Main Menu

সরাইলে দুই ইউনিয়ন পুরুষ শুন্য:পুলিশের মামলা- আসামী ২ শতাধিক

+100%-

সরাইল প্রতিনিধিঃব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নোয়াগাঁও ও কালিকচ্ছ ইউনিয়ন এখন হয়ে পড়েছে পুরুষ শুন্য। কালিকচ্ছ বাজারের অধিকাংশ মার্কেট বন্ধ রয়েছে। গ্রামে পাড়ায় মহল্লায় চলছে পুলিশি টহল। পুলিশ বাদী হয়ে দুই শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গত সোমবারের সংঘর্ষের পর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২২ দাঙ্গাবাজকে গ্রেপ্তার করে। রাত ১০ টায় ওই দাঙ্গাবাজদের ভ্রাম্যমান আদালতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ এমরান হোসেন বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে দুই ইউনিয়নের সবকটি গ্রামের পুরুষরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। মহিলারা চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠায় সময় পার করছেন। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গত রোববার সাত ঘন্টার সংঘর্ষে সরাইল থানার ওসি মোঃ আলী আরশাদ সহ আট পুলিশ সদস্য আহত হয়। ওইদিন বিকাল থেকেই দাঙ্গাবাজদের গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামে পুলিশ। তারা দফায় দফায় বাড়িঘর ও হাট বাজারে অভিযান চালায়। রাত ৮টা পর্যন্ত পুলিশ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে রাত ১০টায় তাদেরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ এমরান হোসেনের দফতরে হাজির করা হয়। ভ্রাম্যমান আদালতে ওই ২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ তিন মাস ও সর্বনিম্ন ১৫ দিনের সাজা প্রাপ্তরা হলো- কালিকচ্ছ ইউনিয়নের সূর্যকান্দি গ্রামের মোঃ তকদির খার ছেলে মোঃ আমীর খান (১৮), মোঃ শহীদ উল্লাহর ছেলে মোঃ জামাল মিয়া (২৫), হান্নান মিয়ার ছেলে মোঃ আলম মিয়া (১৭), মৃত আবদুল হামিদের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর মিয়া (২৭), মৃত আবদুল জাহেরের ছেলে মোঃ সুজন মিয়া (২০), মৃত খোরশেদ মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান (৫০), মোতালিব মিয়ার ছেলে আবু তালেব (৩৫), তাহের মিয়ার ছেলে এমদাদুল হক (২২), একই ইউনিয়নের মনিরবাগ এলাকার শহীদ মিয়ার ছেলে খোরশেদ (৩৫), সোনা মিয়ার ছেলে কালু মিয়া (৫৫), নজরুল ইসলামের ছেলে ফজর আলী (২৮), মৃত আবদুল খালেকের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০), লস্কর পাড়ার মোঃ শহীদ লস্করের ছেলে মোঃ ওয়াদুদ লস্কর (৬০), নন্দিপাড়ার সিরাজ মিয়ার ছেলে মোঃ ফরিদ মিয়া (৩০)। নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে মোঃ ইকবাল হোসেন (২৮), মৃত আবদুল মুহিতের ছেলে গাফফার (২০), নাঈম (২০), দেলু মিয়ার ছেলে আল-আমীন (২০), আবু তাহেরের ছেলে মোঃ আবু তাজ (২৮), তরমুজ খার ছেলে লোকমান খা (১৭), আইরল গ্রামের রবিউল হকের ছেলে আবদুল হাশিম (৪৫), কাজিউড়া গ্রামের মোঃ গোলাম নবী খন্দকারের ছেলে মোঃ আসলাম খন্দকার (১৬)। গত রোববার গভীর রাতে সরাইল থানার আহত এস আই আবদুল আলীম বাদী হয়ে নোয়াগাঁও ও কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো দেড় শতাধিক লোককে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ফের সংঘর্ষ বাঁধানোর জন্য উভয় ইউনিয়নের বেশ কিছু লোক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওদিকে বর্তমানে যে কোন দাঙ্গা হাঙ্গামা রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরাইল থানা ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ। ওই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার। প্রত্যকটি গ্রামেই চলছে সুনসান নিরবতা। গ্রামের রাস্তা গুলো এখন একদম ফাঁকা। সন্ধ্যাার পর সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল বেলা ২টায় নোয়াগাঁও গ্রামের মোঃ মোখলেছ মিয়ার ছেলে ছাদেক মিয়াকে (৩২) আটক করে পুলিশ। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী জনপ্রনিধির তদবিরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলী আরশাদ বলেন, বর্তমানে ওই দুই ইউনিয়নের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য পুলিশি টহল অব্যাহত আছে। প্রসঙ্গতঃ গত শনিবার সন্ধ্যায় নোয়াগাঁও মোতাঈদ বাড়ির ওয়ালি মোতাঈদের ছেলে পারভেজ (২৫) মোটর সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার সামনে ছিল একটি পিকআপ ভ্যান। সাইট দেওয়াকে কেন্দ্র করে পিকআপ ভ্যান চালক সূর্যকান্দি গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে বাবুর (৩০) সাথে পারভেজের বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় গ্রামের লোকজন কালিকচ্ছ বাজারে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ। এর জের ধরে গত রোববার সকাল ৭টা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত দুই ইউনিয়নের ৭-৮ সহস্রাধিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সাত ঘন্টার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আট পুলিশ সহ দুই শতাধিক লোক আহত হয়। এ ঘটনায় গোটা বাজারের ব্যবসায়িদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মূহুর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় সকল দোকানপাট। সরাইল-নাসিরনগর সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এক পর্যায়ে দাঙ্গাবাজরা বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলী আরশাদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। ওসি আলী আরশাদ বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান পুলিশ মোতায়েন আছে।






Shares