সরাইলে মেলা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল::প্যান্ডেল ভাংচুর আগুন, আহত-১০
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল থেকে ::ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মেলার নামে বেহায়াপনা বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাঁচ সহস্রাধিক লোক। ভেঙ্গে ঘুরিয়ে দিয়েছে প্যান্ডেল। দিয়েছে আগুন। আহত হয়েছে অন্তত দশ ব্যক্তি। পরিস্থিতি সামাল দিতে থানা পুলিশের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল ঘটনাস্থলে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শাহবাজপুর গ্রামের মসজিদ মাদ্রাসার কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত কিছু প্রভাবশালী লোকের ব্যবস্থাপনায় শাহবাজপুর দ্বিতীয় গেইটে মহাসড়কের পাশে রয়েল ব্রিকস সংলগ্ন ফসলি মাঠে মেলার আয়োজন চলেছে। ওই গ্রামের বাসিন্ধা আবদুল হাইয়ের ছেলে আবদুর রহমান শরীফ উচ্চ আদালত থেকে মেলা করার অনুমতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে মেলা পরিচালনা কমিটি ও প্রতিরোধ কমিটি গড়ে উঠেছে সেখানে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে শাহবাজপুরে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। মেলা বন্ধের প্রতিবাদ চললেও থেমে নেই কাজ। গত দুইদিন ধরে চলছে মেলায় প্যান্ডেল তৈরীর কাজ। আর তা দেখে ফুলেফেপে উঠছে স্থানীয় আলেম ওলামা ও সাধারন লোকজন। গতকাল বিকেলে শাহবাজপুর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার সামনে থেকে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নামক সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক ও ইউপি যুবলীগের সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাজ্জির নেতৃত্বে মেলার নামে বেহায়াপনার উদ্যোগ বন্ধের প্রতিবাদে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে অংশ গ্রহন করেন স্থানীয় আলেম ওলামা ও আশপাশের ১০-১২ টি গ্রামের পাঁচ সহ¯্রাধিক লোক। ফলে এ সময় মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মিছিলটি দ্বিতীয় গেইট অতিক্রম করার সময় বিক্ষুদ্ধ লোকজন আচমকা মেলাস্থলে ঢুকে যায়। তারা মেলার বেশ কয়েকটি প্যান্ডেল ভাংচুরের পর আগুন জ্বালিয়ে দেয়। প্যান্ডেলে ব্যবহ্নত অনেক গুলো বাঁশ নিয়ে যায় বিক্ষুদ্ধ লোকজন। প্রতিপক্ষের হামলায় দশজন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রতিরোধ কমিটির লোকজন। পরে স্থানীয় বাস ষ্ট্যান্ডে এসে পথ সভায় মিলিত হয় লোকজন। বক্তব্য রাখেন- মাওলানা আবদুর রহমান কাসেমী, মুফতি সামছুল আলম, রাজিব আহমেদ রাজ্জি, হাজী নিয়ামত উল্লাহ, সর্দার দুধু মিয়া, হাজী বিল্লাল মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের, শাহ আলম কিরন ও মোঃ আসলাম প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, এখানে মেলার নামে যাত্রা হাউজি বাম্পার ও জুয়ার আয়োজন চলছে। টাকার লোভে একাজে মদদ দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোক। আমরা এ বেহায়াপনা চাই না। ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল পদের ২-৩ জন নেতা সকালে প্রতিরোধ কমিটিতে আবার বিকেলে মেলা পরিচালনা কমিটিতে বসে মিটিং করেন। আমরা তাদেরকে ধিক্কার জানায়। মেলার প্রতিরোধে কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচী দিয়ে যাব। নোংরামি বন্ধ না করে আমরা ঘরে ফিরে যাব না। প্রয়োজনে মহাসড়ক বন্ধ করে দিব। প্রশাসনকে মেলা প্রতিরোধে সহায়তা করার অনুরোধ জানান বক্তারা। মেলা বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা। ওদিকে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে দুপুর থেকেই শাহবাজপুরে অবস্থান করছিল সরাইল থানা পুলিশের পাশাপাশি এক প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ। সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোঃ শাহ আলম বকাউল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। মেলার পরিচালক আবদুর রহমান শরীফ বলেন, আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই মেলার কাজ শুরু করেছিলাম। তারা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে আমার প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন মেলা বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, উচ্চ আদালতের একটি আদেশ থাকায় প্রতিরোধ কমিটির লোকজনকে আইনি সহায়তা নিতে বলেছিলাম।