ক্রিকেটের কুলাঙ্গার সমাজ : দ্বিতীয় পত্র(ভারত)
অর্থের জন্য প্রলোভিত হয়ে খেলার মাঠে গড়াপেটার ঘটনা প্রথম ঘটে ১৯১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাস্কেটবল খেলায়! কিন্তু ক্রিকেটের বুকে এই কালো থাবা পরতে পরতে বেশ সময় লেগে যায়। ১৯৯৯ সালেই প্রথম সকলের সামনে আসে ম্যাচ গড়াপেটার ঘটনা! এর আগেও বেশকিছু ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু তা এত প্রচার হয়নি।
২০০০ সালে ভারতীয় অধিনায়ক আজহারউদ্দিন প্রথম এই অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তখন থেকেই ভারতের পেছনে কালো এই থাবা লেগেই আছে। বর্তমান যুগের আইপিএল এর কতগুলো খেলা স্পট বা ম্যাচ ফিক্সিং এর আওতার বাইরে সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়। ম্যাচ ফিক্সিং না হলেও স্পট ফিক্সিং এর বাইরে শতকরা ১০ ভাগ ম্যাচ ও থাকে না।
মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন ছিলেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা টেস্ট অধিনায়ক! মানুষ নাকি যখন ভাল হয়ে যায় তখন ই তাকে ধরা পরতে হয়। ক্যরিয়ারের শেষের দিকে এসে হ্যানসি ক্রুনিয়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাকে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে দোষী করা হয়। হ্যানসি ক্রুনিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, বুকিদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আজহার-ই!! পরবর্তিতে তদন্তে বেরিয়ে আসে তিনি নিজেও ম্যাচ গড়াপেটার সাথে জড়িত ছিলেন।
২০০০ সালে তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু যা হয় আরকি! ২০০৬ সালে তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তাকে অন্যতম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে বিশেষ সম্মান ও দেয় ভারত।
অজয় জাদেযা, মনোজ প্রভাকর এবং অজয় শর্মা’র বিরুদ্ধে ২০০০ সালেই অভিযোগ আসে বিভিন্ন সময়ে ম্যাচ গড়াপেটার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার। এর মাঝে মনোজ প্রভাকর করেছিলেন সবচেয়ে দুর্ধর্ষ কাজটা, কপিল দেবকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন ম্যাচ পাতানোর। উলটো নিজে পরে যান ফাদে। করা হয় ৫ বছরের জন্য বহিষ্কার। বাকি ২ অজয় কেই বহিষ্কার করা হয়েছিল আজীবনের জন্য। কিন্তু পরবর্তিতে এই ৩জনের উপর থেকেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয়।
২০১৩ সালে আইপিএল এর এক ম্যাচে আগে থেকে টাকা নিয়ে ওভারে ১৪ রান দেন ক্রিকেটার শান্তাকুমারন শ্রীশান্ত! কিন্তু বছর ঘুড়তে পারেনি, ধরা পরতে হয় রাজস্থান রয়ালস এ খেলা তখনকার এই ক্রিকেটারকে। নিষিদ্ধ হন আজীবন। কিন্তু স্বীকার করেননি নিজের দোষ এখনো। ধারনা করা হয়, যেহেতু তদন্তে সব বেড়িয়ে এসেছে, স্বীকার করে নিলে হয়ত তার শাস্তি কিছুটা হলেও কমে যেত।
এছাড়াও শ্রীশান্তের সাথে খেলা রাজস্থান এর ক্রিকেটার অমিত সিং এবং সিদ্ধার্থ ত্রিভেদী যথাক্রমে ৩ এবং ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন ম্যাচ গড়াপেটার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার জন্য।
শ্রীশান্তের সাথে সবচেয়ে ভালভাবে জড়িত থাকার জন্য আজীবন নিষিদ্ধ হন ক্রিকেটার আঙ্কিত চাবান। তার বিরুদ্ধে সরাসরি ম্যাচ ফিক্সিং এর প্রমান মিলেছে।
এর আগে পরে টিপি সুধিন্দ্রা আজীবন নিষিদ্ধ হন ঘড়োয়া ক্রিকেটে ম্যাচ ফিক্সিং এর জন্য।
এছাড়াও মনিশ মিশরা নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ১ বছরের জন্য ডেকান চার্জার্স এ খেলার সময়।
অমিত যাদব, শালভ শ্রিভাস্তাভা এবং অবিনাব বালি ও নিষেধাজ্ঞার গ্যাড়াকলে পরেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব এ খেলার সময়। অমিত যাদব এবং বালির নিষেধাজ্ঞা ছিল ১ বছর করে, কিন্তু শালভ শ্রিভাস্তাভা’র বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিং এর অভিযোগে এর সত্যতা পাওয়া যাওয়ার তাকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
বর্তমান যুগের প্রতিটি ঘড়োয়া ক্রিকেট লিগের মূলে ছিলে আইসিএল। এই টুর্নামেন্ট ছিল অনেকাংশেই বাজিকর দের খেলা। এর জন্যই অনেকটা আইসিসি একে নিষিদ্ধ করে। পরবর্তিতে সেখানেই শুরু হয় আইপিএল, এর খেলাও কতটুকু শুদ্ধ ছিল সন্দেহ ছিল এই বিষয়েও! কিন্তু আইসিসি’র বর্তমান দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমের কারনে আইপিএল এখন অনেকটাই শুদ্ধ বলে দাবি করার হয়। কিন্তু ফিক্সিং এর মূল আখরা তথা আন্ডারওয়ার্ল্ড এর অন্যতম “হেড-অফিস” কিন্তু এই ভারতেই। তাই সেই দাবি কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ক্ষমতাধর বোর্ড টাও যে ইন্ডিয়া, তাই তাদের ক্রিকেটাররা প্রতিবারই বেচে যান, অনেক ক্ষেত্রে ধরাও খান না। যা ঝড় যাওয়ার তা অন্যান্য দের উপর দিয়েই যায়।
ক্রিকেটের স্বার্থেই এসব ব্যাপারে ভারতের নিজ উদ্যোগি হওয়া উচিৎ!