সরাইল বিটঘর গণহত্যা দিবস
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ রোববার ৩১ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক সেনারা তাদের এদেশীয় কয়েকজন রাজাকারের সহায়তায় ৮০ জনকে হত্যা করে। দিবসটি টিঘর গণহত্যা নামে পরিচিত।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিটঘর গ্রামের মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। এখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানি সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের ওপর গেরিলা আক্রমণ করতেন। ৩০ অক্টোবর দুপুরে বিটঘর গ্রামের পাশর্^বর্তী বেড়তলা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই দিন পাকিস্থানি এক সেনাসদস্যকে গ্রামবাসী বল্লম দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। একই সাথে গুরুতর আহত করে উপজেলা সদরের বাসিন্দা মনু মিয়া নামের এক রাজাকারকে।
এ সব ঘটনার প্রতিশোধ নিতে দুই শতাধিক পাকিস্তানিসেনা ও রাজাকাররা ৩১ অক্টোবর দিনভর বিটঘর গ্রামে হানা দিয়ে ৮০ জনকে হত্যা করে। ওই দিন মতিন ঠাকুর ও মন্নর আলী রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকাররা গ্রামে নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। এটি ‘বিটঘর গণগত্যা দিবস’ নামে পরিচিত।
যে স্থানে ৮০ জনকে একত্র করে হত্যা করা হয় সেই ভূমির মালিক ছিলেন শহীদ শামসুল হক। পরে তার স্ত্রী মালেকা খাতুন। স্বামীসহ ৮০ জনের মৃত্যুর স্থানটি আগলে ধরে রাখেন।
২০০৪ সালে মালেকা খাতুন তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুল হালিম ও সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান) রফিক উদ্দিন ঠাকুরের সহায়তায় ১৫ শতক ভূমি বিটঘর বধ্যভূমির নামে লিখে দেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক হায়ত-উদ-দৌলা খাঁন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যোগদানের পর বিষয়টি তাঁর নজরে আনেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তিনি ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম উপজেলার বিটঘর ও কালীকচ্ছ ধর্মতীর্থ বধ্যভূমি পরিদর্শন করেন। শহীদজায়ার ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে এলেন জেলা প্রশাসক। পরে জেলা প্রশাসকের প্রায় এক বছরের প্রচেষ্টায় বিটঘর বধ্যভূমিতে ‘বিটঘর গণহত্যায় শহীদের নামে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।