Main Menu

৯৯৯ ফোন করে মুক্তি পেল ওই নারী

নবীনগরে কুপ্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় এক গৃহবধুকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ!

+100%-

মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর :: ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগ্রামে আসমা বেগম (৩২) নামের এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় উলংগ করে লোহার রড দিয়ে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতন চলাকালে ৯৯৯ ফোন দেয়া হলে পুলিশ তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে। বর্তমানে গুরুতর আহত ওই নারী হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
এদিকে এ ঘটনায় গত সোমবার থানায় মামলা হওয়ার দুদিন পরও আসামরিা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও, পুলিশ ‘ঘটনাটির মিমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে’ উল্লেখ করে আসামিদের ধরছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মেহেদী হাসান আজ বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ‘নির্মম ও মধ্যযুগীয় নির্যাতন’ বলে উল্লেখ করে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে নিশ্চিত করেন।

মামলার এজাহার ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, নোয়াগ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের স্ত্রী আসমা বেগমকে গত রবিবার বিকেলে পাশের শরীফ ডাক্তারের বাড়িতে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে শরীফ ডাক্তারের স্ত্রী সীমা আক্তার ও তার ভাই শাহেদ সরকার গৃহবধূ আসমার উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে গৃহবধূকে উলংগ করে লোহার রড দিয়ে ও বোতল দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যতন চালানো হয়। ওই সময় আসমা একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে নির্যাতনকারীরা পানি ঢেলে আসমাকে কয়েকবার জ্ঞান ফিরিয়ে এনে পুররায় মারধর করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আসমার আর্ত চিৎকারে তার স্বামী নজরুল তার স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য ৯৯৯ ফোন করেন। ফোন পেয়ে নবীনগর থানার এএসআই মো. আশরাফ উদ্দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসমাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করান।
স্বামী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শরীফ ডাক্তার ও তার ভাইদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলছিল। এছাড়া শরীফ ডাক্তারের ভাই সাহেদ সরকার তার স্ত্রীকে প্রায়ই কু-প্রস্তাব দিতেন। কিন্তু এতে আসমা রাজী না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে ডেকে নিয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে এই অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।’
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে বারবার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তবে আশংকাজনক অবস্থায় আসমাকে উদ্ধার করা পুলিশের এএসআই আশরাফ উদ্দিন বলেন,‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় গৃহবধূকে উদ্ধার করি। তবে আসমা পাঁচলাখ টাকা চুরি করায় শরীফ ডাক্তারের বাড়ির লোকজন তাকে মারধর করেছেন বলে নির্যাতনকারীরা আমার কাছে অভিযোগ করেন। সেসময়ে শরীফ ডাক্তার গৃহবধূ আসমার কাছ থেকে চুরি হওয়া উদ্ধারকৃত চুরির তিনলাখ টাকা আমাকে এনে দিলে, আমি সেই টাকা জব্দ করে থানায় নিয়ে আসি।’
এদিকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতড়ানো মুমুর্ষ অবস্থায় নির্যাতিতা আসমা বেগম আজ দুপুরে বলেন,‘আমি শরীফ ডাক্তারের ভাইয়ের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অনেকদিন ধরেই আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। ঘটনার দিন আমাকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ দেয়। পরে লোহার রড, পেপসির বোতল ও রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটানো হয়।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নবীনগর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. জসিম উদ্দিন বলেন,‘শুনেছি, বিষয়টির আপোষ মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই এই বিষয়ে কোন কথা বলব না।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মেহেদী হাসান দুপুরে বলেন,‘ঘটনাটি শুধু নির্মমই নয়, একেবারেই অমানবিক। চুরির অপবাদ হলেও কেউ এমন বর্বর নির্যাতন চালাতে পারেনা। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই মামলা নেয়া হয়েছে। কোন মীমাংসা নয়, শিগগীরই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’






Shares