এক বছর ওয়ান ডে ক্রিকেট খেলতেই পারবে না বাংলাদেশ!
ডেস্ক ২৪:: টানা এক বছর ওয়ান ডে আঙিনার বাইরে থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সৌজন্যে আইসিসি-র ক্রীড়াসূচি। গত বছর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, ওয়ান ডে সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক দিলেও আইসিসি-র সূচিতে স্থান নেই বাংলাদেশের।
২০১৫-র ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ শেষ ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে। আইসিসি’র ক্রীড়াসূচি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের নভেম্বরের আগে কোন ওয়ান ডে ম্যাচ বরাদ্দ নেই বাংলাদেশ দলের। ১৯৯৭ সালে আইসিসি বাংলাদেশকে ওয়ান ডে খেলার মর্যাদা দেওয়ার পর এত দীর্ঘ বিরতি পায়নি তারা। অথচ ২০০৬ সালের নভেম্বরে আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৪৬টি আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে যারা, সেই বাংলাদেশ দলের সামনে ২০১৬ সালে হাতছানি দিচ্ছে রেকর্ড সংখ্যক ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সম্প্রতি জিম্বাবোয়ের সঙ্গে চলতি মাসে ৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সিরিজ চূড়ান্ত হওয়ায় এ বছরটি বাংলাদেশের জন্য টি-টোয়েন্টির বছর হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালে এক বছরে সর্বাধিক ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। এ বছরে সেই রেকর্ডও ছাপিয়ে যাচ্ছে তারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে রেকর্ড সংখ্যাক ১৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার হাতছানি তাদের সামনে। এই বছরে আর কোন দল বাংলাদেশের মতো এতো আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে না।
টেস্ট ক্রিকেটে আইসিসি র্যাংঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ রয়েছে ৯-এ। অন্য দিকে, টি-টোয়েন্টি র্যাংঙ্কিংয়ে আফগানিস্তানের মতো আইসিসি’র সহযোগী সদস্য দেশ পর্যন্ত বাংলাদেশের উপরে (আফগানিস্তান ৯, বাংলাদেশ ১০)।
৫০ ওভারের ম্যাচের পরিবর্তে এশিয়া কাপের আসন্ন আসরটি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হচ্ছে বলেই এ বছরে আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রামে (এফটিপি) টেস্ট এবং ওয়ান ডে ম্যাচের মিলিয়ে ছাপিয়ে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টির সংখ্যা। ২০১৬ সালে যেখানে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে ৭টি টেস্ট এবং ৬টি ওয়ান ডে, সেখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের বাধা পেরিয়ে সুপার টেনে উঠতে পারলে বাংলাদেশ খেলবে ১৭টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। এক বছরে এতগুলো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছেন বাংলাদেশ দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ। তিনি বলেন, “এ বছর অনেকগুলো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পাচ্ছি। প্রথমে টি-টোয়েন্টি সিরিজ, এর পর ওই ফরম্যাটে এশিয়া কাপ, তার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যেহেতু সামনে বেশির ভাগ টুর্নামেন্টই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এবং আমরা এই ভার্সনের ক্রিকেটের সঙ্গে খুব একটা অভ্যস্ত নই, তাই এই ফরম্যাটের ক্রিকেট ম্যাচ যত বেশি খেলব, ততই আমাদের জন্য ভাল হবে।”
২০০৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ দল। এগারো বছর পর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জনে বাংলাদেশ দলকে কম পরীক্ষা দিতে হয়নি। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আইসিসি-র শর্ত মেটাতে হয়েছে। ২০১৫-র সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে আট নম্বরের মধ্যে থাকার সে শর্ত মিটিয়েছে তারা। আইসিসি-র ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ৭ নম্বরে। তবে আইসিসি-র সূচির জেরে ২০১৭ সালের জুনে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার প্রস্তুতিটা কিন্তু সে ভাবে নেওয়ার সুযোগ আপাতত নেই বাংলাদেশ দলের। কারন, ২০১৬ সালে আইসিসি-র ক্রীড়াসূচিতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৬টি ওয়ান ডে, তা-ও আবার বছরের শেষ দিকে ২টি সিরিজে। অক্টোবরে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ান ডে এবং ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে সমসংখ্যক ওয়ান ডে। আশ্চর্য হলেও সত্যি, আইসিসি-র সূচিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ৫ মাসে কোন আর্ন্তজাতিক সফর নেই বাংলাদেশ দলের। ২০১৭-র জানুয়ারি থেকে মে— এই ৫ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেটহীন কাটাতে হবে বাংলাদেশ দলকে।
টেস্ট মর্যাদা পাবার পর ২০০১ সালে দ্বি-পাক্ষিক সফরসূচিতে ৬টি ওয়ান ডে ম্যাচে সন্তুস্ট থাকতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। ২০১৬ সালেও আইসিসি-র এফটিপিতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ৬টি ওয়ান ডে ম্যাচ। ২০০৬ সালে রেকর্ড ২৮টি, কিংবা ২০১০ সালে ২৭টি, ২০০৮ সালে ২৬টি, ২০০৭ সালে ২৩টি, ২০১১ সালে ২১টিÑ২০’র ঘরে থাকা বছরগুলো এখন শুধুই অতীত। ২০১৫ সালে ওয়ান ডে ক্রিকেটে অন্য উচ্চতায় উঠে আসা বাংলাদেশ দল খেলেছে মোট ১৮টি ওয়ান ডে। তার পরও চারটি সিরিজের সব ক’টির ট্রফি ঘরে রাখার সৌভাগ্যের বছরেও কিন্তু পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ, তা বলা যাবে না। কারন,আইসিসি-র পূর্ণ সদস্য ১০টি দেশের মধ্যে সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে কম ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ।
তবে ২০১৬ সালে এফটিপি-র বাইরে বেশ ক’টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ তৈরিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিসিবি’র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন। তিনি বলেন, “এফটিপি-র সূচিতে শ্লট ফাঁকা থাকবে যাদের, তাদের সঙ্গে হোম অথবা অ্যাওয়ে সিরিজ নিয়ে কথা বলব।” বাংলাদেশের মতো শ্লট ফাঁকা আছে জিম্বাবোয়েরও। তবে হাতের নাগালে থাকা এই দলটির সঙ্গে এফটিপি-র বাইরে ওয়ান ডে সিরিজ নয়, বিসিবি চায় ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে উপরের সারির প্রতিপক্ষ, তা না হলে অন্তত সমমানের প্রতিপক্ষ। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে বসবে ১০ দেশকে নিয়ে বিশ্বকাপের আসর। আইসিসি-র এই মেগা আসরে সরাসরি খেলতে হলে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে থাকতে হবে সেরা ৮-এ। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইসিসি-র সেই ডেডলাইনও মাথায় রাখতে হচ্ছে বিসিবিকে। সে কারণে এফটিপি-র বাইরে ফাঁকা শ্লট পেলেও র্যাঙ্কিংয়ে নীচের সারির দলগুলোর বিপক্ষে ওয়ান ডে খেলা থেকে বিরত থাকার কৌশলও নিয়েছে বিসিবি।