পরিবারের লোকজনের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পলায়ন
নাসিরনগরে জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নেওয়ার পথে প্রবাসীর মৃত্যু:: শ্বশুরবাড়ি জেঠাগ্রাম ১৪ দিনের জন্য লকডাউন
নিজস্ব প্রতিবেদক:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অতিমাত্রায় জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও কাশি নিয়ে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মো. শাহা আলম (৩৭) নামে এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে তাঁর মৃত্যু হলেও ১০টায় বিষয়টি জানাজানি হয়। করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ওই প্রবাসীর নিজের বাড়ি মুকবলপুর ও শ্বশুরবাড়ি জেঠাগ্রাম ১৪ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রবাসীর মৃত্যুর পরপর তার পারিবারিক কবরস্থান পূর্বভাগ ইউনিয়নের মুকবুলপুর গ্রামে দাপন সম্পন্ন করা হয়। এদিকে স্ত্রী ও শালিকাবাদে শ্বশুড়- শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন সবাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পালিয়ে গেছে।
নিহত ব্যক্তি উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের মো. গফুর মিয়ার ছেলে। তবে তিনি বিদেশ থেকে আসার পর তাঁর শশুর বাড়ি গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামে থাকতেন। গত ১৮মার্চ তিনি মালয়েশিয়া থেকে দেশে আসেন এবং ১ এপ্রিল তার হোমকোয়েরেন্টিন শেষ হয়।
উপজলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল শরীরে জ্বর নিয়ে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহা আলম। সেসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তাকে রক্তের পরীক্ষার করতে বলেন। রক্তের পরীক্ষায় ওই প্রবাসীর শরীরের রক্তে টাইফঅয়েডের জীবনু ধরা পড়ে। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রবাসফেরত ওই ব্যক্তিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পরামর্শ দিলেও তিনি শ্বশুরবাড়িতে চলে যান।
গত সোমবার রাতে প্রবাসফেরত ওই ব্যক্তি অতিমাত্রায় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ভূগছিলেন বলে পরিবারের লোকজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাকে জানান। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ওই প্রবাসীকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার জন্য বললেও তারা যাননি। মঙ্গলবার রাতে প্রবাসফেরত ওই ব্যক্তিকে সিএনজি চালিত একটি অটোরিকশায় করে স্ত্রী, বাবা ও শ্বশুর নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেসময় রাস্তায় ওই প্রবাসীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সংবাদ শুনার পরপর সিএনজি চালকসহ নিহতের পরিবারের অন্যান্য লোকজন সেখান থেকে পালিয়ে যান।
নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তি গত ৪ এপ্রিল শরীরের অতিমাত্রায় জ্বর নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য আসেন। তখন রক্ত পরীক্ষায় তার শরীরের টাইফঅয়েডের জীবানু ধরা পড়ে। মঙ্গলবার হাসপাতালে আনার আগেই ওই প্রবাসীর মৃত্যু হয়। লক্ষণগুলো দেখে ওই প্রবাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ হচ্ছে। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় বলেন, লক্ষণগুলো করেনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ তৈরি করছে। ইতিমধ্যে নমুনা নেওয়া হয়েছে। পরিবার সকল সদস্যকে আইসোলেশনে রাখা হবে।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা আশরাফী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ওই প্রবাসীর নিজের বাড়ি মুকবলপুর ও শ্বশুরবাড়ি জেঠাগ্রাম ১৪ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ওই রাতেই মকবুলপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে করোনা-ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কায় আইইডিসিআরের নিয়ম মেনেই মরদেহটি দাফন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সামনের গেইটে অনুষ্ঠিত তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন উপজেলা কমপ্লেক্স মসজিদের খতিব মূফতি মুখলেছুর রহমান।