চলে গেলেন নবীনগর আওয়ামীলীগ নেতা প্রদীপ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি: গত আট বছর আগে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের পর পপুলার হাসপাতালে এক বছর চিকিৎসা নিয়ে টাকার অভাবে বাড়িতে বিছানায় পড়ে ছিলেন নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য। গত ১৭ জুন বুধবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তিনি নবীনগর পৌর এলাকার কোর্ট রোডে অবস্থিত তার নিজ বাড়িতে পরলোক গমন করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী,এক ছেলে, এক মেয়ে সহ অনেক শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
প্রদীপ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে থেকে ছাত্রজীবনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ছাত্র অবস্থায় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহন করেছেন। ছাত্রলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে তিনি নবীনগর ছাত্র সংসদে ভিপি পদে নির্বাচন করেন। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করলেও তিনি দির্ঘদিন উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক ছিলেন। পরে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সমাজকল্যান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি নবীনগর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি,বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও নবীনগর শ্রী শ্রী কালিবাড়ির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন সুনামের সহিত। প্রদীপ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য নবীনগর উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় উপজেলার বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সুখে-দুঃখে পাসে দাড়িয়েছেন। তিনি কোট রোডে অবস্থীত দোল মন্দীরের জায়গাটিও দখল বাজদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটাতে তিনি বিমান বাহিনীতে চাকরি পান। রাজনীতি মনে প্রাণে মিশে যাওয়ায় তিনি সেই চাকরিও ছেড়ে দিয়ে নবীনগরে ফিরে এসে রাজনীতে সক্রিয় হন।
দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও নীতি ও আদর্শের সাথে আপোষ করেননি। কোনোদিন পদপদবির দাপট দেখিয়ে কোনো রকম অনৈতিক কাজ করেননি। তাই তৎকালীন আওয়ামীলীগের সকল নেতাকর্মীরা অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। তাদের যুগের আওয়ামীলীগকে নবীনগরের আওয়ামীলীগের স্বর্ণযুগ আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।
এ নেতা অসুস্থ হওয়ার পর দলীয় নেতাকর্মীরা তার কোনো খোঁজ-খবর রাখেননি। তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহপাঠি ও সুখ দুঃখের সারথী ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মরহুম মাহাবুবুর রহমান।
প্রদীপ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য ছোট ভাই নবীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কান্তি কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, আমার ভাই নবীনগর আওয়ামীলীগকে অনেক সময় দিয়েছেন কিন্তু তার শেষ বিদায়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের কোন নেতাই তার পাশে ছিলেন না। তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েও কোন নেতাও তার লাশ দেখতে আসেন নি।
নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এড.সুজিত কুমার দেব জানান, বর্তমান আওয়ামীলীগের সভাপতি সহ অনেক নেতারা উনার সমন্ধে জানেন না। তিনি নবীনগর আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের পাশে ছিলেন।
প্রদীপ রঞ্জন ভট্টাচার্য্য মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন নবীনগর উপজেলার রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রবিণ নেত্রীবৃন্দ।