ট্রান্সফার তথা কাফালার ব্যাপারে বিস্তারিত
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আসুন ট্রান্সফার তথা কাফালার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেই।
চুক্তি ভিক্তিক চাকুরী : যারা কোন কোম্পানী বা কফিলের কাছে চুক্তিবদ্ধ, তারা চুক্তি শেষ হওয়ার পর স্বেচ্ছায় ইস্তেফা দিয়ে অন্যত্র কাফালা হয়ে যেতে পারবেন। কোম্পানী বা কফিল যদি কোন ঝামেলা করে, সেক্ষেত্রে লেবার কোর্টে (মকতব আল আমেল) গিয়ে অভিযোগ করুন। একজন শ্রম আইনজীবির পরামর্শ নিয়ে আগে বাড়বেন, উল্লেখ্য – অবশ্যই আপনার চুক্তির বৈধ কাগজপত্রাদি সাথে রাখবেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাষা একটা বড় সমস্য হয়ে দাড়ায়, সেক্ষেত্রে আইনজীবিই আপনার পক্ষ হয়ে সম্মানিত হাকিমকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবে। আর যারা কাফালা হয়ে নতুন কোন কোম্পানী কিংবা কফিলের কাছে যেতে চাচ্ছেন, তারা অবশ্যই কাগজে কলমে লিখিত চুক্তি করবেন। চুক্তি পত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ রাখবেন, পরবর্তীতে আপনার কাফালার প্রয়োজন হলে কফিল বা কোম্পানি যাতে ট্রান্সফার দিতে বাধ্য থাকে। মনে রাখবেন আপনি যদি আপনার কন্ট্রাক্ট পেপারে কাফালা হওয়ার কথা না উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে কাফালা হওয়া অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
বেতন বোনাস না দেয়া : অনেক ভুক্তভোগী প্রবাসী ভাই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, কোম্পানি / মালিক তাদের ৩ মাস বা তারও বেশী সময় ধরে বেতন দিচ্ছেনা সেক্ষেত্রে করনীয় কি? আপনি যদি বেতন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকেন তাহলে সবার আগে বলব ‘আপনার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি হন। লেবার কোর্টে গিয়ে আইজীবির মাধ্যমে এই মর্মে মামলা করুন, কোম্পানী/কফিল আপনাকে বেতন না দেয়ায় আপনি অন্যত্র চলে যেতে চাচ্ছেন। তারপর দেখুন কিভাবে কত দ্রুত আপনার কাজ হয়। হয়ত কোম্পানী আপনাকে অনেক ভয়ভীতি দেখাবে! মনে রাখবেন, একবার কোর্টে যদি মামলা হয় – তাহলে ওরা আর কিছুই করতে পারবেনা! আর সবচেয়ে জরুরী হলো নিজের মনের জোর, কখনই নিজেকে দূর্বল ভাববেন না। আপনি কোন অপরাধ করেন নি, নিজের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছেন – চুরি’তো আর করেন নি !!!
কফিলের সম্মতিতে : কফিলের সম্মতিতে সবচেয়ে দ্রুত কাফালা হওয়া যায়। ১ম বার কাফালায় দুই হাজার রিয়াল লাগবে, এবং পরবর্তি প্রতিবারের জন্য দুই হাজার করে বাড়তে থাকবে। কফিল মারা গেলে বিনা পয়সায় কফিলের নমিনির কাছে কাফালা হওয়া যায়। তবে যদি বাহিরে কারো কাছে হতে চান সেক্ষেত্রে নমিনির সম্মতি লাগবে।
হুরুব থাকলে করনীয় : মালিক / কোম্পানী ভালো না, ভেগে চলে এসেছেন এবং আপনার ইকামায় হুরুব হয়ে গেছে। হুরুব হলে না পারবেন বৈধভাবে কাজ করতে, না পারবেন কাফালা হতে! তবে আশার কথা হলো, হুরুব দিলে আপনি হয় এর বিরুদ্ধে লেবার কোর্টে স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা করতে পারেন, অন্যথায় কফিলের নিতাকাত রেড হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। রেড হলে আপনি কাফালা হতে পারবেন, তবে আগে যদি মামলা করে নেন – তাহলে আপনার হুরুব কাটা সহজ হবে। আর যদি মামলা না করেন তাহলে প্রায় অসম্ভব।
এতো গেল পর্যালোচনা, আসুন এবার দেখে নিই সহজেই কোন কোন ক্ষেত্রে কফিল বা কোম্পানীর অগোচরে বৈধভাবে কাফালা হতে পারবেন।
১) বর্তমান কফিল / কোম্পানী যদি নিতাকাত প্রোগ্রাম অনুসারে হলুদ বা লাল স্ট্যাটাসে থাকে।
২) নতুন ভিসায় আসার পর কোম্পানী/কফিল যদি তিন মাসের মধ্যে ইকামা করে দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে শ্রম মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে।
৩) ইকামার মেয়াদ শেষ হয়ে ১ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে কফিল / কোম্পানীকে না জানিয়েই কাফালা হওয়া যাবে।
৪) পর পর তিন মাস বেতন না দিলে সহজেই কাফালা হতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে মকতব আল আমালে গিয়ে পারমিশন নিয়ে কাজটি করতে হবে। যদিও এখানে কফিলকে কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই।
মনে রাখবেন, কফিল/কোম্পানী যত ভালই হোক না কেন অবশ্যই কাজ করার আগে চুক্তি করে নিবেন, আর তাতে অবশ্যই উল্লেখ করবেন কাফালা হওয়ার কথা।
বিল্লাল হোসেন
সৌদিআরব