সরাইল-নাসিরনগর সড়কে সন্ধ্যারাতেই ডাকাতি! আইনশৃঙ্খলা সভায় উদ্ধেগ
মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ সরাইলে সন্ধ্যারাতেই যাত্রীবেশে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালককে পিটিয়ে ডাকাতি করেছে সংঘবদ্ধ একদল ডাকাত। আহত চালম বেনু চন্দ্র দেব (৪০) কে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।গত রোববার সন্ধ্যা ৮টার দিকে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের সরাইল খাদ্যগুদামের নিকটে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সোমবার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় ডাকাতির ঘটনায় উদ্ধেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। ডাকাতের কবলে পড়া অটোরিকশা চালক ও স্থানীয় লোকজন জানায়, রোববার সন্ধ্যায় কালিকচ্ছ গ্রামের অটোরিকশা চালক বেনু চন্দ্র দেব চুনের বস্তা নিয়ে বিশ্বরোড মোড় থেকে কালিকচ্ছ বাজারে যাওয়ার উদ্যেশ্যে রওনা দেয়। রাত ৮টার দিকে সরাইল গরুর বাজারের নিকটে আসলে ২জন লোক অটোরিকশাটি থামানোর ইশারা দেয়। যাত্রী ভেবে চালক তাদেরকে ওঠায়। কাল বোরহা পরিহিত একজন মহিলা পেছনে বসে। আর দুই যুবক সামনে সীটে চালকের ডানে ও বামে বসে। অটোরিকশাটি খাদ্যগুদামের বরাবর আসামাত্র সামনের একযাত্রী চালকের গলা চেপে ধরে প্রথমে চাবিটি ছিনিয়ে নিয়ে ঢিল মেরে ফেলে দেয়। অপর জন অটোরিকশার ষ্টার্ট বন্ধ করে দেয়। পরে টেনে খিঁচড়ে চালককে পাশের নির্জন অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যায়। মহিলাটি পেছনের দিক থেকে চেপে ধরে পকেট থেকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় চালক ও ডাকাতদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ডাকাতরা কিল ঘুষির পাশাপাশি একটি কাঠের লাঠি দিয়ে চালককে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চালক। তখন তার পকেট থেকে ১৮’শ ৪০ টাকা নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে ডাকাতরা। একই সময়ে আরো দুটি অটোরিকশাকে আটকের পর লোকজন চলে আসায় পালিয়ে যায় ডাকাতরা। অন্য গাড়ির যাত্রীরা চালক বেনু চন্দ্র দেবকে সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করে সরাইল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মিনিট দশেক পর ঘটনাস্থলে হাজির হন সরাইল থানা পুলিশ। চালক বেনু বলেন, আমাকে যখন ডাকাতরা টাকার জন্য মারধর করে তখন আনুমানিক দেড়/২ শতাধিক গজ দূরেই ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনের ব্রীজে অবস্থান করছিল সরাইল থানার টহল পুলিশের একটি দল। কেউ এগিয়ে আসেনি। সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, যাত্রীবেশে একজন অটোরিকশা চালককে চড় থাপ্পর দিয়ে অল্প কিছু টাকা নিয়ে গেছে।
প্রসঙ্গতঃ সম্প্রতি এ সড়কে ডাকাতির ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। একই জায়গায় গত শনিবার বিকাল ৩টার দিকে বিশ্বরোড থেকে নাসিরনগরগামী অটোরিকশায় যাত্রীবেশে কয়েকজন ডাকাত একই গাড়ির যাত্রী কুন্ডা গ্রামের কুলসুম বেগম (৫৫) কে চেপে ধরে। তারা ওই মহিলার গলার স্বর্ণের চেইন, নাকফুল ও কানের দোল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
পরের দিন গভীর রাতে কালিকচ্ছ থেকে ভৈরবগামী মাছ বোঝাই একটি পিক-আপ ভ্যানকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মাছ লুটে নেয় মুখোষধারী ডাকাত দল। গত ১০-১২ দিন আগে রাত ২টার দিকে এ সড়কের বড্ডাপাড়া ব্রীজের অদূরে গাছের গোল ফেলে লাখাইগামী একটি যাত্রীবাহী বাস আটকে দেয় একদল ডাকাত। তারা দেশিয়ে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে ডাকাতি শুরু করে। দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয় এস আই ইসমাইলের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। এ সময় এস আই ঈসমাইল ডাকাতদের লক্ষ করে ২ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েন। কিন্তু কোন ডাকাত আটক করা সম্ভব হয়নি। সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ ঈসমাইল মিয়া মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই রাতে যাদের দেখেছি তাদের বয়স সর্বোচ্চ ১৮-২০ বা ২২ বছর হবে। ধারনা করা হচ্ছে ২ জন আহত হয়ে গোপনে কোথাও চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
হঠাৎ করে সড়কে ডাকাতি বৃদ্ধি ও জুয়ারীদের খোশ মেজাজে জুয়ার মহোৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার বিষয়ে গতকালের আইনশৃঙ্খলা সভায় উদ্ধেগ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বক্তারা। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া সভায় গত রোববার রাতে সড়কে ডাকাতির কথা স্বীকার করে বলেন, হঠাৎ করে ডাকাতি জুয়াসহ অনেক কিছু বেড়ে গেল। আমি তো এ গুলো সাথে করে নিয়ে আসিনি। আপনারা সকলে সহযোগীতা করলে আমি এ গুলো দ্রুত নির্মূল করতে পারব।