সরাইলে ভূমি জবর দখল ও রাস্তা বন্ধ করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মানের অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অরুয়াইল ইউপির অরুয়াইল গ্রামে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি জবর দখল করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জবর দখেলর সময় ওই জমিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সাথে হিন্দু জেলে পাড়ার একটি সরকারি রের্কডের কাঁচা সড়কও বালু দিয়ে ভরাট করে তাতে প্রকল্পের ঘর নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে ১৬ শতক ডোবা ও ২১ শতক বাড়ি কিনেন। পরে তিনি ডোবা ভরাট করে ঘর নির্মাণ এবং বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ রোপন করেন। সম্প্রতি গত ১৬ নভেম্বর অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন তার ব্যাক্তিমালিকানার জায়গায় খাস জমি আছে এমন দাবি করে কোন পূর্ব নোটিশ না দিয়ে ঘর ভেঙ্গে ফেলে এবং কয়েকলক্ষ টাকা মূল্যের গাছ কেটে ফেলে। বর্তমানে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মানের কাজ চলছে। গাছকাটা এবং ঘর ভাঙ্গার পুরো প্রক্রিয়ার সময় চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের বড় ভাই আইয়ুব হোসেন উপস্থিত ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বাড়ির কেয়ারটেকার ফরিদুল হক বলেন, যদি এখানে খাসের জায়গা থাকে আমরা দিয়ে দিব। কিন্তু তারা আমাদের না জানিয়ে , কিছু না বলে রাতের আধারে ঘর ভেঙ্গে, গাছপালা কেটে ফেলেছে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। তিনি বলেন, ২৫-৩০ বছর আগের জায়গা আজ হঠাৎ করে খাস হয়ে গেছে। ঘর ভাঙ্গার কারণে এখন আমরা কয়েকটা পরিবার অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছি।
শুধু এ জমিই নয়। এরপাশে জেলে পল্লীর সরকারি রেকর্ডের রাস্তায়ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মানের জন্য উপযুক্ত বলে প্রস্তাবনা দিয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান। এর প্রতিবাদ জানিয়ে এবং এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ না করতে সজীব দাস নামে এক ব্যক্তি উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছে। আবেদন পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ২২০২ নং দাগের এই রাস্তা দিয়ে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ যাতায়াত করে এবং একটি পানি নিষ্কাশনের ড্রেন রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের ইচ্ছায় এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এর ফলে তাদের বাজারে আসা যাওয়া এবং পানি নিষ্কাশন ব্যহত হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় হরিমোহন দাস বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ হলে আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হইয়া যাইব। আমরা কালি বাইত(বাড়ি) যাইতারতাম না। নাও লইয়া বাইর অইতারতামনা, শ্মশানও যাইতারতামনা। আমরা চাই অন্য জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্প বানাক। এছাড়াও উপস্থিত স্থানীয়রা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা সকলেই অন্যত্র আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মানের দাবি জানান।
অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট শফিকুল ইসলাম বলেন, খাস জমি নির্ধারণে চেয়ারম্যান অনিয়ম করছেন। তিনি গরীব ও দুর্বল মানুষদের বাড়ির জায়গার খাস আছে কিনা তা বের করতে যতটুকু তৎপর ক্ষমতাবান ও ধনী লোকদের ক্ষেত্রে ততটা নন। খাস জমি বের করলে পুরো ইউনিয়নের সব খাস জমিই বের করা হোক। চেয়ারম্যান বাণিজ্য করছে। লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে তার পছন্দের তালিকা দিচ্ছে। আমরা সরকারী দলের লোক হয়েও তালিকায় কাদের নাম দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে কিছু জানি না। প্রশাসনের লোকজনকে এনে হাঁস পার্টি করে তিনি খাস জমি বের করছেন। আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে জননেত্রী শেখহাসিনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন হোক।
এদিকে, ঘটনাস্থলে গিয়ে নিন্ম মানের সামগ্রী দিয়ে গৃহনির্মাণ করতে দেখা গেছে। সেখানে কয়েক হাজার ইট স্তুপ করে রাখা আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মানহীন। মোরসালিন নামের এক ব্যক্তি সেখানে কাজ করছিলেন। তিনি জানান, তাকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। তিনিই কাজটি করছেন। তবে পিআইও তা অস্বীকার করছেন।
অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, গাছ কাটা কিংবা উচ্ছেদ কোনটাই তিনি করেন নি। সরকারি জায়গা সরকারের লোকজন উচ্ছেদ করেছে। তবে তার ভাইয়ের উপস্থিত থাকা “কৌতুহলবশত” বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, সিদ্দিকুর রহমানের পক্ষে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ঘটনা খতিয়ে দেখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন জানান, তিনি নতুন এসেছেন। ভূমি নির্বাচনসহ সামগ্রিক কাজ আগের ইউএনও করে গেছেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।