আশুগঞ্জে উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সীর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার বালু লোপাটের অভিযোগ



মেঘনা নদী খননে উত্তোলিত হয় বালু।জমা করা হয় রেলওয়ের জায়গায়। এই নিয়ে রেলওয়ে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঝে শুরু হয় চিঠি চালাচালি। নিলামে বালু বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে। সরকারিভাবে বালু বিক্রির ব্যবস্থা হওয়ার আগেই বেচাবিক্রি শেষ! হয়ে যায় বালুর পাহাড় গায়েব! কয়েক কোটি টাকার বালু লোপাটের অভিযোগ উঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। রেলপথ মন্ত্রণালয়েও দেয়া হয়েছে অভিযোগ। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড়।
জানা যায়, বিগত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চরসোনারামপুর এলাকায় মেঘনা নদী খননে উত্তোলিত বালু মজুদ করা হয় স্থানীয় রেলস্টটেশন ও সাইলোর মঝামাঝি রেলওয়ের একটি জায়গায়। জায়গা বন্দোবস্ত আনা কয়েকজনসহ ৪০/৫০ জনের একটি দলের বিরুদ্ধে সেখানে নদী খননের বালু রেখে বিক্রির অভিযোগ উঠলে রেলওয়ের সহকারি এস্টেট অফিসার, ফিল্ড কানুনগো ও আমিন সেখানে এসে বাঁধা দেন। ওই বছরের ১ মার্চ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট জেলার কর্মকর্তাকে রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী চিঠি দিয়ে তাদের জায়গায় অবৈধভাবে প্রবেশ ও বালু ফেলে ভরাট করা থেকে বিরত থাকতে বলেন।তারপরও সেখানে করা হয় বালুর ডিপো। পরবর্তীতে রেলওয়ে তাদের জায়গায় রাখা বালু নিলামে বিক্রি করবে বলে জানায়। এরপর ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একটি প্রকাশ্য নিলাম হয়। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা হন স্থানীয় চরচারতলা গ্রামের হানিফ মুন্সি। কিন্তু রেলভবন সেই নিলামকে অনুমোদন দেয়নি।এরপর এনিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রীট করেন হানিফ। যা এখনো নিস্পত্তি হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে হানিফ মুন্সি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কয়েক মাস আগে রেলওয়ের ওই বালু ক্ষমতার জোরে বিক্রি করতে শুরু করেন। এর আগে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে তিনি জানান দেন বালুর টেণ্ডার তিনিই পেয়েছেন।

পবিত্র মাহে রমজানে এ ধরনের নীতিবাক্য তিনি প্রচার করে বেড়ালেও বর্তমানে উঠা অভিযোগে সব ম্লান হয়ে গেছে।
রেলপথ মন্ত্রী বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগ এবং সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে জনি মুন্সি ও ভাইপো রনি মুন্সি পরিচালনা করছেন এই বালুর ব্যবসা। ট্রাক-ট্রাক্টরে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিক্রি করা বালু। ধারণা পাওয়া গেছে, এখানে মজুদকৃত প্রায় ৪৫/৫০ লাখ ঘনফুট বালুর প্রায় সবই বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। প্রতি ফুট ৪-৫ টাকা দরে বিক্রির হিসেবে বালুর দাম আসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। মেসার্স মিজান কনস্ট্রাকশন নামে বানানো একটি রসিদ দেয়া হয় বালু ক্রেতাদেরকে। অবৈধভাবে বালু বিক্রিতে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তার যোগসাজস থাকার অভিযোগ উঠেছে।
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সঙ্গে রোববার দুপুরে যোগাযোগ করলে তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন জানিয়ে এই বিষয়ে সার্ভেয়ারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। সার্ভেয়ার মো. ফারুক হোসেন জানান, ‘গত ২২ ও ২৫ জুন মোট ১২জনকে আসামী করে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সী বালু বিক্রিতে তার জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার এবং উচ্চ আদালতে রীট করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘আদালতে রীটের শুনানী হলে আদেশ আমার পক্ষেই আসবে। আর আদেশ পেলে মজুদকৃত বালুতো আমি বিক্রি করতেই পারবো।’