বিজয়নগরে স্কুল চলাকালে মাঠে ছাত্রলীগের সমাবেশ, দরজা-জানালা বন্ধ করে চলেছে পাঠদান
একদিকে মাইকের উচ্চশব্দ, অন্যদিকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় পাশাপাশি অবস্থিত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘কমন মাঠে’ কর্মী সমাবেশের আয়োজন করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ। এতে বিঘ্নিত হয়েছে তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম।
রোববার (২২ জানুয়ারি) আয়োজিত সমাবেশে উচ্চশব্দে মাইক বাজানোর কারণে দরজা-জানালা বন্ধ করে পাঠদান করাতে হয়েছে প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকদের।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় এমপির (র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী) নামে হলেও পাঠদান চলমান অবস্থায় এমন কর্মী সমাবেশের উদ্যোগ নেওয়ায় আশপাশে উপস্থিত অনেকেই অস্বস্তি প্রকাশ করেন।
এদিন দুপুরে উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের চম্পকনগর উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর কলেজ, চম্পকনগর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘কমন মাঠে’ সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
সমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভন।
এ ছাড়াও, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল খাঁন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সমাবেশ ঘিরে মাঠের শব্দদূষণ ও কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বিঘ্নিত হয় শিক্ষার্থীদের পাঠদান। মারাত্মক শব্দদূষণের কারণে শিক্ষার্থীরা অস্বস্তিবোধ করছিল। উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, শব্দদূষণের কারণে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারেনি। বেশি শব্দদূষণের কারণে দরজা-জানালা বন্ধ করে শিক্ষকরা পাঠদান করিয়েছেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে আয়োজিত কর্মী সমাবেশে যোগদান করেন। এ ছাড়া কলেজের অদূরে মাইকের আওয়াজ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে।
বিদ্যালয় দুটির শিক্ষকেরা বলছেন, মাঠে সম্মেলন হবে তাদের জানা ছিল। আয়োজক কমিটি শিক্ষার্থীদের বিষয়টি ভাবেননি। সরকারি দলের সম্মেলন হওয়ায় কিছু ‘বলতে’ পারেননি। তবু নিয়ম রক্ষার কারণে বিদ্যালয় খোলা রাখতে হয়েছে। শব্দদূষণের মধ্যেই পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হয়েছে। তবে ফতেহপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান দস্তগীর দাবি করেন, ক্লাস চলমান রাখতে উনার স্কুলের কোনও সমস্যা হয়নি।
চম্পকনগর উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর কলেজের অধ্যক্ষ আবদুসাত্তার সরকারকে ‘কলেজ খোলা অবস্থায় মাঠে কর্মী সমাবেশের অনুমোদন নিয়েছে কিনা’ জানতে চাইলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ফোনে এ ব্যাপারে কোনও বক্তব্য দিতে পারবো না।’ ‘সরাসরি এসে দেখা করেন’ বলে কল কেটে দেন। এরপর কয়েকবার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
চম্পকনগর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাহেলা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, হাইস্কুলের সামনে কর্মী সমাবেশ করবে, এ ধরনের কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। আমরা স্কুলের দরজা-জানালা বন্ধ করে ক্লাস নিয়েছি।
উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আল মামুনকে ‘স্কুল খোলা রেখে সমাবেশ করতে পারে কিনা’ প্রশ্ন করলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টের সহকারী প্রধান হিসেবে আমি বক্তব্য দিতে পারি না। আপনি প্রধানকে কল করুন।’
‘স্কুল খোলা অবস্থায় সমাবেশ করতে পারেন কিনা’- এ বিষয়ে কিছু বলতে অনুরোধ করলেও তিনি এড়িয়ে যান। এরপর উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল জলিলের মোবাইলে কল দিলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়াকে একই প্রশ্ন করা হলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা, এমনটা নলেজে ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে কোনও প্রোগ্রাম করতে দিই না। কিন্তু এটা হয়ে গেছে।’ বিষয়টি ‘ইগনোর’ করতে তিনি এই প্রতিবেদককে অনুরোধও করেন।
এ বিষয়ে জানতে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ ইরফান উদ্দিন আহম্মেদের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে পাঠদান অবস্থায় মাঠে রাজনৈতিক কোনও প্রোগ্রামের অনুমোদন দেওয়া ঠিক হয়নি। আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে খবর নিচ্ছি।’