মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক আর নেই
নিউজ ডেস্ক : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মো. শাহ আলম বলেন, মন্ত্রী ছায়েদুল হক দীর্ঘদিন ধরে জ্বর, ইউরিন ইনফেকশন ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছিলেন। তিনি আগস্ট মাস থেকে প্রোস্টেট গ্লাণ্ডের সংক্রমণে ভুগছিলেন এবং ১৩ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালের আইসিইউ-এর ১৬ নম্বর বেডে লাইফ-সাপোর্টে ছিলেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার একমাত্র পুত্র ডা. এ এস এম রায়হানুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
মন্ত্রী ছায়েদুল হক ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে মোট পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার নিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন।
ছায়েদুল হক ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ১৯৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো নাসিরনগর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। তার সময়েই মৎস্য ও ছাগল-উৎপাদনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করে। তার প্রচেষ্টায় ইলিশ উৎপাদনেও ঈর্ষণীয় সাফল্যের কারণে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দেশের জনগণ অভাবনীয় স্বল্পমূল্যে ইলিশ খেতে সক্ষম হয়েছে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নাসিরনগরের ব্যাপক উন্নয়নে স্মরণীয় অবদান রেখেছেন।
একজন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিকের বিদায়
দেশের বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সৈনিক ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলাধীন পূর্বভাগ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জনগ্রহণ করেন।
তার মাতা মরহুমা মেহের চান্দ বিবি ও পিতা মরহুম আলহাজ মোহাম্মদ সুন্দর আলী। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এছাড়া, তিনি আইন বিষয়ে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আইন পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন ও বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের এ্যাডভোকেট হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
মোহাম্মদ ছায়েদুল হক ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৬৫ থেকে ৬৬ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।
১৯৬৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি স্বাধীনতা-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। এরপর থেকে আজীবন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে রাজনীতি করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের ত্রিপুরায় অবস্থিত লেম্বুছড়া প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ওপর প্রশিক্ষণ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সজ্জন রাজনৈতিক হিসেবে তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। নিজ এলাকা থেকে তিনি ৫ বার সাংসদ নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর একাধারে ৭ম থেকে ১০ম সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে নির্বাচিত হন।
প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ ৭ম ও ৯ম সংসদে তিনি খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বাণিজ্য, অর্থ, সরকারি তহবিল ও বিশেষ বিষয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১০ম জাতীয় সংসদে ৫ম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।
মন্ত্রী ছায়েদুল হক ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন নাসিরনগর ডিগ্রি কলেজ, চাতালপাড় ডিগ্রি কলেজ ও চাতালপাড় উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
মন্ত্রী হওয়ার পর নিজ মন্ত্রণালয়ের ঈর্ষণীয় সাফল্য বয়ে আনেন তিনি। তার সময়ে বাংলাদেশ ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের ৪র্থ স্থান অর্জন করে।