Main Menu

দিশেহারা নাসিরনগরের চাতলপাড়ের মানুষ

করোনার দুর্গতিতে যোগ হচ্ছে নদী ভাঙনের দুর্ভোগ

+100%-

নিজস্ব প্রতিবেদক:: একদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ধুঁকছে মানুষ। লকডাউনের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মখীন হয়েছে। চলছে চারদিকে হাহাকার। এরই মধ্যে আবারো শুরু হয়েছে মেঘনার ভাঙন। বাড়িয়ে দিচ্ছে অভাবী মানুষের দুঃখ-কষ্ট। এমনই চিত্র এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চকবাজার, চাতলপাড় বড় বাজার ও বিলের পাড়ের আফিস পাড়ার।
ইতোমধ্যে মেঘনার ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে শতাধিত পরিবার। অচিরেই এই ভাঙন রোধ করা না গেলে গৃহহীন হয়ে পড়বে আরো এলাকার বাসিন্দারা। গ্রামবাসীরা এ ব্যাপারে প্রশাসন ও সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
সরেজমিনে ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে বলে জানা যায়, মেঘনা তীরবর্তী শতবছরের ঐতিহ্যের সাক্ষী চাতলপাড় বাজার, চাতলপাড়-চকবাজার, বিভিন্ন মসজিদ, মন্দিরসহ এলাকার একটা বিরাট অংশ বিলীনের আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় গ্রাম, চকবাজার, চাতলপাড় বড় বাজার ও বিলেরপাড়ের শতাধিক দোকান, ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর নদীতে বিলিন ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। লাগোয়া ভলাকুট ইউনিয়নের দুর্গাপুর ও বালিখোলা কিছু অংশ মেঘনা নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। বাড়িঘর হারিয়ে নৌকায় বসবাস করছেন। অনেকেই আবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৭ দিনে কেবল বিলের পাড় গ্রামেরই কমপক্ষে ১০টি বসত-ঘর বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে।
‘বিলের পাড়ের আফিস পাড়ায় ছিল আমার একটি ওয়ার্কশপের দোকান। ধানের জমি বেইচ্চা দোকান বানাইছিলাম। নদীতে সব ভাসাই নিয়া গেছে। একদিকে সব হারিয়ে মাথায় চিন্তার ভাঁজ অন্যদিকে করোনার কারণে জীবনের চাকা ঘুরবে কীভাবে সে চিন্তায় দিশেহারা। যৌথ পরিবারের ১৪ জন সদস্য নিয়ে আছি বিপাকে।’বলছিলেন বিলের পাড়ের আফিস পাড়ার ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ী রেজ্জাক মিয়া। এখন ভলাকুট ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে বড় ভাইয়ের কাছে থাকছেন তিনি।
সরেজমিনে কথা হয় বিলেরপাড় জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল আহাদের সঙ্গে। তাঁর চোখে-মুখেও অসহায়ত্বের ছাপ। করুণ চোখে ‘সর্বনাশা’ নদীর দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ নিয়ে বলেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিলের পাড় জামে মসজিদটিতে ইমামতি করি আমি। যেকোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে এই মসজিদটিও। মসজিদটির পাশেই আমার ৩০ শতাংশ জায়গা নিয়ে বসতঘর ছিলো। সে ঘরও নদী ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন সবকিছু হারিয়ে অন্যের বাড়িতে ভাড়া করা ঘরে থাকছি। মসজিদে ইমামতি করেই সংসার চলে। করোনার কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে আছি বিপাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সোহেল মিয়া, দুলু মিয়া, আলহাজ মিয়া, মঞ্জু মিয়া, আশিক মিয়া, জ্যোতিষ সূত্রধর, জুলহাস ও ফায়েজ মিয়ার ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে মেঘনার অতল গহ্বরে। পৈত্রিক ভিটার মায়া ছেড়ে বাঁচার তাগিদে অনেকেই চলে গেছেন এলাকা ছেড়ে। স্থানীয়দের দাবি- নদী দখল করে ইটভাটা নির্মাণ, অপরিকল্পিত নদী ড্রেজিং, নদীতে বাঁশ দিয়ে মাছের অভয়আশ্রম তৈরি ও শাখা নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে জেগে উঠেছে নতুন-নতুন চর। পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক অবস্থা না থাকায় এমনকি সরকারিভাবে নদী ড্রেজিং ধীরগতিভাবে চলায় দীর্ঘস্থায়ী কোন সুফল পাচ্ছে না মেঘনা পাড়ের চাতলপাড় ইউনিয়নের বাসিন্দারা। পরিণতিতে, পানির ¯্রােত বিভিন্ন স্থানে বাধাগ্রস্থ হয়ে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। ভাঙছে বাড়ি-ঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও জমি-জমা।
এলাকাবাসীর মতে, গতবছর স্থানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের অস্থায়ী পদক্ষেপে নদীতে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তবে এ বছর ভাঙনের আকার আরো বিস্তৃত হওয়ায় উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তারা। তাই দ্রুত স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ আব্দুল আহাদ বলেন, গত তিন বছর ধরে চাতলপাড়ের বিভিন্ন গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়েছে। পাশের কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার বাংগালপাড়া ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ে মেঘনা নদী দখল করে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন মো. জাহের মিয়া। ইটভাটার কারণেই মূলত মেঘনার নদীর পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি পরিবর্তন হয়ে ভাঙনের সৃষ্টি। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইটভাটার মালিক জাহের মিয়া এ প্রতিনিধিকে জানান, আমার নিজের জায়গায় ইটভাটা দিয়েছি। আমি নদীর কোন জায়গা দখল করিনি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাসিরনগর শাখার শাখা কর্মকর্তা প্রনয়জিৎ দেব সমকালকে জানান, নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষ করতে চাতলপাড়ের শ্মশানঘাট থেকে চাতলপাড় বড় বাজার পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বর্তমানে জরুরিভিত্তিতে অধিক ক্ষতিগ্রস্থ ৩০ মিটার এলাকায় ২২০০ বালুর বস্তা ফেলা হবে। বিলের পাড়ের এলাকায় ভাঙনরোধেও বালুর বস্তা ফেলা হবে।






Shares