নাসিরনগরে বিলের তদন্তে পক্ষপাতের অভিযোগ, ইউএনও বললেন চাপে আছি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে নির্দিষ্ট একটি সমবায় সমিতিকে বিল পাইয়ে দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিয়েছে ক্ষুদ্ধ জেলেরা। এ ব্যাপারে ইউএনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিলেও চাপে আছেন বলে স্বীকার করেছেন। জীবিকা উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম এ বিল সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত জেলেদের দেয়ার দাবি জেলেদের।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ৩৯৬. ৬৫ একরের বিল শাপলা বিলের অবস্থান নাসিরনগর উপজেলায়। তবে বিলের অধিকাংশ জমির মালিকানা সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ও মলাইশ গ্রামের লোকজনের। বিলের পাশ দিয়ে বয়ে চলা তিতাস ও শাপলা বিল, এই এলাকার সাত শতাধিক জেলের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম। সম্প্রতি ১৪৩০ -১৪৩২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনবছরের জন্য বিলটি ইজারা দিতে বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে তদন্তক্রমে এবং উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ছক মোতাবেক প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন। তদন্তে জলমহাল নীতি মালা ২০০৯ উপেক্ষা করে জেঠাগ্রাম মৎসজীবী সমবায় সমিতিকে বিল বরাদ্দ দেয়ার জন্য সুপারিশ করে। যেখানে জলমহাল নীতি মালা ২০০৯ এর (৫) ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ীও সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত নিকটবর্তী বা তীরবর্তী প্রকৃত মৎস্যজীবিদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা। জলমহাল নীতি মালা ২০০৯ এর (৫) ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ীও নির্দিষ্ট নিকটবর্তী বা তীরবর্তী প্রকৃত মৎস্যজীবিদের সমিতি যা সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত, সেই সমিতি বা সমিতিসমূহ নিদিষ্টি বা তীরবর্তী জলমহাল ব্যবস্থাপনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। শাহজাদাপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির আবেদন উপজেলার বাইরের হওয়ায় বিবেচনাযোগ্য নয় বলেও ইউএনও ছক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। তবে বিল বরাদ্দের শর্ত কিংবা জলমহাল নীতিমালার কোথাও সমবায় সমিতিকে একই উপজেলার হতে হবে এমন উল্লেখ নেই । এ অবস্থায় ইউএনওর বিরুদ্ধে বিতকির্ত এবং পক্ষপাত মূলত তদন্তের অভিযোগ এনে তা বাতিল করতে এবং পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন স্থানীয় জেলেরা। এ বিল বন্দোবস্তু তাদের অনুকূলে না দিলে জীবন জীবিকার দুর্বিষহ হয়ে উঠবে বলে জানান জেলেরা।
জেলে রামচন্দ্র দাস বলেন, নাসিরনগরের লোকজন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিল নিতে চাচ্ছে। বিল নিয়ে গেলে আমরা বউ বাচ্চা নিয়ে খাব কি?
তপন চন্দ্র দাস নামের আরেক জেলে বলেন, আমাদের আরেকটি বিল, বিল বালিঙ্গাও তারা জোর করে লিজ নিয়ে গেছে। এখন এইটা নিলে আমরা কই যাব?
শাহজাদাপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির লি: সভাপতি অধীর চন্দ্র দাস বলেন, পূর্ব পুরুষ থেকে এ বিল ও নদীতে আমরা মাছ ধরে জীবন চালাই। আমাদের ৭০০ এর অধিক জেলের একমাত্র ভরসা এই বিল। আমাদের পেটে লাথি দিয়ে এ বিল এখন প্রভাবশালীরা নিয়ে যাচ্ছে। আমি সরকার ও উর্ধত্বন কর্মকর্তাদের কাছে বিলটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় বিলে ডুবে আত্মাহুতি দেয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না।
শাহজাদাপুর ২ং ইউপি মেম্বার মোঃ জুয়েল মিয়া বলেন, বিল শাপলা নাসিরনগর মৌজায় পড়লেও এ বিলের ৯৫ ভাগ জমিই শাহাজাদাপুর ইউনিয়নের। আমাদের দাসপাড়ার জেলেদের আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে বিল। প্রকৃত জেলেদের মূল্যায়ন করা হলে বিল দিয়ে দাঙ্গা ফ্যাসাদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউএনও কার্যালয়ে গেলে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হন নি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ফখরুল ইসলাম । তবে জলমহাল বরাদ্দের তদন্তের বিষয়ে তিনি চাপে আছে বলে জানান।
জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।