সরাইল উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক কমিটি নিয়ে বৈধতার চ্যালেঞ্জ!
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক কমিটি নিয়ে বৈধতার চ্যালেঞ্জ করেছে আবদুল হালিমের নেতৃত্বাধীন উপজেলা আ’লীগ। ২০১২ সালে দলীয় কোন্দলের জেরেই খুন হন আ’লীগ নেতা এ কে এম ইকবাল আজাদ। গোটা সরাইল হয়ে ওঠে অশান্ত। আবদুল হালিমের নেতৃত্বাধীন উপজেলা আ’লীগের ৮২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে জেলা আ’লীগ । নিস্ক্রীয়তা ও স্থবিরতার কারনে ২ বছর ঝিমিয়ে পড়েছিল ছিল এখানকার আ’লীগ।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে এডভোকেট নাজমুল হোসেনকে আহবায়ক ও উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলী আজাদকে যুগ্ম আহবায়ক করে ৩৩ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আ’লীগ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সম্পাদকের স্বাক্ষরিত এক পত্র পেয়ে নড়েচড়ে বসেন আবদুল হালিমের নেতৃত্বাধীন (স্থগিত করা) কমিটির নেতারা। তাদের দাবী জেলার দেওয়া স্থগিতাদেশ অবৈধ। কেন্দ্রের নির্দেশ ছাড়া জেলা আ’লীগ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। বর্তমান আহবায়ক কমিটির বৈধতা নিয়ে তারা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। এ জন্য তারা তৎকালীন সভাপতি আবদুল হালিম ও যুগ্ম সম্পাদক বাবুল হকের স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই কমিটির সকলকে আলোচনা সভায় যোগদানের আহবান জানান। এ সভা আহবানকে কেন্দ্র করে সরাইল আ’লীগে গত ৩-৪ দিন ধরে কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এদিকে, শনিবার সকাল ১১টায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে শুরু হয় সভা। যে কোন ধরনেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে সকাল ৯টা থেকেই ওই সভাস্থলের আশপাশে মোতায়েন ছিল পর্যাপ্ত পুলিশ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সভাস্থল দুদিকে ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বাবুল হকের সঞ্চালনায় আ’লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির বিশেষ আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মাহফুজ আলী।
এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন- বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ সাদেক মিয়া, এ আই মনোয়ার উদ্দিন মদন, মোঃ আরব আলী, সৈয়দ আলী আবদাল, সাংগঠনিক সম্পাদক (২) সাইফুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ মেরাজুল ইসলাম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ আবুল কাশেম, দপ্তর সম্পাদক শ্রী দীলিপ বণিক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ বশির উল্লাহ, প্রচার সম্পাদক মোঃ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শাহ মোঃ রহমত আলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া বেগম, কোষাধ্যক্ষ মোঃ দুলাল মিয়া, সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস আলী, মোঃ আব্দুস সামাদ, দীলিপ নাগ, এডভোকেট সৈয়দ মোঃ রিয়াদ, মোঃ ইকবাল হোসেন সদর ইউপি আ’লীগের সাবেক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ ইসমত আলী প্রমূখ। সভায় অনুপস্থিত ছিলেন বিলুপ্ত কমিটির সাধারন সম্পাদক রফিক উদ্দিন ঠাকুর।
৮২ সদস্যের কমিটির ৬ জন ইতিমধ্যে মারা গেছেন। আর গতকালের সভায় ৪০-৪২ জন উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি’র পত্রে পরিস্কার ভাষায় বলেছেন কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন কমিটি ভাঙ্গা বা বিলুপ্ত করা যাবে না। এটা জননেত্রী শেখ হাসিনারও নির্দেশ। ২০১২ সালে সরাইল উপজেলা আ’লীগের কমিটি বিলুপ্তির যে ঘোষনা দিয়েছিল জেলা আ’লীগ। সেটা ছিল ভুল ও বিধি বহির্ভূত। কারন আমাদের কমিটির বিলুপ্ত করার এখতিয়ার জেলা কমিটির নেই। তারা আবার ৩ মাসের জন্য একটি আহবায়ক কমিটিও করেছেন। এ কমিটিও অবৈধ। আমাদের কমিটি এখনও বহাল আছে। এখন থেকে আমাদের কমিটির নেতৃত্বেই চলবে সরাইল আ’লীগ।
আবদুল হালিম বলেন, জেলা কমিটি আমাদের কমিটি বিলুপ্ত করার অনুমতির জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেছিল। কেন্দ্র এখনো অনুমতি দেয়নি। তাহলে তারা কিভাবে আমাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে? এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমাদের কমিটিই এখন পর্যন্ত বহাল আছে। আমাদেরটাই সরাইল আ’লীগের বৈধ কমিটি।
সরাইল উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক এডভোকেট মোঃ নাজমুল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাই না।
লা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আল-মামুন সরকার এক বিবৃতিতে বলেন, উপজেলার নেতৃবৃন্দের বিরোধের কারনে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা স্থবির সাংগঠনিক কর্মকান্ডকে গতিশীল করার প্রয়োজনে বাংলাদেশ আ’লীগের সম্মতিক্রমে আহবায়ক কমিটি গঠন ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরিত ১লা মার্চ ২০১৭ সালের ১টি পত্রের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এসব বৈধ কমিটি নিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। যা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মত অপরাধ।