২৩০০ কোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা একরামুজ্জামান
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শিল্পপতি সৈয়দ এ. কে একরামুজ্জামান। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাকেই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী হিসেবে দেখছেন সাধারণ মানুষ। তার নির্বাচনে অংশ নেয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনটির নির্বাচন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সৈয়দ এ. কে. একরামুজ্জামান এর আগেও এই আসন থেকে বিএনপির টিকিটে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটের মাঠে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দেয়া হলফনামায় ৬টি মামলার কথা উল্লেখ রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি মামলা চলমান রয়েছে বলেও এতে জানানো হয়েছে।
এছাড়া হলফনামার তথ্যানুযায়ী, তার কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৮০৯ টাকা, বাড়ি-এপার্টমেন্ট-দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে তার নিজের আয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৩ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৮ টাকা। পাশাপাশি ব্যবসা থেকে আয় ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩ টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্রও ব্যাংক আমানত থেকে ১ কোটি ৭২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৪ টাকা, আরএকে সিরামিকস থেকে সম্মানী ভাতা ২ কোটি ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭৬ টাকা, শ্যামল বাংলা মিডিয়া লিমিটেড থেকে সম্মানী ভাতা ১৪ লাখ ৪০ হাজার, অংশীদারি কারবার থেকে আয় ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ১৯৬ টাকা, মূলধনী আয় ৩৬ কোটি ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৬ টাকা ও করমুক্ত আয় ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৪ টাকা।
এদিকে, হলফনামায় তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকার পরিমাণ ২৩ কোটি ৩৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৯২ টাকা, আর স্ত্রীর নামে ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৩ টাকা দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ২১ লাখ ৩১ হাজার ১৪৯ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৬৬ টাকা। পাশাপাশি বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারের মধ্যে নিজের নামে অ-তালিকাভুক্ত শেয়ার ২৮২ কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ৬১০ টাকা, তালিকাভুক্ত ১৪ কোটি ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৯১৭ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৩ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে।
এছাড়াও অংশীদার কারবার ও ব্যবসায়িক মূলধনের পরিমাণ ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯৩ টাকা, ঋণ প্রদান ৫১ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৫ টাকা, শেয়ারমানি-ডিপোজিট ৪২ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৪৫ টাকা। সেই সঙ্গে স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে তার স্বর্ণসহ অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকার।
এর বাইরে স্থাবর সম্পদ হিসেবে তার রয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৭ টাকা মূল্যের ২০৬৪ শতাংশ কৃষি জমি, ৩৫ কোটি ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৯ টাকা মূল্যের ১০৫৯ শতাংশ অকৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬০ টাকার ৫৪ পয়েন্ট ৪৪ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে।
এছাড়াও ২১ হাজার ৯৭১ বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক ভবন, যার মূল্য ২২ কোটি ২৪ লাখ ১ হাজার ৩২ টাকা এবং ৬ পয়েন্ট ৬০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ১০ কোটি ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০৩ টাকার আরেকটি ভবন ছাড়াও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা দামের ১০ পয়েন্ট ৭ শতাংশ জমিসহ বাড়ি এবং ২৪৪৯ বর্গফুটের ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকা দামের ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
হলফনামা অনুযায়ী, তার ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৩০১ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ১৫৪ টাকা। পাশাপাশি হলফনামা অনুসারে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ২০৭ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। যার মধ্যে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৮৪ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডে ১৪ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডে ২০ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় ৩০ কোটি টাকা এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৫৮ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এছাড়াও হলফনামার তথ্যানুযায়ী, তার বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বিপরীতে ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৯৪ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৪ টাকা। যার মধ্যে উত্তরা ব্যাংকে ৯৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ঢাকা ব্যাংক লিঃ ১০৪ কোটি ৬১ লাখ ৭১ হাজার ৮২৯ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসিতে রয়েছে ৩৩৭ কোটি ২২ লাখ ১৯ হাজার ৬৫ টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৩১ কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার, এন আর বি ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৪ টাকা, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ১৬ কোটি ৬৪ লাখ ১ হাজার ৯৬২ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৪০ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ২০৩ কোটি ২৫ লাখ ৭১ হাজার ৬৫৪ টাকা এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৪১ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এর বাইরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসিতে রয়েছে ৩৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ১২৬ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৭৮ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসিতে রয়েছে ৩৬ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৩৬৭ কোটি ৯৯ লাখ ২৩ হাজার ৮৫ টাকা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ রয়েছে ৭১ কোটি ৬ লাখ ৪২ হাজার ১২৬ টাকা, আই ডি এল সি ফাইনান্স লিমিটেডে রয়েছে ৬৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪৪ টাকা, পূবালী ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৮৪ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডে রয়েছে ১১৩ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৯১৩ টাকা, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ২০ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৩০ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ১৩৫ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ টাকা, ব্রাক ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৭৪ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ৫৬৬ টাকা এবং সোশাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে রয়েছে ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ২৫ হাজার ৯৪৫ টাকা।