বিজয়নগরে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদিরের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৬৮ নেতা-কর্মীর নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরেকটি মামলা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিএনপির নেতা খালেদ হোসেন মাহবুবের গাড়িবহরে হামলার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার বিজয়নগর থানায় এ মামলা করা হয়। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হলো। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম রাষ্ট্রু বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন খালেদ হোসেন। নির্বাচনের কিছুদিন আগে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে উপজেলায় বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণাসহ স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার কর্মসূচি ছিল। ওই কর্মসূচিতে খালেদ হোসেন গাড়িবহর নিয়ে উপজেলা পরিষদের কাছাকাছি পৌঁছামাত্রই ওত পেতে থাকা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঘেরাও করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এ সময় কেরোসিন ও পেট্রল দিয়ে খালেদ হোসেনের জিপসহ দুটি গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। এতে দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়। তাঁরা দা, লাঠি, রড, বল্লম নিয়ে ইটপাটপকেল নিক্ষেপ করে বিএনপির নেতা–কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালান। সে সময় কয়েকজন গুরুতর আহত হন। অন্যরা দৌড়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান। সে সময় ঘটনার পরদিন থানায় মামলা করতে গেলে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদিরের অবৈধ হস্তক্ষেপে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাছিমা মুকাই আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মিয়া ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউসার মিয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুনির্মল সাহা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুব হোসাইন, চান্দুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক শামীম চৌধুরী, পত্তন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান রতন, পত্তন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দুধ মিয়া, উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফয়জুন্নেছা টুনি, হরষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সারোয়ার রহমান ভূঞা, উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক আলম তারা ওরফে দুলি, বুধন্তি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সৈয়দুল ইসলাম, সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাফায়েত আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সাবেক গণপূর্তমন্ত্রীসহ ১৬৮ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে মাদ্রাসাছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় মোকতাদিরসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ২৬ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গত শুক্রবার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। ২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি মাদ্রাসাছাত্র হাফেজ মাসুদ আহমেদ ওরফে মাসুদুর রহমান (২০) নিহত হওয়ার ঘটনায় শনিবার রাতে সদর থানায় আরেকটি একটি হত্যা মামলা হয়।