নবীনগরে মেঘনার ভাঙনের কবলে কয়েকটি গ্রাম, দুই গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন
মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর প্রতিনিধি:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ও শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ৫০-৬০ বছর ধরে উত্তার মেঘনার প্রবল ঢেউয়ে ভাঙছে এই ইউনিয়গুলোর পাঁচটি/ছয়টি গ্রাম। গত দুই দশকে ভাঙনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দুই ইউনিয়নের প্রায় চার/পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গ্রামবাসীর বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে ইউনিয়নগুলোর মানচিত্রে দুটি গ্রাম থাকলে বাস্ততে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। দ্রুত কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে পুরো ইউনিয়নগুলো নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের মানচিত্রে মানিকনগর নামে একটি গ্রাম আছে। গ্রামটিতে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ পরিবার বসবাস করতো। কিন্তু ৩০-৪০বছর আগে মেঘনার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীগর্বে বিলীন হয়ে গেছে গ্রামটি। এখন গ্রামটির আর কোনো অস্থিত্ব নেই। একইভাবে পাশ্ববর্তী বড়িকান্দি ইউনিয়নের সোনাবালুয়া গ্রামটির একসময় অস্তিত্ব ছিল। মানচিত্রে এখনও গ্রামটি থাকলেও বাস্তবে নেই। প্রায় দুই হাজার ভোটার নিয়ে গঠিত এই সোনাবালুয়া গ্রামটি প্রায় ১৫-২০বছর আগে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। এখন অবশিষ্ট আট-১০টি পরিবার নদীর শেষ তীরবর্তী এলাকায় কোনো রকমে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বাকিরা অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার উত্তর সীমান্তবর্তী বড়িকান্দি ইউনিয়নের সোনাবালুয়া, মুক্তারামপুর, নূরজাহানপুর, ধরাভাঙ্গা, দুলাইগঞ্জ, কোলাসিং গ্রাম রয়েছে। ওইসব গ্রাম প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। গ্রামবাসীর আয়ের উৎস্য কৃষি, বৈদেশিক মুদ্রা। তবে বর্তমানে এই ইউনিয়নের ধরাভাঙ্গা, মুক্তারামপুর, নূরজাহানপুর, বড়িকান্দি গ্রামে মেঘনার ভাঙ্গণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর সোনাবালুয়া গ্রামে এখন মাত্র আট-১০টি পরিবার রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের উপদেষ্টা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের নেতৃত্বে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান, সহকারী পরিচালক এ এম আনোয়ার হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তাদের আগমন উপলক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামের শিশুসহ সকল বয়সের নারী-পুরুষ ব্যানার নিয়ে মেঘনার তীরে অবস্থিত সোনাবালুয়া গ্রামের অবশিষ্ট অংশে জড়ো হন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, নদী ভাঙ্গন দেখার জন্য এখানে এসেছি। আমরা সরেজমি দেখে গেলাম। এবিষয়ে টেকনিক্যাল প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করার পর একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে।
সোনাবালুয়া নৌঘাটের দোকানদার মনির ভান্ডারী বলেন, ওই সামনের নদীর যে পার দেখতাছেন হেই জায়গায় ছিল আমাগোর সোনাবাল্লা গেরাম (গ্রাম), অহন আর নাই।
সোনাবালুয়া গ্রামের কৃষক সাজাহান মিয়া বলেন, আমাগোর অনেক জমি অহন নদীতে। এমনে ভাঙ্গতে থাকলে কয়েক বছর পর আরো অনেক জমিই নদীতে চইলা যাইবো।
বড়িকান্দি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য হুমায়ূণ কবীর বলেন, আমার বয়স সত্তর। সেই ছোট বেলা থেকে মেঘনা নদীর এই ভাঙ্গন দেইখা আইতাছি। আমরার ২৩কানি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামের প্রায় ২০০কানি জমি পানিতে চলে গেছে।
জানা গেছে, গ্রামের চারা হাটি বাড়ির ২৩কানি জমি, মো. শাহজাহান মাস্টারের ১৮কানি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
একই ইউনিয়নের সাবেক আরেক ইউপি সদস্য লিয়াকত আলী বলেন, বড়িকান্দি ইউনিয়নের নতুনচর ৫১ ও ৫২ নম্বর মৌজার প্রায় ৫০০ বিঘা জমি, জাফরাবাদ ২ নম্বর মৌজার দুই নাম্বার সিটের ১০০ বিঘা জমি, জাফরাবাদ ৩ নাম্বার মৌজার ৩ নাম্বার সিটের ৮০০/৯০০ বিঘা জমি, জাফরাবাদ ৪ নাম্বার মৌজার ৪ নাম্বার সিটের প্রায় এক হাজার বিঘা জমি মেঘনার ভাঙণে বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বড়িকান্দি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার বিঘা জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাহীনূজ্জামান বলেন,আমরা একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তবে শুষ্ক মৌসুম ছাড়া এখানে কাজ করা সম্ভব না।