মাইকে ঘোষনা দিয়ে সরাইল রণক্ষেত্র, ৮ পুলিশ সহ আহত শতাধিক
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মাইকে ঘোষনা দিয়ে দুই ইউনিয়ন বাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। আহত হয়েছে আট পুলিশ সদস্য সহ শতাধিক লোক। নষ্ট হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক বিঘা ফসলি জমির ধান। রেহাই পায়নি গরু ছাগল হাঁস মুরগিও। গতকাল রোববার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ২টা পর্যন্ত উপজেলার কালিকচ্ছ ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পূর্ব বিরোধের জের ধরে নোয়াগাঁও ও সূর্যকান্দি গ্রামের লোকজন রাতে মিটিং করে সংঘর্ষের পরিকল্পনা করে। গতকাল রোববার ভোরে নোয়াগাঁও গ্রামের ব্যবসায়িরা কালিকচ্ছ বাজারে তাদের দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে নেয়। সকাল ৭টায় মাইকে ঘোষনা দিয়ে নোয়াগাঁও ও সূর্যকান্দি গ্রামের তিন সহস্রাধিক লোক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মনিরবাগ এলাকার খালি মাঠে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষ এক সময় খন্ড যুদ্ধে রুপ নেয়। রিজার্ভ পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-১৪ এর সদস্যরা সংঘর্ষ থামাতে বার বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এক সময় পুলিশ নিরব দর্শকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। সময় যত গড়াতে থাকে সংঘর্ষের ব্যাপকতা ও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক সময় দাঙ্গাবাজরা সূর্যকান্দি গ্রামের পূর্ব পাশের ফসলি মাঠে দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে। উভয় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন ওই সংঘর্ষে অংশগ্রহন করে। পুরো মাঠ তখন রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। থেমে থেমে চলে যুদ্ধ। বেলা দুইটায় পরিকল্পনা করে সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল) শাহ আলম বকাউলের নেতৃত্বে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা দু’দলের মাঝে অবস্থান নিয়ে ১৪১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৪০ টি টিয়ারসেল নিক্ষেপের পাশাপাশি ব্যাপক লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। সাত ঘন্টা স্থায়ী দুইদিনের রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে নারী পুরুষ শিশু ও পুলিশ সহ উভয় পক্ষের অন্তত শতাধিক লোক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত সূর্যকান্দি গ্রামের কাশেম মিয়ার ছেলে আবু কাউছার (১৭) ও ধন মিয়ার শিশু পুত্র জিদান (১৪) কে ঢাকায় প্রেরন করা হয়েছে। অন্যরা জেলা সদর হাসপাতাল, সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আরশাদ, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোঃ আবদুল হক, এস আই আবদুল আলীম, এস আই বোরহান, এস আই শফিকুল ইসলাম, এস আই মোবারক, এস আই শহিদুল ও কন্সটেবল মোঃ মাসুদ। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আসার পর পুলিশ সূর্যকান্দি গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে গেইট ভাংচুর করে মহিলা পুরুষদের বেধরক পেটানোর অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশের পিটুনিতে আহত হন জাহাঙ্গীর আলমের গর্ভবতী স্ত্রী শাকিলা আকতার (২৪) ও আবদুর রশিদের ছেলে নাদির মিয়া (২৬)। প্রসঙ্গতঃ গত শনিবার সন্ধ্যায় নোয়াগাঁও মোতাঈদ বাড়ির ওয়ালি মোতাঈদের ছেলে পারভেজ (২৫) মোটর সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার সামনে ছিল একটি পিকআপ ভ্যান। সাইট দেওয়াকে কেন্দ্র করে পিকআপ ভ্যান চালক সূর্যকান্দি গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে বাবুর (৩০) সাথে পারভেজের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় গ্রামের লোকজনের মধ্যে কালিকচ্ছ বাজারে সংঘষের্র ঘটনা ঘটে। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলী আরশাদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। ওসি আলী আরশাদ বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান পুলিশ মোতায়েন আছে।