Main Menu

নতুন লেবার আইনের মূখ্য এবং নতুন আদেশগুলো জেনে নিই

+100%-

ministry of labour

আসসালামু আলাইকুম। প্রবাসী বন্ধুরা,আপনারা সবাই জানেন যে গত পহেলা মুহাররম (১৭ই অক্টোবর ২০১৫) থেকে বেশ কিছু নতুন লেবার আইন সংশোধন এবং সংযুক্ত হয়েছে, সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয়ে।এ আইনগুলোর মাধ্যমে নতুন করে শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীলতা,অধিকার সংরক্ষন সংযোজন করা ছাড়াও কফিল/কোম্পানীর উপর বিশাল অংকের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে যদি সঠিকভাবে আইনগুলো মানতে ব্যর্থ হয় অথবা ক্রমাগতভাবে না মানে।আসুন এ আইনের মূখ্য এবং নতুন আদেশগুলো জেনে নিই।

•যদি কোম্পানী তথা কফিল অন্য কোন তৃতীয় ব্যক্তি/ব্যক্তিগনের (যে কিনা বিনা কাফালায় ওয়ারাগা “আরা” নিয়ে কাজ করছেন)
মাধ্যমে নিজ কাজ করিয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি/ব্যক্তিগন কফিল/কোম্পানীর স্বীয় লেবারের সমতূল্য সম্পূর্ন বেনিফিট আদায় করার অধিকারী হবে।

•এখন থেকে মিনিষ্ট্রী অব লেবার (শ্রম মন্ত্রনালয়) কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সম্প্রসারন তথা এর সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে সকল ক্ষমতা বহন করবে এর মধ্যে যেকোন কর্মচারীকে বিনা নোটিশে (কোম্পানী বা কফিলকে) কাফালা তথা ট্রান্সফারের ক্ষমতা বহন করবে।

•শ্রম মন্ত্রনালয় ওই কোম্পানী বা ফার্মের লাইসেন্স রিনিউ করবে না যারা বিদেশী লেবার অনুপাতে যতজন সৌদি নাগরিক রিক্রুট করা বাধ্যতামূলক তা করতে যদি ব্যর্থ হয়।

•যদি কোন কোম্পানী/ফার্মে ৫০ জন বিদেশী শ্রমিক থাকে তবে তার শতকরা ১২ পারসেন্ট সৌদি রিক্রুট করতে হবে এবং তাদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত করে তুলতে হবে।

•কোম্পানী/ফার্ম যদি চাকুরীর চুক্তি আগে কোনরূপ প্রশিক্ষার প্রয়োজন মনে করে তার আয়োজন করে এবং কোন শিক্ষার্থী যদি তা সম্পূর্ন করতে না পারে (অনীহা,দেরীতে আসা,অনুপস্থিত),তবে কোম্পানী/ফার্ম বিনা নোটিশে সেই কর্মীকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা বহন করে।এবং এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর জরিমানা দিতে হবে কোম্পানী/ফার্মকে।

•যেকোন নতুন চাকুরীর শুরুতে কোম্পানী/কফিল এবং লেবারের মাঝে লিখিত চুক্তি থাকতে হবে যা কিনা শ্রম মন্ত্রনালয়ের করা মানের (স্ট্যান্ডার্ড) অন্তর্ভুক্ত।উভয়পক্ষকেই এই আইন যথাযথ ভাবে মানতে হবে।

•শিক্ষাকালীন ছুটি কোনভাবেই ৯০ দিনের বেশী নেয়া যাবে না এবং তা অবশ্যই লিখিতভাবে কোম্পানী/কফিল কে জানিয়ে তার সম্মতিতে নিতে হবে। তবে যদি উভয় পক্ষের সম্মতি থাকে এবং লিখিতভাবে তা বাড়াতে চায় তবে সেটা গ্রহনযোগ্য।

•একজন লেবার/চাকুরিজীবি তার চাকুরীর কন্ট্রাক্ট/মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র একটিই শিক্ষাকালীন ছুটি চেয়ে দরখাস্ত করতে পারবে। তবে নিজেদের মাঝে যদি সম্মতি থাকে সেক্ষেত্রে তা আরও বাড়াতে পারবে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে।

•যেকোন চাকুরীর চুক্তি নামার বৈধ কাগজে করা চুক্তির শেষ তারিখই সেই চুক্তির শেষ মেয়াদ বলে গন্য হবে। তবে উভয় পক্ষ যদি তা নতুন করে নবায়ন না করে এবং ৩ দিন অতিবাহিত হয় তবে তা স্বয়ংক্রীয়ভাবে সেই একই চুক্তি হিসাবে (একই বেতন,বোনাস,লভ্যাংশ,সুযোগ-সুবিধা) ততদিন পর্যন্ত বহাল থাকবে যতদিন পর্যন্ত না কোন এক পক্ষ হতে তা শেষ করার লিখিত কোন পত্র আসে।আর কেউ বিরোধিতা যদি না করে তবে তা চলতেই থাকবে।

•যদি কোম্পানী/কফিল নিজ কাজের স্বার্থে লেবার/লেবারগনকে অন্য কোথাও কাজের জন্য পাঠাতে চায় এবং এখানে যদি লেবারের নতুন বাসা ভাড়া করে থাকতে হয় তবে কোম্পানী/কফিল অবশ্যই লেবার/লেবারগনকে ১ মাস পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে সেই বিষয়টি অবগত করবে।অন্যথায় এই দাবী/কাজ গ্রহনযোগ্য হবে না।

•চাকুরীর কন্ট্র্যাক্ট শেষ হওয়ার পর কোম্পানী/কফিল চাকুরিজীবিকে অবশ্যই একটি লিখিত সনদ প্রদান করতে বাধ্য থাকবে (বিনা পয়সায়)। এবং সনদ নামায় কোনরূপ খারাপ মন্তব্য বা বদনাম লিখতে পারবেনা যাতে চাকুরিজীবির খ্যাতিতে কোনরূপ বিরূপ প্রভাব পরে।

•চাকুরীদাতাকে অবশ্যই চাকুরিজীবির উপর করা জরিমানার (দেরীতে ডিউটিতে আসা,অনুপস্থিত,অপ্রীতিমূলক কার্যক্রম এবং সাধারন এমন কার্য সিদ্ধ করা যা জরিমানা যোগ্য এবং চুক্তির বিরোধিতা করে) সকল ডকুমেন্ট বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষিত করতে হবে এবং লেবার কোর্টে যদি কোন পক্ষ থেকে এর বিরোধিতা আসে তবে সেটা মিমাংস করাও শ্রম মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব।

•চাকুরীর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যদি লেবার চাকুরীতে নিযুক্ত থাকে এবং চলতে থাকা কন্ট্র্যাক্ট যদি নতুন আইনের আওতায় (উপরে এ বিষয়ে লিখা হয়েছে) স্বয়ংক্রীয় হয়ে থাকে,তবে যদি কোন পক্ষ চায় তাহলে যেকোন মুহূর্তে তা শেষ করার অধিকার রাখে।মাসিক বেতনভূক্ত হলে তাকে একমাস আগে লিখিত নোটিশ দিতে হবে (উভয় পক্ষই নোটিশ দিতে পারবে)। অন্যথায় সর্বচ্চ সময় ২ মাস নির্ধারন করা হয়েছে।

•যদি চাকুরীচুত্য করার/চাকুরী থেকে রিজাইন করার নোটিশ দিতে কোন পক্ষ ব্যর্থ হয় তবে সেই পক্ষ অন্য পক্ষকে জরিমানা প্রদান করবে।ক্ষেত্র এবং চাকুরীর ধরন বিশেষে জরিমানার পরিমান নির্ধারিত হবে।

•সৌদি শ্রম মন্ত্রনালয় উভয় পক্ষের লিখিত ডকুমেন্ট পরীক্ষা করে রিজাইন/চাকুরীচুত্যের জরিমানা নির্ধারন করবে যদি নিজেরা কোন সমাধানে আসতে ব্যর্থ হয়।

•যদি কন্ট্র্যাক্ট অনুসারে কাফালা দিতে লিখিত থাকে এবং লেবার যদি তা শেষ হওয়ার আগে অন্য চাকুরী খোঁজার জন্য সময়ের আবেদন করে তবে কোম্পানী/কফিল তাকে ৮ ঘন্টা অথবা একদিন সময় দিতে বাধ্য। তবে কোন ক্রমেই কোম্পানী/কফিল এজন্য লেবারের বেতন কাটতে পারবে না।

•কোম্পানী বা কফিল যদি কোন চাকুরীজীবিকে বৈধ কারন ছাড়া চাকুরীচুত্য করে তবে তাকে অবশ্যই সেটা লিখিতভাবে চাকুরীজীবিকে জানাতে হবে এবং তার বেতন,বোনাস, ESB সব পরিশোধিত করে দিতে হবে যদি চাকুরীজীবি এতে সম্মত হয়।অন্যথায় সমোঝতা শ্রম মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে হবে।

•শ্রমিককে কোনক্রমেই আধ ঘন্টার কম বিরতি দেয়া যাবে না নামায তথা বিশ্রাম এবং দুপুরের খাওয়ার জন্য। আর প্রতি পাঁচ ঘন্টা অন্তর অবশ্যই আধ ঘন্টা বিরতি দিতে হবে এবং কোনক্রমেই কাজ যেন ১২ ঘন্টার অধিক না হয়।

•শ্রমিকের কারো মৃত্যু হলে (পরিবারের সদস্য)তাকে অবশ্যই ৫ দিনের ছুটি দিতে হবে সম্পূর্ন বেতন সহ। তবে বৈদিশিক নাগরিকদের জন্য প্রথম ৫ দিন বেতন সহ ছুটি মওকুফ। পরের দিন গুলোর জন্য নিজেদের মাঝে আলোচনা করে তা ঠিক করবে।

•বিয়ে (নিজ) করার জন্যও একই আইন প্রযোজ্য হবে।
•৩দিন মাতৃকালীন/পিতৃকালীন বেতন সহ ছুটি।

•যদি কাজ করা অবস্থায় শ্রমিকের কোন ক্ষুদ্র ক্ষতি সাধন হয় তাহলে কোম্পানী/কফিল তার সম্পূর্ন সুস্থ্য না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যাবে এবং শ্রমিক কাজ থেকে বিরত থাকা স্বত্তেও সম্পূর্ন বেতন পাওয়ার অধিকার রাখবে প্রথম দুই মাস পর্যন্ত।পরের মাসগুলোতে শ্রমিক সুস্থ্য না হয়ে ফিরে আসা পর্যন্ত বেতনের ৭৫% দিতে হবে। আর যদি একবছর এভাবে অতিবাহিত হয় এবং শ্রমিকের সুস্থ্য হওয়ার কোন লক্ষন দেখা না যায় তবে কোম্পানী/কফিল সেই শ্রমিকের চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করার অধিকার রাখে।

•বিপদজনক/ক্ষতিকর কোন কাজেই মহিলা শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া যাবে না।

•শ্রম মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শকরা যেকোন মুহূর্তে যেকোন পক্ষকে (মালিক/শ্রমিক) জবাবদিহি করতে পারবে।

•শ্রম মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শকদের এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে এবং তা নথিভুক্ত।

•কোম্পানী/ফার্ম যদি কর্ম ক্ষেত্রে নতুন কোন আইন বা কাজ বিষয়ে এমন কিছু অন্তর্ভুক্ত করতে চায় যা কিনা চুক্তির বর্হিভুক্ত তবে তা অবশ্যই শ্রম মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শকের সামনে উপস্থিত করতে হবে এবং এতে যেন শ্রমিকের অধিকার ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

•যদি মন্ত্রনালয়ের করা কোন আইন উভয় পক্ষের কোন পক্ষ একের অধিকবার ভংগ করে তবে প্রথমবার জরিমানার বিধান রেখে পরের বার কোম্পানীর লাইসেন্স সাময়িক জব্দ করা থেকে শুরু করে একেবারে লাইসেন্স বাতিল করা সহ পুরো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আর লেবারদের ক্ষেত্রে জেল জরিমানা সহ ফাইনাল এক্সিটের বিধান আছে।

•যদি কোম্পানী/ফার্মকে নিজেদের ভূল সংশোধনের সময়সীমা নির্ধারন করে দেয়া হয় এবং সময়মত তারা যদি তা করতে বর্থ হয় তাহলে বড় মাপের জরিমানা গুনা সহ কোম্পানী/ফার্ম চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

এইগুলো হলো মূল আইন যা কিনা নতুন এবং সংশোধিত। আমরা আগেও বার বার করে প্রবাসী ভাইদের বলেছি এবং এখন আবার বলছি যে যারা চাকুরী বা ব্যবসা করেন তারা কখনই মালিকে তথা কোম্পানীর মধুর কথায় খেয় হারিয়ে ফেলবেন না। দয়া করে কন্ট্র্যাক্ট করুন কাগজ কলমে এবং এতে অবশ্যই নিজ বেতন বোনাস সুযোগ সুবিধা তথা কাফালার কথা অবশ্যই উল্লেখ করবেন।






Shares