সরাইলে ডাকাতের হামলায় কলেজ ছাত্রী নিহত; গুরুতর আহত-২, আটক-৪
মোহাম্মদ মাসুদ , সরাইল থেকে:: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ডাকাতের হামলায় এক কলেজ ছাত্রী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ওই ছাত্রীর পিতা ও চাচাত ভাই। গত শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টায় উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের উসমান আলী ও জসিম মিয়ার বাড়িতে ডাকাতিকালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে।
ডাকাতের কবলে পড়া পরিবারের সদস্যরা জানায়, গভীর রাতে সংঘবদ্ধ সশস্ত্র অবস্থায় একদল ডাকাত বাড়িতে প্রবেশ করে। ১৫-১৬ জন ডাকাতের মধ্যে ৫-৬ জন ছিল মূখোশধারী। তাদের হাতে ছিল রামদা চাপতি ছুঁড়া ও রড। গ্রীলের তৈরী ক্লাক্সিবল গেইটের তালা ভেঙ্গে তাদের পাকা ভবনে প্রবেশ করে। অস্ত্রের মুখে জসিমের বৃদ্ধা মা সহ পরিবারের সকলকে জিম্মি করে ফেলে। তাদের আর্তচিৎকারে পাশের ঘর থেকে জসিমের সহোদর বড় ভাই উসমান আলী (৪৫) তার কলেজ পড়–য়া কন্যা রত্না বেগম ও আরেক চাচাত ভাই ইয়াছিন মিয়া (১৮) দৌঁড়ে আসে। ঘটনাস্থলে আসা মাত্র ডাকাতরা তাদেরকে কূপিয়ে গুরুতর আহত করে। এক সময় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তারা তিনজন। পরে ডাকাতদল লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটে নিয়ে বীরদর্পে পালিয়ে যায়। মুখোশহীন ৫-৬ জন ডাকাতকে চিনে ফেলেছিল উসমান ও রত্না। প্রতিবেশীরা রাতেই আহতদের সরাইল হাসপাতালে নিয়ে যান। ইয়াছিনকে সেখানে ভর্তি করা হলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় উসমান ও তার মেয়েকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকরা ঢাকায় প্রেরন করেন।
শনিবার সকালে ঢাকায় যাওয়ার পথে সরাইলের বিশ্বরোড মোড় আসার পরই রত্না মারা যায়। মেধাবী ছাত্রী রত্না ইসলামপুর কাজী শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ঘটনার খবর শুনে দ্রুত রত্নাদের গ্রামের বাড়ি ইসলামাবাদ ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম। পরে তিনি রত্নার লাশের খুঁজ খবর নিতে সরাইল হাসপাতালে যান। এস আই আবদুল আলীমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ধনা মিয়ার ছেলে বাবলু (২০), আরজু মিয়ার ছেলে তারেক (২০), জিন্নত আলীর ছেলে হেবজু মিয়া (৪৫) ও মৃত আল আমীনের ছেলে সাইদু মিয়া (৪৮)কে আটক করেছে। ওদিকে রত্নার অনাকাঙ্খিত মর্মান্তিক এ অকাল মৃত্যুর সংবাদে সমগ্র ইসলামাবাদ গ্রামের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। হাজার হাজার নারী পুরুষ ভীড় করছে তাদের বাড়িতে।
কলেজের সহপাঠিরা হয়ে পড়েছে স্থম্ভিত ও হতবাক। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শফিকুল ইসলাম,অধ্যক্ষ হাফেজ শফিকুল ইসলাম প্রভাষকবৃন্দ ব্যবস্থাপনা পরিষদ কর্মকর্তা কর্মচারী মেধাবী ওই ছাত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির করা হউক।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার শিকার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত চারজনকে আটক করেছি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সকল আলামত দেখেছি। বাকিদের গ্রেপ্তার ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও লুটে নেওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।