ঘটনার ছয় দিন পর দায়ের হওয়া বহুল আলোচিত এ মামলায় অন্য একটি ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যানকে ‘প্রধান আসামি’ করায় এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার ঝড় ওঠেছে।
এ বিষয়ে প্রধান আসামি পাশ্ববর্তী বীরগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান কবির আহমেদ বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। মূলত আমি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি বাদল ভাইয়ের আদর্শের রাজনীতি করি বিধায় বর্তমান এমপি বুলবুল সাহেব আমাকে হয়রানি করতেই পার্শ্ববর্তী একটি ইউনিয়নে সংঘটিত একটি খুনের ঘটনায় সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র করে আমাকে মামলায় প্রধান আসামি করিয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল বলেন, বাদী মামলায় কাকে আসামি করবে, সেটিতো সম্পূর্ণ বাদীর এখতিয়ার। এ ছাড়া মামলায় আসামি হলেই যে তিনি দোষী হবেন, তদন্তে সেটি প্রমাণিত না-ওতো হতে পারে। আমি পুলিশকে সাফ বলে দিয়েছি, এ মামলায় যেন কোনো নির্দোষ লোক অযথা হয়রানির শিকার না হয়। তবে এ ঘটনার সাথে যেসব রাঘব-বোয়ালরা জড়িত আছে, তাদেরকে খুঁজে বের করতে পুলিশকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মকবুল হোসেন বলেন, ১৫২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও তদন্তে এজাহারভুক্ত কারো সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে, কাউকেই ন্যুনতম হয়রানি করা হবে না। তিনি জানান, এর মধ্যে ২ নম্বর আসামিসহ এ মামলার এজাহারভুক্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, নিহত মোবারক গ্রামের কোন ঝগড়া-দলাদলিতে ছিলেননা বলেও জানান তার স্ত্রী।। তার জন্ম এবং বিয়েশাদী সব ঢাকাতেই। বছর চারেক আগে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে আসেন মোবারক। কিন্তু গ্রামের দাঙ্গা পরিস্থিতির কারনে এরমধ্যে দেড়বছর শ্বশুর বাড়িতে কাটাতে হয় তাকে । পরে আবার ঢাকায় চলে যান রিকসা চালাতে। করোনা পরিস্থিতির কারনে বাড়িতে এসেছিলো সে । স্থানীয়রা জানান,ঘটনার পরপর মোবারককে প্রথমে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেখানে চিকিৎসাধীন অস্থায় সে মারা যায়।

তবে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে দু-পক্ষের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও কাউসার মোল্লাসহ ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কৃষ্ণনগরে ওই সংঘর্ষে অর্ধশত লোক আহত হয়। বাড়িঘর ভাঙ্গচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়।






Shares