সাহেবের হুকুমে গ্রেফতার হয়েছিল এই গাছ
পাকিস্তানে এখনও বন্দি ‘অপরাধী’ বটগাছ
ইসলামাবাদ: দেশ স্বাধীন হয়েছে ৬৯ বছর আগে৷ অথচ তার কাছে স্বাধীনতা আসেনি৷ বন্দি জীবনেই অভ্যস্থ৷ শতাব্দী প্রাচীন একটি বটগাছের বন্দি দশা শুধু পাকিস্তানেই নয় বিশ্বজোড়া আলোড়ন তৈরি করেছে৷ এক মাতাল ব্রিটিশ অফিসারের খেয়ালের জেরে গত ১১৮ বছর ধরে বন্দি এই বটবৃক্ষ৷ তারপক্ষ নিয়ে কোনও আইনজীবী সওয়াল করতে আসেননি৷ কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি৷ এ এক অদ্ভুত ঘটনা৷ পাকিস্তানের অন্যতম শহর লান্ডিকোটালেই রয়েছে দুনিয়ার বিরলতম অপরাধী একটা বটগাছ৷
‘I am under arrest’
লান্ডিকোটাল শহরের অতি পরিচিত শিকলে বাঁধা বটগাছটির গায়ে লেখা আছে “I am under arrest” নামে সাইনবোর্ড৷ এই ঘটনা ১৮৯৮ সালের৷ লান্ডিকোটাল সেনা ছাউনিতে ব্রিটিশ আর্মি অফিসার জেমস স্কোয়াইড (James Squid) একদিন মাতাল হয়ে ঘুরছিলেন৷ মদের নেশায় তাঁর পা ঠিকমতো মাটিতে পড়ছিল না৷ হটাৎ সেই অফিসারের খেয়াল হয় বটগাছটা তার দিকে তাড়া করে আসছে৷ ভয় পেয়ে জেমস স্কোয়াইড৷ গাছটাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন৷ বড় সাহেবের হুকুম মেনে বন্দি করা হয় বটগাছটাকে৷ পাছে গাছটা পালিয়ে যায়, তাই ব্রিটিশ অফিসার নির্দেশে বড় বড় শিকল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল! সেই থেকে গাছটির বন্দিদশা চলছে৷
পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মুখতিয়ার দুরানি জানিয়েছেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক হলেও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম৷ ব্রিটিশ রাজের সময় উপজাতি বহুল এই এলাকার কালা কানুন কেমন ছিল তার উদাহরণ হয়েই রয়েছে এই বন্দি বটগাছ৷
অবিভক্ত ভারতের লান্ডিকোটাল বর্তমানে পাকিস্তানের বা ফাটা প্রদেশের অন্যতম শহর৷ উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাটি আলেকজান্ডার থেকে মোগল আমল ও পরবর্তী সময়ে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার কেন্দ্র৷ এখানকার শাসন কায়েম রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ব্রিটিশদের৷ ফলে British Raj Frontier Crimes Regulation (FCR) জারি করা হয়েছিল৷ পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ রাজের ক্রূরতা ও পাগলামির পরিচয় বহনকারী কুখ্যাত আইনের বলি বটগাছটি৷ স্থানীয় বাসিন্দারাও একই কথা বলেন৷ তাই কালা কানুনের প্রতীক হিসেবে গাছটি এখনও বন্দি হয়েই রয়েছে৷