Main Menu

নাওঘাট গ্রাম রাতে “শহর”

+100%-
মোঃ তারিকুল ইসলাম সেলিম: আলোর ঝলমলে একটি গ্রাম নাওঘাট। আশুগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে গ্রামটির অবস্থান। অত্যান্ত পরিচ্ছিন্ন, সুন্দর এই গ্রামে প্রচীনকাল থেকেই শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির ব্যাপক চর্চ্চা ছিল। গ্রামের মানুষ খুবই শান্তি প্রিয়। মানবিক ও সহমর্মিতার পরিবেশে সবাই বসবাস করে। সর্বত্রই গ্রামটির সুখ্যাতি রয়েছে। রাতের আঁধারে গ্রামের নান্দনিক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। কয়েক দশক আগে গ্রাম অঞ্চলে মানুষ বিদ্যুতের আলো পাওয়া তো দূরের কথা; মফস্বল শহরগুলোতেও বিদ্যুতের আলো পুরোপুরিভাবে পৌঁছাইনি। গ্রামের মতো শহরের বাড়িতে সন্ধ্যা নামলে হ্যারিকেনের চিমটা মুছার হিড়িক পড়ে যেত। সবার ঘরেই হ্যারিকেনে আলো জ্বলত। তখনকার সময় সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে হ্যারিকেনের আলোই ছিল ভরসা। সবার বাড়িতে হ্যারিকেনের হালকা আলোতে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার করত। এই আলোতে পরিবারের সবাই একসাথে বসে রাতে খাওয়া-দাওয়া করার সে দৃশ্য আজকাল দেখা যায় না। গ্রামের আলোহীন ঘুটঘুটে অন্ধকার সুনশান নিরব রাস্তায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে মনের ভিতর ভূতুড়ে ভয় উঁকি মারত। ঐসময়  ঝোপঝাড়ে জোঁনাকির মিটিমিটি সবুজ বাতির আলো সবার নজর কেড়ে নিত। তখকার দিন গ্রামের মানুষ রাতের অন্ধকারে রাস্তা-ঘাটে চলাচলের জন্য এক মাত্র অবলম্বন ছিল হ্যারিকেন কিংবা টর্চ লাইটের আলো।
বৈদ্যুতিক স্বর্ণ যুগে শহরের মতো অজরপাড়া গ্রামেও এখন হারিকেন-কোপির আলো তেমন চোখে পড়ে না। আমাদের ঐতিহ্য থেকে এখন কোপি-হ্যারিক্যান হারিয়ে গেছে। নাওঘাট গ্রামের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎতে আলো জ্বলে। দিন বদলে বাড়ির আঙিনায় আলো ছড়ানোর মন মুগ্ধকর দৃশ্য ফুটে ওঠে। অনেকেই রাতে রাস্তা-ঘাটে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সোলার লাইট স্থাপন করা হয়েছে। সারা রাত লাইটগুলো ঝলমলে আলো ছড়ানোর পাশাপাশি গ্রামটিকে আলোকিত করে রাখে। এক সময় গ্রামে কোন সড়ক ছিল না। ফলে প্রতিটা বাড়িই ছিল আলাদা আলাদা। সময়ের আবর্তে এখন গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়ির সাথে রাস্তার সংযোগ রয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠেছে অনেক দোকান-পাট। দোকানগুলো সব সময় জমজমাট থাকে। সন্ধ্যা নামলেই গ্রামটি আলোর ঝলমলে মফস্বল শহরের রূপ ধারণ করে।
নাওঘাট গ্রামের মানুষ পূর্বকাল থেকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখে। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান শহরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে; ‘আমার গ্রাম আমার শহর’; সরকারের এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গ্রাম ও নগরের মধ্যে বৈষম্য কমাতে গ্রামের পরিকল্পিত ও উন্নত রাস্তা-ঘাট, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা, উন্নত পায়োনিষ্কাশন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা ও ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ-সহ আধুনিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত হলে শহরের আদলে নাওঘাট গ্রামই শহরে রূপান্তরিত হবে।





Shares