আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোয় বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কবির বরখাস্ত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির আহমেদকে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির পদ থেকে তিনমাসের জন্য বরখাস্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক বিশেষ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ।
নবীনগর নির্বাচন, পূর্ববিরোধ ও আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলার বীরগাঁও ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে কয়েকমাস ধরে চলা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি এক বিশেষ সভার আয়োজন করেন।সভায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত হলেও বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহমেদ যোদ দেননি।বিরোধ নিষ্পত্তিতে অসযোগিতার অভিযোগে কবির আহমেদকে তিন মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়।এবং বীরগাঁও ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য মূল হোতা হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালেহীন তানভীর গাজীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের সাংসদ ফয়েজুর রহমান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নবীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সরকার, নবীনগর পৌরসভার মেয়র মো. মাঈন উদ্দিন, কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম সিকদার, বিরোধ নিষ্পত্তির সংক্রান্ত আট সদস্যের কমিটির সভাপতি নবীনগর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ মিয়া এবং সদস্য একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধি মো. লিটন প্রমুখ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বীরগাঁও ইউনিয়নে চেয়ারম্যানপদে আওয়ামীলী থেকে জহির রায়হান, আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কবির আহামেদ ও বিএনপির প্রার্থী ফারুক হোসেন ওরফে ফালু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কবির আহমেদ জয়ী হন। ওই সময় থেকে কবির আহমেদ ও ফারুক আহমেদের পক্ষের লোকজনের সঙ্গে জহির রায়হানের গোষ্টির লোকজনের বিরোধ দেখা দেয়। এরই জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক একাধিক সংঘর্ষ, হামলা ও মামলা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ব বিরোধের জের ধরে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও আবু মিয়া মেম্বার গোষ্ঠীর সঙ্গে বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন পক্ষ থানাকান্দি গ্রামের কাউছার মোল্লা ও সাতঘরহাটি গ্রামের কাউছার মাস্টারের গোষ্ঠী লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।কয়েকমাস আগে চেয়ারম্যান ও মেম্বার গোষ্ঠীর হাজিরহাটি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শাহজাহান খানের লেবানন প্রাবাসী ছেলে সুমন খানকে মারধর করেন লেবাননে থাকা কাউসার মোল্লা ও কাউসার মিয়া মাস্টারের লোকজন। এতে সুমনের ডাম চোখও নষ্ট হয়ে যায়। এসব ঘটনায় গত ১৪, ১৭ ও ১৯ আগস্ট ইউনিয়নের চার গ্রাম থানাকান্দি, হাজিরহাটি, সাতঘর হাটি ও গৌরনগর গ্রামে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষ হয়। বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমদে সংঘর্ষের সময় কাউসার মোল্লা ও কাউসার মাস্টারের গোষ্টির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ উঠে। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা ও উভয়পক্ষের লোকজন অন্তত সাতটি মামলা করেন। এসব মামলায় কৃষ্টনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি, হাজিরহাটি, সাতঘরহাটি ও গৌরনগর গ্রামগুলোতে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমনকি গত কোরবানি ঈদেও গ্রামের মানুষগুলো গ্রামের ফিরতে পারেনি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর কবির আহমেদের পক্ষ হয়ে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কাউসার মাস্টারের কালার ও আনোয়ারের গোষ্টির শতাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বীরগাঁও ইউপির জহির রায়হানের সাহেববাড়িতে হামলা চালায়। পরে সংঘর্ষটি পাশের কৃষ্ণনগর ইউপির থানাকান্দি,হাজিরহাটি ও সাতহাটির উভয়পক্ষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।এসময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, বিশেষসভায় বীরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আসেননি। গ্রামের অস্তিরতা ও বিরোধ নিরসনে অসহযোগিতার জন্য উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমেদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।আগামী তিনদিনের মধ্যে বাইরে থাকা পুরুষদের স্ব স্ব অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে উপয়পক্ষের লোকজনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম সিকাদার জানান, ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের জন্য সাংসদ নির্দেশ দিয়েছেন।